Image description

দেশের বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির বয়সসীমা বাড়ানো হতে পারে। বর্তমানে মাধ্যমিকের পরীক্ষা উত্তীর্ণের ৫ বছরের মধ্যে আবেদন করার সুযোগ থাকলেও সেটি বাড়িয়ে ১০ বছর করার একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় বর্তমানে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

জানা যায়, বর্তমানে দেশের সরকারি পলিটেকনিকে এসএসসি পাসের ৩ বছরের মধ্যে ভর্তি আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই সময়সীমা ৫ বছর। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ সময়সীমা অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। অনেক শিক্ষার্থী যারা এসএসসি পাসের পর কিছু সময় চাকরি বা অন্য কাজ করেছেন, তারা বয়সসীমার কারণে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। এ কারণে এই সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হচ্ছে।

বেসরকারি পলিটেকনিক পরিচালনাকারী অনেকের অভিযোগ, বয়সসীমা কম থাকায় ভর্তির সময় পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে অনেক আসন ফাঁকা থাকছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি দক্ষ কারিগরি জনশক্তি তৈরি ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য তারা বয়সসীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করার অনুরোধ করে কারিগরি বোর্ড কর্তৃপক্ষকে। বোর্ড পরে এটি মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব জমা দেয়। এতে করে এসএসসি পাসের ১০ বছরের মধ্যেও যে কেউ চাইলে বেসরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি হতে পারবে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বয়স বাড়ানোর জন্য একটি প্রস্তাব বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং এটি এখন অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন নিয়ম কার্যকর হতে পারে।

তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বয়সসীমা বাড়ানো হলে যারা বিভিন্ন কারণে আগে ভর্তি হতে পারেনি, তাদের জন্য এটি ইতিবাচক সুযোগ হবে। আবার অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এতে করে বড় বয়সী শিক্ষার্থীদের আগমন বাড়লে শ্রেণিকক্ষে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং শিক্ষার পরিবেশ প্রভাবিত হতে পারে।

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষায় বয়সসীমা ১০ বছর করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নই। ১৭ বছরের একজন কিশোর ও ২৭ বছরের একজন প্রাপ্তবয়স্ক যদি একই শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষা গ্রহণ করে, তাহলে তা শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, শেখার গতি ও পারস্পরিক ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে করে তরুণ শিক্ষার্থীরা হয়তো নিজেকে চাপের মুখে অনুভব করতে পারে বা তাদের শেখার আগ্রহে ভাটা পড়তে পারে-ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম, সাবেক কারিগরি সচিব

 

ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘এমন আবেদন আমরা নেতিবাচক হিসেবে দেখছি। কোয়ান্টিটিতে নয়, আমরা চাই কোয়ালিটি। যদি এমনটা হয়, তাহলে আমরা এটি নিয়ে প্রতিবাদ করব। কোনভাবেই আমরা বয়স বাড়ানোর পক্ষে নই।’

দিনাজপুর পলিটেকনিকের রাসেল ইসলাম নামের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেক ছেলে-মেয়ে বিভিন্ন কারণে সময়মতো ভর্তি হতে পারে না। ১০ বছর সময় দিলে তারা সুযোগ পাবে। এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। দেশের কারিগরি ব্যবস্থায় কোন বয়স আসলে রাখা ঠিক না।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারিগরি শিক্ষার প্রসারে আরও উদার নীতিমালা প্রয়োজন। বয়স কোনো বাধা হওয়া উচিত নয়, যদি শিক্ষার্থী প্রকৃতভাবে আগ্রহী থাকে। তবে এর সঙ্গে মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন দুটি নীতিমালা করা যেতে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সদ্য সাবেক সিনিয়র সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষায় বয়সসীমা ১০ বছর করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নই। ১৭ বছরের একজন কিশোর ও ২৭ বছরের একজন প্রাপ্তবয়স্ক যদি একই শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষা গ্রহণ করে, তাহলে তা শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, শেখার গতি ও পারস্পরিক ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে করে তরুণ শিক্ষার্থীরা হয়তো নিজেকে চাপের মুখে অনুভব করতে পারে বা তাদের শেখার আগ্রহে ভাটা পড়তে পারে।”

তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি, অনেক কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশানুরূপ নয়, এমনকি অনেক আসন খালি পড়ে থাকে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, বয়সের শর্ত শিথিল করে সকলকে একই শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে সমাধান খোঁজা উচিত। বরং দেরিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প পথ চালুর চিন্তা করা যেতে পারে। এতে করে মূল ধারার শিক্ষার কাঠামো অক্ষুণ্ন থাকবে এবং আগ্রহী বড় বয়সীদের জন্যও বাস্তবসম্মত সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল কবীর জানান, বেসরকারি পলিটেকনিক পরিচালনা যারা করেন, তারা বোর্ডে এসেছিলেন। তারা বয়স বাড়ানোর ব্যাপারে বলেন, তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।