Image description
৮৭ প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য থাকলেও এখন অনেক প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে বালু উত্তোলনকারীও বদল হয়। অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি: ইউএনও

হালদা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। এখানে প্রজনন মৌসুমে রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউশসহ মিঠাপানির সব মাছ ডিম দেয়। হালদার রেণুর কদর সারা দেশে। হালদার পোনা মাছচাষির কাছে অমূল্য সম্পদ। তবে অবৈধ বালু উত্তোলনসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে ৮৭ প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য হালদা আজ সংকটে। বলা চলে হালদা এখন ‘আইসিইউ’তে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, হালদার উজানে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে চলছে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন। এতে এর জীববৈচিত্র্য এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পার্বত্য অংশে হালদার প্রস্থ গড়ে ২০-৩০ ফুট হলেও অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে কোথাও কোথাও এখন ৪০০-৫০০ ফুট। অবাধে নদীর গভীর থেকে বালু তোলার ফলে পাড়ের মাটি ভেঙে বিশাল জায়গাজুড়ে ধূসর মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে হালদারচর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈধ ৩টি পয়েন্টসহ অর্ধশতাধিক পয়েন্টে বালু উত্তোলন চলছে অবাধে।

হালদার উৎপত্তি খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নে হাসুকপাড়ার হালদা ছড়া। পরে মানিকছড়ি উপজেলা হয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান উপজেলা হয়ে কালুরঘাটের কর্ণফুলীর নদীর মোহনায় সংযুক্ত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে বালু উত্তোলনকারীও বদল হয়। তবে থামেনি দুর্বৃত্তায়ন ও মানবসৃষ্ট দানব আচরণ। উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানেও এদের দমানো যাচ্ছে না।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গত ৪ মাসে পাঁচটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় একজনকে কারাদণ্ড, দুটি মামলা, লক্ষাধিক টাকা জরিমানাসহ ১ লাখ ৩০ হাজার ৬৬০ ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া বলেন, ‘উপজেলায় তিনটি বৈধ বালু উত্তোলন পয়েন্ট রয়েছে। এর বাইরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের আইনগত সুযোগ নেই। অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অপরাধীদের (ভ্রাম্যমাণ আদালত) আইনের আওতায় আনাসহ মালিকবিহীন বালু জব্দ করে তা নিলামে তুলি।’

গত সোমবার বিকেলে হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান খাগড়াছড়ি মানিকছড়ি উপজেলার দশবিল, গোরখানা, আছাদতলীসহ নদীর শাখা, উপশাখাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মূল হালদাসহ শাখা, উপশাখার চরে কৃষিজমিতে অবাধে তামাক চাষ ও অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘হালদা নদী দেশের প্রাণ। পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী এবং দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় অপরিকল্পিত বালি উত্তোলনের ফলে হালদার চিরচেনা রূপ বদলে গেছে। ড্রেজার মেশিনে বালু তোলার ফলে নদীর উজান গভীর হয়ে মরুভূমির রূপ নিয়েছে। মূল হালদার পাড় অবাধে ভেঙে চুরমার হয়ে নাম-নিশানাও মুছে গেছে! এভাবে হালদাকে ঘিরে মানবসৃষ্ট দানব আচরণ চলতে থাকলে নতুন ও আগামী প্রজন্ম হালদার উৎপত্তি ভুলে যাবে এবং দেশে চরম আকারে মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হবে।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘যদিও ইতিমধ্যে সরকার হালদাকে জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের পাশাপাশি হালদার অববাহিকায় তামাকচাষ নিষিদ্ধ করতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে হালদার ভয়াবহতার চিত্র ঊর্ধ্বতন মহলের অজানা। তাই অচিরেই বালু উত্তোলনে হালদার চিরচেনা রূপ ধ্বংসের বিষয়টি তুলে ধরে তা পরিকল্পিতভাবে করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আমি বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে অবহিত করব।’