Image description

সুশৃঙ্খলভাবে যান চলাচল ও পথচারী পারাপারে গত এপ্রিলে ঘটা করে রাজধানীর কয়েক জায়গায় চালু করা হয় ম্যানুয়াল পদ্ধতির সিগন্যাল বাতি। তবে দুই মাস যেতে না যেতেই সে প্রক্রিয়া কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। পথচারীরা তেমন একটা ব্যবহার করছেন না এ পদ্ধতি। কয়েকটি পয়েন্টে যান্ত্রিক ব্যবস্থাটি নিষ্ক্রিয়ও দেখা গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে আসছে অতি সেকেলে হাতের ইশারা পদ্ধতিতে। এমন প্রেক্ষাপটে মিরপুরের হার্ট ফাউন্ডেশন, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও শেরাটন ক্রসিংয়ে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের (ডিআরএসপি) অর্থায়নে বুয়েট দেশীয় প্রযুক্তিতে এসব বাতি প্রস্তুত করেছে।

চালু হওয়ার দুই মাস পর সিগন্যাল বাতির মোড়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোনোটিই পথচারীরা ব্যবহার করছে না। কোনো কোনোটি পাওয়া যায় অচল।

দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা সিগন্যাল ব্যবস্থাটি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। সিগন্যাল বাতির উভয় পাশে রাস্তার কিনারে খুঁটির গায়ে রয়েছে পুশ বাটন ও নির্দেশিকা। রাস্তা পার হতে চাইলে পথচারীরা এই বাটনে চাপ দেবেন। ৯০ সেকেন্ড অপেক্ষার পর খুঁটিতে সবুজ বাতি জ্বললে তাঁরা সড়ক পার হবেন। তখন যানবাহনের জন্য লালবাতি জ্বলা থাকবে।

৫ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর হার্ট ফাউন্ডেশনের সামনে গিয়ে দেখা যায় পথচারী পারাপার বন্ধে লালবাতি জ্বলা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। কেউ পুশ বাটন চাপ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন না। দৃশ্যত তা অনেকের চোখেই পড়েনি। প্রায় ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে একজনকেও বাটন চাপতে দেখা যায়নি।

কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, এই সিগন্যাল বাতি সম্পর্কে তাঁদের ধারণা নেই। রাসেল নামের মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনুষ্ঠান করে উদ্বোধন করা হলেও কেউ এটি মানছে না। প্রথম কয়েকদিন দুয়েকজন তরুণকে পথচারীদের সহায়তায় থাকলেও পরে তাঁদের দেখা যায়নি।

হার্ট ফাউন্ডেশনের জেব্রাক্রসিংয়ের এক পাশের পুশ বাটন থাকা খুঁটির গোড়ায় বসে ছিল আখের রস বিক্রির গাড়ি। এর জন্য পুশ বাটনটিও ঠিকমতো পথচারীরা দেখতে পাচ্ছিলেন না। জেব্রা ক্রসিংয়ের দুই পাশেই ব্যাটারিচালিত রিকশা পার্ক করে রাখতে দেখা যায়।

ব্যস্ত ফার্মগেট এলাকার জেব্রা ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার সিগন্যাল বাতি জ্বলছে না। রাস্তা পারাপারের জন্য দুটি পদচারী-সেতু থাকার পরও সেখানে জেব্রা ক্রসিং করা হয়েছে। এতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও জাহাঙ্গীর গেটের দিক থেকে আসা যানবাহনের গতি কমে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যস্ত সড়কটিতে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা। এখানে আগে প্রায় সবাই পদচারী-সেতু ব্যবহার করতেন। কোনো কোনো ট্রাফিক পুলিশ মন্তব্য করেছেন, ফার্মগেটে এ বাতি বসানো হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সার্জেন্ট বলেন, গাড়ি ছাড়ার পরই পথচারীরা সড়কে নেমে যাওয়ায় গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। সিগন্যালটি এখন ব্যবহার হচ্ছে না।

একই দিন কারওয়ান বাজার সিগন্যালে গিয়ে জেব্রা ক্রসিং ও সিগন্যাল বাতির কার্যকারিতা দেখা যায়নি। কোনো বাতির সংকেত জ্বলতে দেখা যায়নি। পথচারীরা যে যার সুবিধামতো সড়ক পার হচ্ছিলেন। কেউ জেব্রা ক্রসিং দিয়ে, আবার কেউ গোলচক্কর দিয়ে। একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে, শেরাটনের জেব্রা ক্রসিংয়েও।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, নগরে যতগুলো জেব্রাক্রসিং রয়েছে, পর্যায়ক্রমে সবখানে সিগন্যালভিত্তিক লাইট সিস্টেম চালু করা হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এ পরীক্ষামূলক প্রকল্প আগামীতে স্থায়ী করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. সরওয়ার বলেন, শহরের ২২টি সিগন্যালে দুই সিটি করপোরেশন বুয়েটের সহায়তায় সিগন্যাল লাইট বসাচ্ছে। সেগুলোতেও গাড়ি চলাচলের সিগন্যাল লাইটের পাশাপাশি পথচারীদের জন্যও সিগন্যাল থাকবে। প্রতিটিতে সাড়ে ১০ লাখ টাকা করে খরচ হয়েছে।

নগরবিদদের কেউ কেউ এ পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। নগর পরিকল্পনাবিদ ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান প্রশ্ন তুলে বলেন, যেখানে গাড়ির জন্যই সিগন্যাল কাজ করছে না, সেখানে পথচারীদের জন্য তা কী কাজে আসবে? তিনি বলেন, ‘কোনো গবেষণা নেই। এখানে পুশ বাটন ব্যবস্থা কাজ করবে না। বিনিয়োগের অর্থ সব মাটি হবে। এই শহরের মানুষ ডিভাইডার, তারকাঁটা ডিঙিয়ে সড়ক পার হন, কেউ পুশ বাটন ব্যবহার করবেন না।’