
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যেসব সাংবাদিক ছাত্রদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছিলেন, তারা এখন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার রক্ষক সেজে দাঁড়ানোটি ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়। তিনি আরও বলেছেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছিলেন, তাদের থেকে দূরত্ব তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেছেন শফিকুল আলম। সেখানে তিনি আরও বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো।
“আমি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি সেই সব উদ্যোগকে, যেগুলো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখে এবং সাংবাদিকদের সহিংসতা, হুমকি ও ভয়ের পরিবেশ থেকে সুরক্ষা দেয়। তবে এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যখন কিছু সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম—যারা আগে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছিল, এখন নিজেদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার রক্ষাকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে, এক তরুণ রাজনৈতিক নেতার মন্তব্যের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, সেইসব সাংবাদিকদের কয়েকজনকে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। ওই সময় তাঁরা ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগের দাবি তোলেন। এমনকি, আন্দোলনের ঠিক আগে তাঁরা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ওই গণঅভ্যুত্থানের সময় পাঁচজন সাংবাদিক প্রাণ হারান। কিন্তু এত বড় ক্ষতির পরও প্রভাবশালী সাংবাদিক সংগঠনসমূহ—যেমন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস (BFUJ), ঢাকা ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস (DUJ) এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ–নিয়ন্ত্রিত জাতীয় প্রেসক্লাব—এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। উপরন্তু, তখনকার স্বৈরশাসক সরকার প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখলেও এই সংগঠনগুলো তা নিয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।
আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি, সরকারপন্থী কিছু সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের কাছে ‘অভিযোগ’ করেছিলেন—ব্ল্যাকআউট চলাকালে বিদেশি সাংবাদিকদের আমার ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করতে দেওয়ার কারণে। আরাফাত তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আন্দোলন দমন হলেই আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
সাংবাদিক সাঈদ খানকে সেই সময় গ্রেপ্তার করা হয় এবং হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হন। সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহু তরুণ সাংবাদিক আহত হন। অথচ সাংবাদিকদের এই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তখনো কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি।
আমরা এমন একটি সাংবাদিকতা চর্চার স্বপ্ন দেখি, যা ভয় বা পক্ষপাত থেকে মুক্ত। সাংবাদিক সংগঠনগুলোর উচিত শুধু সহকর্মীদের অধিকার রক্ষা করাই নয়, নিজেদের ভূমিকা নিয়েও আত্মসমালোচনায় যাওয়া। বিশেষ করে, জুলাইয়ের আন্দোলনে যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছিল, তাদের থেকে দূরত্ব তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।”