Image description
 

হার্ট অ্যাটাক মানেই যেন হঠাৎ বুকে ব্যথা, অস্বাভাবিক ঘাম, দম বন্ধ হয়ে আসা কিংবা বুক ধড়ফড়। তবে যদি এর কিছুই না ঘটে? যদি কোনো সিগন্যাল না দিয়েই হৃদয় থেমে যায়? হৃদরোগ ও থোরাসিক সার্জন ড. শ্রীরাম নেনে সম্প্রতি ‘দ্য রণবীর শো’ পডকাস্টে এ নিয়ে শোনান এক ভয়াবহ বাস্তবতা। তিনি জানান, প্রতি পাঁচটি হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে একটি ঘটে কোনো রকম লক্ষণ ছাড়াই। আর এই নীরবতাই একে করে তোলে আরও বেশি বিপজ্জনক।

সাধারণত হার্ট অ্যাটাক নিয়ে আলোচনা মানেই চোখে পড়ার মতো উপসর্গ নিয়ে কথা বলা হয়। কিন্তু ড. নেনে সতর্ক করেছেন, এর বাইরেও ঘটে অনেক কিছু, যা শরীরের গভীরে নীরবে চলে, এবং সেটাই সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের সময় শরীরে ঠিক কী ঘটে?
ড. নেনের ব্যাখ্যায়, হার্ট অ্যাটাক তখনই ঘটে যখন হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী তিনটি প্রধান ধমনির একটিতে (বা বাম মেইন আর্টারিতে) হঠাৎ ব্লক তৈরি হয়। ফলে হৃদপিণ্ডের একটি নির্দিষ্ট অংশে রক্ত পৌঁছানো বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলেই ওই অংশটি দ্রুত মারা যেতে শুরু করে।

 

সাধারণত বুকের ব্যথা, হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া অস্বস্তি, ঘাম, দম বন্ধ হয়ে আসা এবং হৃৎস্পন্দনের ব্যতিক্রম এসব সংকেত হিসেবে দেখা যায়। এগুলো মূলত হৃদযন্ত্রের সংগ্রামের সংকেত। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই এমন হয় না।

 

ভয়ংকর সেই ২০ শতাংশ: উপসর্গহীন হার্ট অ্যাটাক
ড. নেনে জানান, ২০ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক কোনো লক্ষণ ছাড়াই ঘটে। চিকিৎসা পরিভাষায় এগুলোকে বলা হয় ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’। এখানে নেই কোনো তীব্র বুকে ব্যথা, নেই হাঁপিয়ে ওঠা, শুধু শরীরে একধরনের অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে, যা অনেকেই আমলে নেন না।

অনেক ক্ষেত্রেই এসব আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান, পড়ে যান বা অস্বাভাবিক এক ধরনের শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করেন। তখন হৃদপিণ্ড তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলে, রক্ত সঞ্চালন থেমে যায় এবং তাৎক্ষণিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘটতে পারে। এসব ঘটনা নাটকীয় না হলেও প্রাণঘাতী।

বুকের ব্যথাই সব নয়: যেসব অজানা উপসর্গে নজর দিন
ধারণা প্রচলিত, হার্ট অ্যাটাক মানেই ব্যথা। কিন্তু বাস্তবে তা সব সময় ঘটে না। ড. নেনের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন চারটি ব্যতিক্রমধর্মী উপসর্গ:

১. পিঠের ওপরের অংশ বা চোয়ালে হালকা অস্বস্তি
২. কারণ ছাড়াই হঠাৎ দুর্বলতা বা ক্লান্তি
৩. মাথা ঝিমঝিম করা বা হালকা বোধ হওয়া
৪. হঠাৎ করে এক ধরনের অজানা ভয় বা উৎকণ্ঠা

এই উপসর্গগুলো সহজেই ভুল বোঝা যায়। অনেকেই ভাবেন স্ট্রেস, ঘুমের ঘাটতি বা হজমের সমস্যা। কিন্তু বাস্তবে এগুলোই হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের একমাত্র সতর্কবার্তা।

কেন কেউ কেউ হার্ট অ্যাটাকে অজ্ঞান হয়ে যান?
এই বিষয়ে ড. নেনের ব্যাখ্যা, যখন হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেতের ছন্দ বিঘ্নিত হয় বা হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক গতিতে চলে, তখন রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয় না। এর ফলেই মস্তিষ্কে রক্ত না পৌঁছানোর কারণে অজ্ঞান হওয়া, পড়ে যাওয়া বা তাৎক্ষণিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘটে যেতে পারে। এই ঘটনা ঘটার আগে কোনো লক্ষণও নাও দেখা দিতে পারে।

বিপজ্জনক একটি ভুল ধারণা
একটি প্রচলিত ভুল হলো, হার্ট অ্যাটাক কেবল বয়স্ক বা অসুস্থ মানুষদের হয়। কিন্তু ড. নেনের মতে, এই ধারণা ভুল। তরুণ, সুস্থদেহী মানুষরাও এই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারেন। কারও জেনেটিক ঝুঁকি, অজানা ধমনি সমস্যা, কিংবা মানসিক চাপজনিত কারণে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন মানেই যে হৃদয় পুরোপুরি সুস্থ, তা কিন্তু নয়। তাই কেবল প্রচলিত উপসর্গের ওপর নির্ভর না করে, এই নিঃশব্দ লক্ষণগুলো বোঝা এবং গুরুত্ব দিয়ে দেখা এখন জরুরি।


হার্ট অ্যাটাক সব সময় চোখে পড়ে না। অনেক সময় শরীর এক ধরনের নিরব সতর্কতা দেয়, যা সহজেই ভুল বোঝা যায় বা উপেক্ষিত হয়। জীবন বাঁচাতে হলে এই নিঃশব্দ সংকেতগুলো চিনে নেওয়া, এবং শরীরের অদ্ভুত পরিবর্তনগুলো আমলে নেওয়া এখন সময়ের দাবি। সচেতন থাকুন, সাবধান থাকুন।