Image description

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, “পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে দেশের আইনের শাসন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের দায়ের করা ৬০ লাখের বেশি গায়েবি ও মিথ্যা মামলা, সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষকে ক্রসফায়ার ও অন্তত ৭০০ জনকে গুম করার মধ্য দিয়ে সেই সময় জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়।”

সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ২ নম্বর বার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বিচার বিভাগের একটি অংশ সেই প্রচেষ্টাকে ইন্টেলেকচুয়াল করাপশনের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়। বিশেষ করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ছিলেন সেই প্রক্রিয়ার প্রধান কুশীলব। তাঁর রায়ের মাধ্যমে দিনের ভোট রাতে করার সংস্কৃতি শুরু হয়, যা গণতন্ত্রকে হত্যা করে।”

 

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “১৩তম সংশোধনীর রায়ের ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়, রাজপথে রক্ত ঝরে, শহীদ হন আমাদের প্রায় ৭০০ সহযোদ্ধা। গুম হন অনেকে, আর পুলিশের বাদী হয়ে করা মিথ্যা মামলায় ভুগতে হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে।”

 

তিনি দাবি করেন, “গত ১১ মাসে দেশে কোনো গুম হয়নি, পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলাও করেনি। এই পরিবর্তনই প্রমাণ করে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে আমরা অগ্রসর হয়েছি।”

জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই আন্দোলনে ২ হাজারের মতো মানুষ শহীদ হয়েছেন, ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পঙ্গু হয়েছেন। শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ মুগ্ধের মতো অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, যার ফরেনসিক প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।”

বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করবো এবং তা হবে স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায়। টেলিভিশনের মাধ্যমে সেই বিচার সম্প্রচার করা হবে, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্যও তা উন্মুক্ত থাকবে। কেউ যদি সেই বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট বকশী জুবায়ের আহমদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন:

* মৌলভীবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মো. খাদেম উল কায়েস

* সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী

* নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এনায়েত কবির সরকার

* জেলা পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন

* বার কাউন্সিলের সদস্য এডভোকেট এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন

* পিপি অ্যাডভোকেট ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী

* জিপি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ

এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ আইনজীবী শান্তি পদ ঘোষ, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার দাস, অ্যাডভোকেট নিয়ামুল হক, অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াহিদ প্রমুখ।