Image description
মার্কিন পাল্টা শুল্ক

বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য নতুন পারস্পরিক শুল্কনীতি (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) কার্যকরের প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রাম্প সরকার। এর আওতায় বাংলাদেশসহ তালিকাভুক্ত দেশগুলো আগের জিএসপি সুবিধার আদলে বাড়তি ছাড় পেতে পারে। এদিকে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সূত্র এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে মার্কিন শুল্ক কার্যকরের ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ আরও তিন সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

সম্ভাব্য নতুন পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর (ইউএসটিআর) এলডিসি দেশগুলোর জন্য আলাদা ট্যারিফ রেট নির্ধারণের দিকে এগোচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন বাজারে কার্যকর হতে যাওয়া শুল্কহার প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের তুলনায় কম হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছানোর নির্ধারিত সময়সীমা ৯ জুলাই ঘনিয়ে এলেও বেশির ভাগ দেশ এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়ে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে চুক্তি বাস্তবায়নে প্রস্তুত দেশগুলোর জন্য পারস্পরিক শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা তিন সপ্তাহ পিছিয়ে যেতে পারে—এমন আলোচনা ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরেই চলছে।

আগ্রহপত্র না পাওয়ায় থেমে আছে ঢাকা

এলডিসিগুলোর জন্য কার্যকর শুল্কহার ঠিক কত হবে, এখনো তা চূড়ান্ত করেনি মার্কিন প্রশাসন। গতকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে কোনো আগ্রহপত্র বা প্রস্তাবিত পণ্যের তালিকা পাঠায়নি। ফলে এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানতে পারেনি ঢাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, এলডিসিগুলোর জন্য আলাদা স্কিম ও ট্যারিফ রেট নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আগ্রহপত্র পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। তবে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে এবং তালিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় যেতে পারবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আপত্তির বৃত্তে আটকে বহু দেশ

এলডিসি তালিকার বাইরে থাকা বিশ্বের অনেক দেশই গতকাল পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে নতুন শুল্ক চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি। ইউএসটিআরের সঙ্গে এসব দেশের বেশির ভাগ এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেসব দাবি তোলা হয়েছে, সেগুলোর নিয়েও রয়েছে অংশীদার দেশগুলোর প্রবল আপত্তি। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে হোয়াইট হাউস বৈশ্বিক বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর চাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাল বুধবার থেকে অন্তত ১৫টি দেশের কাছে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষর করার তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠানো হতে পারে।

শর্ত সাপেক্ষে শুল্ক ছাড়ের আশা

গত রোববার ট্রাম্প প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট ও অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো যারা চুক্তিতে আসেনি, তাদের উদ্দেশে ডজনখানেক চিঠি পাঠানো হবে। এতে বলা থাকবে, যদি তারা চুক্তিতে না আসে, তাহলে ১ আগস্ট থেকেই তাদের জন্য উচ্চ শুল্ক কার্যকর করা হবে।

দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্য থেকে তাই আভাস মিলছে, শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা ১ আগস্ট পর্যন্ত আরও তিন সপ্তাহ পিছিয়ে যাচ্ছে।

এই ঘোষণার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউ জার্সি থেকে হোয়াইট হাউসে ফেরার পথে সাংবাদিকদের বলেন, কিছু দেশ এরই মধ্যে চুক্তি করেছে। বাকি দেশগুলোর জন্য সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত চিঠি পাঠানো হবে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘সোমবার রাত ১২টা থেকে চিঠি এবং/অথবা চুক্তি পাঠানো শুরু হবে।’

বাংলাদেশের অপেক্ষা, শুল্ক কমার প্রত্যাশা

শুল্ক চুক্তির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোমবার পর্যন্ত ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কোনো আগ্রহ প্রস্তাব আসেনি। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কোন কোন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চায়, তা স্পষ্টভাবে ট্যারিফ শিডিউলে উল্লেখ থাকবে। সেই তালিকা হাতে পেলেই আমরা চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব।’

সচিব আরও বলেন, ‘ইউএসটিআর জানিয়েছে, তারা এলডিসিগুলোর জন্য আলাদা ট্যারিফ রেট তৈরি করছে। বাংলাদেশ এখনো এলডিসি থাকায় হয়তো আমাদের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তাব আসবে। এ জন্য কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে আশা করছি, বাংলাদেশের ওপর কার্যকর শুল্কহার ভিয়েতনামের চেয়ে কম হবে।’

‘তিন সপ্তাহ পিছিয়ে যাওয়া যৌক্তিক’

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে মার্কিন প্রশাসন কী করবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে শুনেছি, সময়সীমা তিন সপ্তাহ বাড়তে পারে। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত চুক্তি চাইলেও অধিকাংশ বাণিজ্য অংশীদার এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।’

র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এই বাস্তবতায় রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ কার্যকরের সময়সীমা কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া যৌক্তিক। তবে যতক্ষণ না আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসে, ততক্ষণ কিছুই নিশ্চিত করে বলা যায় না।’