Image description

আজিজুল হক (ছদ্মনাম)। দেশের শীর্ষ ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শর্ষিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বোর্ড মেধাবৃত্তি পেয়ে দাখিল ও আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক বিভাগগুলোর একটি থেকে ভালো সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে রাজধানী ঢাকা একটি স্বনামধন্য মাদরাসায় প্রভাষক (ননএমপিও) হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আরবি প্রভাষক (বিষয় কোড: ৪২৯) প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ভাইভায় অংশগ্রহণ করেন। তাকে ভাইভায় মোট ৬টি প্রশ্ন করা হয়, তিনি ৫টিরই সঠিক উত্তর দেন। ভাইভাও ছিল প্রাণবন্ত। তিনি ভাবতেই পারেননি তিনি অনুত্তীর্ণ হবেন। ফল প্রকাশের পর দেখা গেল তিনি অনুত্তীর্ণ।

আজিজুল হকের মতোই প্রায় ২০ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী ভালো ভাইভা দিয়েও অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। যা শিক্ষক নিবন্ধনের ইতিহাসে একদমই বিরল। শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভা অন্যসব চাকরির পরীক্ষার ভাইভার মতো না। এ ভাইভার নম্বর মূল নম্বরের সঙ্গে একদমই যুক্ত হয় না এবং মেধাতালিকায়ও এ নম্বরের ভিত্তিতে কোনো প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষায় মূল বাছাই হয় লিখিত পরীক্ষায়। লিখিত পরীক্ষাই এখানে যোগ্যতার মাপকাঠি। লিখিত পরীক্ষার নম্বর কম থাকলে ভাইভার নম্বর বেশি পেলেও মেধাতালিকায় ওই প্রার্থী পিছিয়ে থাকেন আবার লিখিত পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেয়ে ভাইভায় কম পেলেও তিনি মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকেন।

ভাইভা মূলত ছিল সনদপত্রসমূহ ও মৌলিক কাগজপত্র ঠিক আছে কি-না তা যাচাই করার মাধ্যম। ভাইভার নম্বর বন্টনও তা-ই বলে। ভাইভায় মোট নম্বর ২০। সনদপত্রে ১২ নম্বর এবং উপস্থাপন ও প্রশ্নে ৮ নম্বর। মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এ সব পর্যায়ে প্রথম বিভাগ থাকলে একজন প্রার্থী সনদপত্রে ১২ নম্বর পান। যেহেতু একজন প্রার্থী প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখে ভাইভায় ডাক পান তাই বিগত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাগুলোতে ভাইভাকে কঠিন করে দেখা হতো না। সদনপত্র ও মৌলিক কাগজপত্র ঠিক থাকলে মৌলিক দুএকটি প্রশ্ন করে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশ্ন না করেই ভাইভায় পাশ করানো হয়েছে। ১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষার ভাইভায় পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষায় পাসের হার ৯৫ দশমিক ২ শতাংশ। শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনেও শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভাকে সহজভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলোয় ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘... অনেকেই মৌখিক পরীক্ষায় পাস নম্বর নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ভাইভায় অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা খুব কম। যদি না কাগজপত্রে তথ্যগত কোনো অসামঞ্জস্য থাকে।’ যে ভাইভাকে বিগত নিবন্ধন পরীক্ষাগুলোতে সহজভাবে দেখা হয়েছে, যে ভাইভার নম্বরে মেধাতালিকায় কোনো প্রভাব পড়ে না সে ভাইভায় এবার ২০ হাজার প্রার্থীকে ফেইল দেওয়া হয়েছে। ৯২-৯৫ শতাংশ থেকে হঠাৎ পাসের হার নেমে এল ৭০ শতাংশে!

শিক্ষক নিবন্ধনে যেকেউ চাইলেই ভাইভা দিতে পারবে না। প্রার্থীরা প্রথমে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেন। সে পরীক্ষায় কোনো উত্তর ভুল দিলে তাতে ০ দশমিক ২৫ নম্বর প্রাপ্ত নম্বর থেকে কাটা হয়। এ নিবন্ধন পরীক্ষায় ১৮ লাখের বেশি প্রার্থী প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা দিয়ে পাস করে মাত্র ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। যারা প্রিলিমিনারিতে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বর পান তারাই কেবল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা দেবার সুযোগ পান। এরপর ৩ ঘণ্টার ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। ওই লিখিত পরীক্ষায় যারা পাস করেন কেবল তারাই ভাইভার জন্য ডাক পান। গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন প্রতিযোগিতামূলক ২টি ধাপ পেরিয়ে এত সংখ্যক প্রার্থীর অনুত্তীর্ণ হলেন। ভাইভা বোর্ডে থাকা বিষয় বিশেষজ্ঞদের খামখেয়ালির কারণে এমন হয়েছে বলে মনে করছেন অনুত্তীর্ণরা।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে একই বিষয়ের কোনো বোর্ডে পাস করেছেন ৩০ জনের ২৯ জন, আবার কোনো বোর্ডে ৩০ জনের মাত্র ২ জন। যে বোর্ডে ২৯ জনই পাস করলেন সেখানেই সব মেধাবী প্রার্থী এসেছিল আর যে বোর্ডের ২৮ জন ফেল সেখানে সব মেধাহীন প্রার্থী ছিল? একেক বোর্ড প্রার্থীদের ভাইভা একেকভাবে নিয়েছেন বোর্ডের সদস্যরা। কেউ আগের মতোই ভাইভাকে কাগজপত্র যাচাই ও একেবারেই মৌলিক বিষয় যাচাইয়ের মাধ্যম হিসেবে সহজভাবে নিয়েছেন আবার কেউ প্রিলিমিনারি ও লিখিততে পাস করে আসা এ প্রার্থীদের ২-৩ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষাকেই যোগ্যতা পরিমাপের মাধ্যম হিসেবে নিয়েছেন। কোনো বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক কোনা প্রশ্ন না করে নাম-ঠিকানা, কোন বিষয়ে পড়েছেন তা জিজ্ঞেস করেই পাস করিয়েছেন আবার কোনো বোর্ডে অনেকগুলো কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেবার পরও মাত্র দুয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় ফেল করিয়েছেন। প্রভাষক আরবি ও সহকারী মৌলভিতে কোনো বোর্ডে অজু-গোসলের ফরজ, নামাজের ওয়াজিব এমন সহজ প্রশ্ন করে পাস দেওয়া হয়েছে আবার কোনো বোর্ডে আরবি গ্রামারের ডজনখানেক কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেবার পরও ফেইল করানো হয়েছে। এমনকি বিগত নিবন্ধন পরীক্ষাগুলোর ভাইভায় উত্তীর্ণ হয়ে যারা পাস করেছেন এমনকি মেধাতালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করে পাঠদান করছেন তারাও অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন। ভাইভাকে বানানো হয়েছে বাদ দেবার মাধ্যম। ভাইভা কি শুধু ফেইল করানোর জন্যই? একজন প্রার্থীর ভাইভায় ফেল করা তো শুধু ফেল করাই নয়, তার দীর্ঘ দিনের ললিত স্বপ্নের সলিলসমাধি। সমাজ ও বন্ধুদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া। পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের চোখের পানি।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ভাইভায় তো যে কাউকে ডাকা হয়নি, ডাকা হয়েছে কেবল প্রিলিমিনারি ও লিখিততে উত্তীর্ণদের। বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর অভিযোগ, তাদের ১০-১৫টি প্রশ্নের উত্তর দেবার পরও মাত্র দুয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় ফেল দেওয়া হয়েছে। অনেকে বলেছেন, সবগুলো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেবার পরও ফেল করেছেন। একজন প্রার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স পাস করে নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করে সনদপত্রের ১২ নম্বরে ১২ নম্বরই পেয়ে বিষয় ভিত্তিক ১৭টি কঠিন প্রশ্নের ১৫টিরই সঠিক উত্তর প্রদানের পরও যদি তাকে ভাইভার অবশিষ্ট ৮ নম্বরের ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৩ দশমিক ২ নম্বরও না দিয়ে তাকে ফেল করানো হয় তাহলে তাকে পাস করার জন্য আর কী করতে হবে? কোনো বিষয় বিশেষজ্ঞও কি এটি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন, যে তিনি কোনো পরীক্ষায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিতভাবে দিতে পারবেন?

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আরেকটি বড় সমস্যা হয়েছে- এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টন’ বহির্ভূত প্রশ্ন করা। নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ০২ নভেম্বর, ২০২৩ কিন্তু এরও ৫ মাস পর ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ এনটিআরসিএ তাদের ওয়েবসাইটে নতুন সিলেবাস, প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টন প্রকাশ করে। কিন্তু দুঃখজনক যে, প্রার্থীদের প্রস্তুতির সাড়ে ৫ মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পর প্রকাশিত সে পরিবর্তিত ‘সিলেবাস, প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টন’ অনুযায়ী প্রশ্ন করেনি। প্রশ্নের ধারা ও মানবন্টনে প্রতিটি প্রশ্নের বিকল্প প্রশ্নের কথা থাকলেও প্রশ্নপত্রে তা ছিল না

নিয়মবহির্ভূত প্রশ্ন করার পরও যারা পাস করে এসে ভাইভায় ১০-১৫টি প্রশ্নের উত্তর দেবার পরও মাত্র দুএকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় অনুত্তীর্ণ! এ অনুত্তীর্ণ মানে তার লিখিত পরীক্ষায় যতই ভালো নম্বর থাকুক, তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের আবেদনই করতে পারবেন না। অথচ পদ অনেক খালি। ভাইভা থেকে এভাবে গণহারে বাদ দেবার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের পদ খালিই থাকবে। অনেক পদে হাজার হাজার পদ খালি থাকার পরও এভাবে অনুত্তীর্ণ করানো হয়েছে। যার ফলে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ খালি থাকবে এবং হাজার হাজার মানুষও বেকার থাকবে। এতে কি আমাদের দেশের লাভ হবে? এভাবে দুএকটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য অনুত্তীর্ণ না করালেও শ্রেণিকক্ষ দুর্বল শিক্ষক পেতো না, কারণ তারা তো লিখিত পরীক্ষা দিয়ে পাস করেই এসেছেন। মাসের পর মাস চেষ্টা করে দুটি ধাপ পেরিয়ে আসা প্রার্থীদের সনদপত্র ঠিক থাকা প্রার্থীদের দুয়েকটি প্রশ্নের উত্তর না পারলেই অনুত্তীর্ণ হওয়া অমানবিক। যে লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে মেধাতালিকা হবে, সে লিখিত পরীক্ষার নম্বর যে ভাইভার নম্বর মেধাতালিকায় প্রভাব ফেলে না তার জন্য মূল্যহীন! সনদ মানেই চাকরি নয়। চাকরি দেওয়া হবে প্রার্থীর আবেদনের ভিত্তিতে। আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানে যদি লিখিত পরীক্ষায় তারচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া কেউ আবেদন করেন তাহলে বেশি নম্বর পাওয়া প্রার্থীরই চাকরি হবে। তবে তিনি এ সনদ দিয়ে অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে তো আবেদন করতে পারবেন। অথবা আবেদন না করলেও তো তিনি একটি সনদ পেলেন।

এনটিআরসিএর বিধি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় ৪০ শতাংশ নম্বর পেলেই পাস। ভাইভার দুটি অংশে (সনদপত্রে ১২ এবং প্রশ্নে ৮) আলাদা আলাদা ৪০ শতাংশ নম্বর পাওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করলেও এনটিআরসিএর আইনে তা পাওয়া যায়নি। ২২ অক্টোবর, ২০১৫ প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে, ‘কোন প্রার্থী লিখিত এবং মৌখিক-উভয় ক্ষেত্রে পৃথকভাবে অন্যূন শতকরা ৪০ (চল্লিশ) নম্বর না পাইলে তিনি কোন মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য হইবেন না’। এখানে মৌখিকের সনদ অংশে ১২ এবং প্রশ্ন প্রশ্ন অংশে ৮ এর মধ্যে পৃথকভাবে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে এমন কথা বলা নেই। শিক্ষা বিষয়ক আরেক নিউজপোর্টাল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রার্থীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। বিধিমালায় বলা আছে, কোনও প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক-উভয় ক্ষেত্রেই পৃথকভাবে অন্যূন শতকরা ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে তিনি মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য বিবেচিত হবেন না। এ ব্যাখ্যা এনটিআরসিএর কর্মকর্তাও দিয়েছেন।

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, ‘ভাইভা বোর্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ...প্রার্থীদের উত্তীর্ণ হতে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বা ২০ নম্বরের মধ্যে ৮ পেতে হবে।’ ভাইভার মোট নম্বর ২০ এর মধ্যে সনদপত্রের ১২ নম্বরে ১২ থাকলে ভাইভার ৬০ শতাংশ এখানেই হয়ে যায়। এর পরও কেন একজন শিক্ষার্থীকে ১৫-১৭টি প্রশ্নের উত্তর দেবার পরও প্রশ্ন অংশের ৮ নম্বরের ৪০ শতাংশ (৩.২ নম্বর) দেওয়া হবে না এবং সার্টিফিকেটেই ভাইভার মোট নম্বরের ৬০ শতাংশ পাওয়ার পরও আলাদাভাবে সেই প্রশ্ন অংশের নম্বরের জন্য একজন প্রার্থী অনুত্তীর্ণ হবেন?

লেখক: আবু মুসআব আব্দুল্লাহ, শিক্ষক ও কলামিস্ট