
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় শ্রমিক দল, যুবদল, কলেজ ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) সাতজনের নাম উল্লেখ করে এই মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাব্বত খান। এর আগে রোববার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে মামলার পর সোমবার রাতে ওই ভুক্তভোগী নারীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর স্বামী তজুমদ্দিন উপজেলার একটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে ঢাকায় থাকেন। তিনি দুই বিয়ে করেছেন।
ওই ব্যক্তির অভিযোগ, ১৪-১৫ দিন আগে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। পরে গত শনিবার দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে তার বাসায় ডেকে নেন। সেখানে রাতের বেলা উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন, যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন, তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. রাসেল আহমেদ ওরফে রাসেল রানাসহ পাঁচ-ছয়জনের একটি দল ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। তারা এসই মারধর করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সংসার করবেন না উল্লেখ করে তারা চার লাখ টাকা দিতে চাপ দেন। তবে তিনি এত টাকা দিতে পারবেন না জানালে আবার রড-হাতুড়ি দিয়ে রানের ওপর, হাতে-পিঠে মারতে থাকেন। তাকে অন্য একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করেন।
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, খবর পেয়ে রোববার সকালে তার প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে আসেন। প্রথম স্ত্রীকে দেখে আবারও রড-হাতুড়ি দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন। এ সময় প্রথম স্ত্রী হামলাকারীদের হাত-পা ধরে স্বামীকে ছেড়ে দিতে বলেন। একপর্যায়ে তারা চার লাখ টাকার বদলে এক লাখ টাকা দিতে বলেন। তখন প্রথম স্ত্রী তার শ্বশুরকে ফোন করে টাকার জন্য বলেন। টাকা আসছে শুনে-হামলাকারীরা প্রথম স্ত্রীকে ঘরে রেখে স্বামীকে দোকানে চা খাওয়ানোর কথা বলে বাইরে নিয়ে যান।
ওই নারী গণমাধ্যমকে বলেন, তার স্বামীকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পর সন্ত্রাসীরা ঘরের দরজা-জানালা আটকে তাকে ধর্ষণ করেন। তিনি চিৎকার করলে বাড়ির নারীরা দরজা-জানালা খুলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে রক্ষা করতে পারেননি।
ভুক্তভোগী দম্পতি বলেন, এরপর এ ঘটনা থানায় না জানাতে তাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন অভিযুক্তরা। পরে স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের ফেরেন তিনি। বাড়ি ফিরে স্ত্রী কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করে। এরপর ওই রাতেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহযোগিতায় তজুমদ্দিন থানায় যান তারা। পুলিশ তাদের থেকে ঘটনার কথা শুনে তদন্ত করে। বিকেলের দিকে মামলা নিয়ে রাতে তার স্ত্রীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তজুমদ্দিন উপজেলার ভুক্তভোগী নারীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। ওই নারীর চিকিৎসা চলছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধান আসামি উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। তাদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
তবে তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে তিনি একসময় থাকতেন, তিনি এখন সেখানে থাকেন না। সেখানে আরেক রাসেল আছে। কিন্তু তজুমদ্দিনে বিবদমান বিএনপির ষড়যন্ত্রে পড়ে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
মামলার আরেক আসামি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন বলেন, তিনি তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী। তাকেও ষড়যন্ত্রমূলক ফাঁসানো হচ্ছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহব্বত খান জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী ৭ জনের নাম উল্লেখ ও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা করেছেন। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।