Image description
সাড়ে তিন হাজার শিক্ষকের বেসরকারি ৪৯৫ কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত

দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে ‘বঞ্চনা’র শিকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৪৯৫ বেসরকারি কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্সের (অনার্স-মাস্টার্স) সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষক। অতীতের কোনো সরকারই তাদের দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত করেনি। অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকার এসব শিক্ষকের এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ শীর্ষক পর্যালোচনাসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের সভাপতিত্বে সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের সহসভাপতি মো. জমির হোসেন বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে তারা কোনো বেতন-ভাতা ছাড়াই শিক্ষকতা করছেন। একই প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাশ কোর্সের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হলেও তারা থেকে গেছেন বঞ্চিত। তিনি বলেন,  মাত্র ১১১ কোটি টাকায় এই শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা সম্ভব। এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা মানবিক বিবেচনায় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এমপিওর জন্য ১১২ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে। অনুমোদন মিললেই কার্যক্রম শুরু হবে। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান, বিভিন্ন শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বঞ্চিত শিক্ষকেরা।

বিগত সময়ে দাবি আদায়ে রাজপথে বহু আন্দোলন করেছেন এমপিও-প্রত্যাশী এসব শিক্ষক। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি এবং ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাই’ শিরোনামে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের কর্মসূচিসহ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেন। তবে অর্থ বিভাগের সম্মতি না থাকায় সেই যাত্রায় ব্যর্থ হন তারা। শিক্ষকরা বলেন, বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচির পর বিগত আওয়ামী লীগের আমলে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ বিভাগের মতামত চায়। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে পদ না থাকায় এমপিওভুক্তির বিষয়টি নাকচ করে অর্থ বিভাগ। এরপর শিক্ষকরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দফায় দফায় আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের জানায়, অর্থ বিভাগ নাকচ করার কারণে তারা এমপিওভুক্ত করতে পারছে না। তবে অর্থ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করা হবে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৫ অক্টোবর বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে ফের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের ব্যানারে লাগাতার কর্মসূচির তৃতীয় দিন রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করতে থাকেন শিক্ষকরা। অবরোধ চলাকালে ১৭ অক্টোবর পুলিশের লাঠিপেটার কারণে তারা রাস্তা থেকে সরে যান। পরদিন বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি নেকবর হোসেন বলেন, ‘আর আন্দোলন নয়, আমরা অপেক্ষা করছি। শিক্ষকরা অপেক্ষা করছেন শিগিগরই যাতে এমপিওভুক্ত করা হয়। এতে শিক্ষকরা ৩২ বছরের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবেন।’ বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় রয়েছি, বৈষম্যবিরোধী সরকার নিশ্চয় আমাদের ৩২ বছরের বঞ্চনার অবসান ঘটাবে।’ গত ১৬ নভেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ বগুড়ায় শিক্ষকদের একটি অনুষ্ঠানে এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিজেই ডিল করছি। আশা করি, সরকার এমপিওভুক্তির বিষয়টি সুবিবেচনায় নেবে।’ তার বক্তব্যের প্রতি আস্থা রেখে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা অপেক্ষায় আছেন।