Image description

গত ২০ নভেম্বর মো. সাইদুর রহমান যখন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ পান তখন তাঁর চাকরির বয়স ছিল মাত্র ১ মাস ২২ দিন। এই সময়ে সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার অর্থ দাঁড়ায়- তিনি নিশ্চিতভাবেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন। অথচ তখন প্রশাসন বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া ছিল যে, প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অনেক হয়েছে, আর নয়। যাদের চাকরির বয়স অন্ততঃ ছয় মাস নেই তাদের কোনো মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হবে না। সরকারের একাধিক উপদেষ্টা তাদের নিজ মন্ত্রণালয়ে আগের আমলে বঞ্চিত, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের সচিব পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, মুখ্যসচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্নাসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একবাক্যে ওই উপদেষ্টাদের নিষেধ করে দিয়েছেন- প্রশাসনে আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে না মর্মে ইতিমধ্যেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপদেষ্টারা আলাদাভাবে এদের প্রত্যেকের কাছেই তদবির করেছিলেন। কিন্তু এদের প্রত্যেকেই একই জবাব দিয়েছেন তাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে, প্রশাসনের এমন কারো বিষয়ে সুপারিশ করা থেকে বিরত থাকেন উপদেষ্টারা। 
কিন্তু তারমধ্যেই হঠাৎ করে ঘটে সাইদুর রহমানের স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগের অস্বাভাবিক ঘটনাটি! তাঁকে এই নিয়োগের অর্থ দাঁড়ায়, ১ মাস ২২ দিন পরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন তিনি। অথচ মো. সাইদুর রহমান, যিনি বরাবর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ আমলে যথাসময়ে প্রত্যেকটি পদোন্নতি পেয়েছেন। একবারও বেগ পেতে হয়নি পদোন্নতিতে। পুরোটা সময়ই আকর্ষণীয় পদায়নসহ নানা রকমের সুযোগ-সুবিধা- পেয়ে এসেছেনও যদিও কখনো একজন ভালো বা দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন না, নিজ দপ্তরের কাজকর্মে মোটেই দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি। আওয়ামী সরকারের ডাকসাইটে আমলা হিসেবে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত প্রত্যেকটি পদোন্নতি যথাসময়েই পেয়েছেন। আওয়ামী আমলের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের পুরো পাঁচ বছর ছিলেন তাঁর ডানহাত হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। সেই সাইদুর রহমানকে অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছে এবং এরপরে একই পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গেছে এ সম্পর্কিত ভয়াবহ তথ্য। মো. সাইদুর রহমানের এই পদে নিয়োগের পেছনে পুরো ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এই ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন স্বাস্থ্য খাতের বহুল আলোচিত আওয়ামী মাফিয়া ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে স্বাস্থ্যের আওয়ামী মাফিয়া সর্দার মিঠু বিদেশে বসেই স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ম্যানেজের মাধ্যমে পুরো স্বাস্থ্যখাতকে নিজের কব্জায় নিয়েছেন, এ সম্পর্কে শীর্ষকাগজের একাধিক প্রতিবেদনে ইতিপূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে। সাইদুর রহমানের স্বাস্থ্যসচিব পদে নিয়োগও তারই অংশ। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেই সাইদুর রহমানকে এই পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন মিঠু।  
আওয়ামী আমলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একসঙ্গে ছিলেন তিন গুরুত্বপূর্ণ উইংয়ের নজিরবিহীন দায়িত্বে
আওয়ামী সরকারের ডাকসাইটে কর্মকর্তা হিসেবে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছর এক নাগাড়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পদায়নে থাকার সুযোগ পেয়েছেন মো. সাইদুর রহমান। সাধারণতঃ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে সরকারের স্পর্শকাতর বিভাগ হিসেবে ধরা হয়।  দলীয় আনুগত্য ছাড়া কাউকে এ বিভাগে পদায়ন করা হয় না। জাহিদ মালেক ২০১৯ সালে স্বাস্থ্যের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কিছুদিনের মাথায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে আসেন মো. সাইদুর রহমান। এবং ছিলেন ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ পর্যন্ত। অর্থাৎ শীর্ষ দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের পুরো আমলটাতে তিনি এ মন্ত্রণালয়ে কাটান। মো. সাইদুর রহমান চাকরিজীবনে তো নয়ই, এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও কাজকর্মে মোটেই দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারেননি। তারপরও তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইংয়ের দায়িত্বে একসঙ্গে রেখেছিলেন দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। শুধু একবার নয়, একাধিকবার তাকে এ রকমের অতিরিক্ত দায়িত্বে রাখা হয়েছিল- যদিও তিনি নিজ দায়িত্বটুকুও দক্ষতার সঙ্গে সঠিকভাবে পালনে সক্ষম ছিলেন না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একসঙ্গে এ ধরনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইংয়ের দায়িত্বপালনের ঘটনাকে নজিরবিহীন ঘটনা বলেই আখ্যায়িত করছেন। 
প্রশাসন, উন্নয়ন এবং হাসপাতাল- প্রধান এই তিনটি উইংয়ের দায়িত্বে ছিলেন মো. সাইদুর রহমান। এরপরে আবার বিশ্বস্বাস্থ্য উইংয়ের দায়িত্বেও কিছুদিন ছিলেন। এগুলো সবই হয়েছে স্বাস্থ্যখাতের বহুল আলোচিত মাফিয়া ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর ইচ্ছায়। সাইদুর রহমান স্বাস্থ্যখাতে মিঠুর অন্যতম এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন ওই সময়ে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিগত আওয়ামী লীগের ষোল বছরের পর পর তিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক, মোহাম্মদ নাসিম এবং জাহিদ মালেক- তিনজনই ছিলেন মিঠুর লুটপাটের অংশীদার। মাফিয়া ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু নিজের লুটপাটের সুবিধার জন্য মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন পর্যায়ে নিজের এজেন্ট নিয়োগ করে রাখতেন, যা এখনো অব্যাহত আছে। গত কয়েক বছর ধরে সাইদুর রহমান ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর এক নম্বর এজেন্ট। একই সঙ্গে জাহিদ মালেকেরও ডানহাত হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। মিঠুর ইচ্ছা এবং জাহিদ মালেকের সম্মতি বাস্তবায়ন করাই ছিল সাইদুর রহমানের মূল কাজ। মিঠু এবং জাহিদ মালেক যেহেতু ছিলেন অঘোষিত বিজনেস পার্টনার তাই উভয়ের অবৈধ ইচ্ছের সমন্বয় করতে সাইদুরের বেগ পেতে হতো না। সেই মিঠুই এ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমকে দিয়ে সাইদুর রহমানকে স্বাস্থ্য সচিব পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন। এই টাকার লেনদেন হয়েছে বিদেশেই। উল্লেখ্য, মিঠু বর্তমানে দুদকের খাতায় পলাতক। তিনি দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। বিদেশে বসেই দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ন্ত্রণ করছেন উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সুবাদে।
উল্লেখ্য, সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজে ইতিপূর্বে একাধিক প্রতিবেদনে উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং আওয়ামী মাফিয়া ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর মধ্যকার সিন্ডিকেটের তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। এ বিষয়ে শীর্ষ কাগজ প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ “স্বাস্থ্যখাতে আবার সেই পুরনো চিত্র! উপদেষ্টার দপ্তর ঘিরে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট!” শিরোনামে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের কোনো উপদেষ্টার দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে তখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ এটিই প্রথম। প্রতিবেদনটিতে উপদেষ্টা, উপদেষ্টার ছেলে, উপদেষ্টার পিও (ব্যক্তিগত কর্মকর্তা) তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে মাফিয়া ঠিকাদার মিঠুর দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলার কথা সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপকভাবে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। উপদেষ্টার দপ্তরের কর্মকর্তা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। তুহিন ফারাবী “দেখে নেবেন” বলে হুমকি-ধমকিও দেন শীর্ষ কাগজ কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তদন্ত এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে শীর্ষ কাগজে প্রকাশিত তথ্যই সত্য বলে প্রমাণিত হয়। যার ফলে পরবর্তীতে পিও তুহিন ফারাবী এবং মাহমুদুল হাসানকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হন উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। যদিও এই সিন্ডিকেট গড়ে তোলার জন্য উপদেষ্টাই মূলত দায়ী। উপদেষ্টা দুই পিও-কে বরখাস্ত করে নিজের পদ রক্ষা করেন কোনোরকমে। পিও তুহিন ফারাবী এবং মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে দুদক। তবে তুহিন ফারাবী বা মাহমুদুল হাসান না থাকলেও মিঠু ও উপদেষ্টার মধ্যকার সিন্ডিকেট কর্মকাণ্ডের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সচিব এবং উপদেষ্টার পিএস ওই কাজগুলো সুচারুভাবে চালাচ্ছেন, বলছে মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চাপ প্রয়োগ
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আওয়ামী কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমানকে যখন স্বাস্থ্য সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয় ওই সময় সরকারের প্রশাসন বিষয়ক নীতিনির্ধারকদের মধ্যেই এ নিয়োগ নিয়ে মতবিরোধ ছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সাইদুর রহমানকে স্বাস্থ্য সচিব পদে নিয়োগের সার-সংক্ষেপ তৈরি করতে চাচ্ছিলো না। উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম ঊর্ধ্বতন মহলে ব্যাপকভাবে চাপ সৃষ্টি করে এই নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। গত ১০ জানুয়ারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পর তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থাও করা হয় একইভাবে চাপ প্রয়োগ করে। অথচ এর আগ মুহূর্তে সরকারের একাধিক উপদেষ্টা নিজেদের পছন্দের, আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত, যোগ্য-দক্ষ কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সুপারিশ করেছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছেও সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, চাকরির বয়স যাদের অন্ততঃ ছয় মাস নেই এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে- এমন আর কাউকে সচিব করা হবে না। এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত।
সাইদুরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চাপা দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নজিরবিহীন লুকোচুরি!
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে সরকারের ওই নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা সম্ভব হয়নি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের প্রভাবের কারণে। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উপদেষ্টা পদে আসার কারণে নূর জাহান বেগমের প্রভাব অনেক বেশি। যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে না তাই এটিকে চাপা দেয়ার জন্য কয়েকটি নজিরবিহীন কূট-কৌশল অবলম্বন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 
এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সংক্রান্ত নথি চালাচালি এবং প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে। গত ১০ জানুয়ারি সাইদুর রহমানের চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পর কেউ বুঝে উঠতে পারছিলেন না, তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন নাকি নতুন কাউকে এই পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যদিও সাইদুর রহমান নিয়মিতই অফিস করছিলেন এবং সচিব হিসেবে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বস্তুত তলে তলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আদেশ জারি হয়েছিল যথাসময়েই এবং তা চেপে রাখা হয়েছিল। ওই প্রজ্ঞাপন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়নি, এমনকি সংবাদমাধ্যম বা অন্য কারো হাতে যাতে জিও’র কপি না যায় সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। 
শুধু তাই নয় অবাক করার মত ঘটনা হলো, আওয়ামী এই আমলার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে চাপা দিতে গিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আরো কিছু অপকর্মের আশ্রয় নিয়েছে, যার নজির অতীতে নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যে তালিকা রয়েছে তাতে সচিবদের তালিকায় সাইদুর রহমানের নাম নেই বর্তমানে, যদিও নিয়ম অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত অন্য সবারই নাম তালিকায় আছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কর্মকর্তাদের নাম এবং পদের পাশে ‘চুক্তিভিত্তিক’ কথাটি উল্লেখ রয়েছে তালিকায়। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব হিসেবে সাইদুর রহমানের নাম ওই তালিকায় ছিল। তবে তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পর সেই তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে, যদিও নিয়ম অনুযায়ী এটা হওয়ার কথা ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী তালিকায় নাম ও পদের পাশে শুধুমাত্র ‘চুক্তিভিত্তিক’ কথাটি যুক্ত হতো। কিন্তু তা না করে যাতে কেউ বুঝতে না পারেন সাইদুর রহমান চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সচিব পদে আছেন, এ কারণে নামটি তালিকা থেকেই কেটে দেয়া হয়। এ সম্পর্কিত আরো ভয়াবহ তথ্য হলো- সাইদুর রহমান এখন যে স্বাস্থ্য সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত আছেন সে কথা উল্লেখ নেই তাঁর পিডিএস (পার্সোনাল ডাটা সিট)-এ। যদিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত অন্য সবারই পার্সোনাল ডাটা সিটে চুক্তিভিত্তিতে কর্মরত থাকার তথ্য রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সাইদুর রহমানের পার্সনাল ডাটা সিটে শুধুমাত্র গত ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য আছে। এর পরের সময়ের তথ্য নেই মোটেই। পিডিএস’র শুরুতে নামের নিচে পদবী হিসেবে লেখা আছে “সচিব (পিআরএল ভোগরত) (পিআরএল আংশিক ভোগরত)”, যা একেবারেই অযৌক্তিক-অস্পষ্ট। নিয়ম অনুযায়ী, (পিআরএল ভোগরত) এবং (পিআরএল আংশিক ভোগরত) কথা দুটি এক সঙ্গে উল্লেখ থাকার কোনো সুযোগ নেই। উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের আবদার ও স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়েই এমন নজিরবিহীন অনিয়ম-অপকর্মগুলো করতে হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে। 
প্রসঙ্গত, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে পদায়ন-পদোন্নতিকে কেন্দ্র করে ঘুষ লেনদেনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজের ইতিপূর্বের একাধিক প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ডিসি নিয়োগে অনিয়ম ও ঘুষ কেলেঙ্কারির ‘ইতিহাস’ সৃষ্টি করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা। মূলতঃ সেই থেকে সচিবসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষের প্রচলন হয়েছে ব্যাপকহারে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদে মো. নিজাম উদ্দিনের নিয়োগের ‘ওপেন-সিক্রেট’ ঘুষ লেনদেনের অভিযোগটি ছিল আলোচিত। একটি মাফিয়া ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নিজাম উদ্দিনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এছাড়া নিজাম উদ্দিনের পকেট থেকেও আড়াই কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, একজন উপদেষ্টার পিতাকে ওই আড়াই কোটি টাকা দিতে হয়েছিল। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে নিজাম উদ্দিন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদ থেকে আউট হন। এরপরে ওই আড়াই কোটি টাকা আদায়ের জন্য তিনি চেষ্টা চালান, যদিও তা সম্ভব হয়নি। নিজাম উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে ১০০ কোটি টাকার তথ্যটি তিনি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি- কে দিয়েছে কে নিয়েছে।
শীর্ষনিউজ