Image description
 

‘আমাদের সীমান্তবর্তী দেশ ভারত নানা ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশ যাতে বর্ডার এলাকায় পণ্য রপ্তানী বা আমদানী না করতে পারে সেজন্য বাঁধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ভারত এখন যা চায় তা পায় না। এজন্য বাংলাদেশের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা সৃষ্টি করছে। এই বাঁধা সৃষ্টি করার কারণ হল, ভারতকে এখন সব দিয়ে দেয়ার বন্ধু রাষ্ট্র নেই’। 

সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপি’র দ্বি বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কারও গোলাম নয়। ভারত চায় একটি দল সবসময় ক্ষমতায় থাকুক। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়, ভারতের গোলামী করতে নয়’। ‘আমরা ভারতকে বলব, আপনারা যদি সত্যিই বাংলাদেশের উপকার করতে চান, তাহলে একটি দলের পক্ষ না নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ান’।

 

আসাদুজ্জামান রিপন আরও বলেন, যারা সংখানুপাত নির্বাচনের কথা বলছেন আবার নারী আসনে সরাসরি ভোটের কথা বলছেন এদের মাথার ভিতরে আসলে কি আছে আল্লাহ জানেন আমি জানিনা। তারা নির্বাচন পরিস্থিতিকে বানচাল করার জন্য চেষ্টা করছেন। নির্বাচনকে পিছনে ফেলার চেষ্টা করছেন। অনেক রাজনৈতিক দলের ৩ শ’ আসনের মনোনয়ন দেয়ার মতো লোক নেই। ৩ শ’ আসনের মনোনয়ন দিলে অনেকের জামানত থাকবে না। এজন্য মনে করছেন যদি নির্বাচনকে বিলম্ব করা যায় তাহলে কিছু প্রার্থী পাওয়া যাবে এবং কিছু রাজনৈতিক দল হবে পরে তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করানো যাবে।

 

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি বিএনপি’র ঢাকা—বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে নগরকান্দায় রাতের ভোট আয়োজন করা হয়েছিল, খবর পেলাম টুঙ্গীপাড়াতেও নাকি নির্বাচনের আগের দিন ভোট কেটে নিয়ে গেছে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হতো তাহলে আপনাদের নেতা জিলানী জয়লাভ করতে পারতো। আওয়ামীলীগ নিজের লোকের কোন ভরসা রাখতে পারতো না, তাই রাতের ভোটের আয়োজন করতো।

তিনি বলেন, ‘দেশে এখনও প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরে আসেনি। উপদেষ্টাদের আত্মরক্ষার জন্য যদি অস্ত্র রাখতে হয় তাহলে আমাদের সাধারণ মানুষের কী হবে। সম্মেলনেও পুলিশী পাহারার প্রয়োজন পড়ে’। আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, আজকে টুঙ্গীপাড়া উপজেলায় এ সম্মেলনের মাধ্যমে যে নেতৃত্ব আসবে তা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’কে আরও শক্তিশালী করবে। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি বিএনপি’র

ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে টুঙ্গীপাড়ায় বিএনপি নতুন গতি পেয়েছে। আগামী দিনে টুঙ্গীপাড়াসহ সারা দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন আরও বেগবান হবে।

তিনি বলেন, এস এম জিলানী এবং আমি সবসময় আপনাদের সুখে—দুঃখে থাকবো। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ রাখবো, আমাদের প্রিয় নেতা এস এম জিলানীকে এই আসন (টুঙ্গীপাড়া ও কোটালীপাড়া) থেকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে জাতীয় সংসদে পাঠাবেন’। টুঙ্গীপাড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত দ্বি বার্ষিক সম্মেলনের প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। তিনি বলেন, বিএনপি ইতিমধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার ও মেরামতের জন্য ৩১—দফা পেশ করেছে। আপনারা সবাই এই ৩১—দফা সম্পর্কে ধারণা রাখবেন। এই দফাগুলোই বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সনদ।

টুঙ্গীপাড়া উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক শেখ সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দ্বি—বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন টুঙ্গীপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ সালাউদ্দিন। এছাড়াও বিএনপি’র ঢাকা—বিভাগীয় সহ—সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, জেলা বিএনপি’র আহবায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান ও সদস্য—সচিব এ্যাডভোকেট আবুল বশার সহ স্থানীয় ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত বিএনপি নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে বক্তারা তাদের বক্তব্যের শেষে আগামী সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে এস এম জিলানীকে ভোট দেয়ার আহবান জানান।

সম্মেলনের শেষদিকে মোঃ সালাউদ্দিনকে সভাপতি ও শেখ মনিরুজ্জামান বাবলুকে সাধারণ সম্পাদক করে টুঙ্গীপাড়া উপজেলা বিএনপি এবং মোঃ এমদাদ হোসেন মোল্লাকে সভাপতি ও জিহাদুল ইসলাম বাবুকে সাধারণ সম্পাদক করে টুঙ্গীপাড়া পৌর বিএনপি’র ৭—সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটির ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। আগামী দু’ বছর এ কমিটি এলাকায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর টুঙ্গীপাড়ায় অনুষ্ঠিত হল উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপি’র দ্বি—বার্ষিক সম্মেলন।

এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সড়কে নির্মিত হয় নানা রংয়ের তোরণ। টাঙ্গানো হয় ব্যানার ফেস্টুন। সকাল থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা মিছিল সহকারে ভীড় জমায় সম্মেলনস্থলে। সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে শান্তির পায়রা উড়ান কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। পরিবেশিত হয় দলীয় সঙ্গীত ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’। পরে শুরু হয় মূল আলোচনা পর্ব।