Image description
 

ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরু হত্যার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বিচারের মুখ দেখেনি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তবে এই মামলায় নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের একটি ফেসবুক পোস্ট। এতে হত্যার পেছনের পরিকল্পনা, পেশাদার কায়দায় অপহরণ, এবং নির্মম হত্যার বিবরণ উঠে এসেছে, যা জনমনে নতুন করে ক্ষোভ আর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

 

২০১৭ সালের ২৯ মার্চ, রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের চকবাজার থানাধীন চন্দনপুরা এলাকায় নিজ বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম নুরু। সাংবাদিক সায়েরের তথ্যমতে, রাউজান থানার এসআই জাবেদ হঠাৎ এসে বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যান। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সরাসরি নির্দেশে রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ এই অপারেশনে নেতৃত্ব দেন।

সায়ের তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, নুরুর ভাগ্নে রাশেদুল ইসলাম বাসার দরজা খোলার পর, ঘুমন্ত অবস্থায় নুরুকে বিছানা থেকে টেনে তুলে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান এসআই জাবেদ। পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু নুরুর পরিবারের লোকজন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখতে চাইলে দেখাতে পারেননি তিনি।

 

এই সাংবাদিকের দেওয়া তথ্যমতে, সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে প্রথমে নুরুকে নেওয়া হয় রাউজানের নোয়াপাড়া কলেজ ক্যাম্পাসে, যেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। সেখান থেকে তাকে আরেকটি গাড়িতে তুলে নেওয়া হয় নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পে।

 

সেখানেই কাপড় দিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে, রশি দিয়ে হাত বেঁধে শুরু হয় ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতন। দীর্ঘ নির্যাতনের একপর্যায়ে, নুরুর মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ ফেলে যাওয়া হয় রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের খেলারঘাট এলাকায়, কর্ণফুলী নদীর তীরে। পরদিন ৩০ মার্চ সকালে পুলিশ সেখান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

আন্তার্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এই সাংবাদিক তার পোস্টে আরও জানান, নুরুর স্ত্রী সুমি আক্তার দীর্ঘদিনের চেষ্টা ও সংগ্রামের পর, ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন সংসদ সদস্য ফজলে করিম, রাউজান থানার সাবেক ওসি কেফায়েত উল্লাহ, এসআই জাবেদ, নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জসহ মোট ১৭ জন।

তবে মামলা দায়েরের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত মামলার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। উল্টো নুরু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা অভিযুক্তদের কয়েকজনকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে, যা ন্যায়বিচারপ্রত্যাশী পরিবারটির জন্য আরও বেদনাদায়ক বলে জানিয়েছেন সুমি আক্তার।

সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তাঁর ফেসবুক পোস্টে সরাসরি অভিযোগ করেছেন, “এই হত্যাকাণ্ড ছিল একটি পরিকল্পিত ও পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সহিংসতা।” তিনি আরও লেখেন, “এই নির্মম হত্যার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও, কোনো বিচার না হওয়া প্রমাণ করে বিচারব্যবস্থা কতটা পক্ষপাতদুষ্ট বা চাপের মধ্যে কাজ করছে।”

এই সাংবাদিকের ফেসবুক পোস্টটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছে একজন রাজনৈতিক নেতার হত্যার বিচার যদি এত দিনেও না হয়, তার হত্যাকারী ফ্যাসিস্ট ফজলে করিম চৌধুরীর লোকেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় তবে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার কোথায়?