Image description

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। হিমাগার ভাড়া আকস্মিক বাড়ানোর ফলে লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন কৃষক। আগাম নোটিস ছাড়া হঠাৎ ভাড়া বৃদ্ধিতে কৃষক বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। হিমাগার সিন্ডিকেটের কারণে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের আলু চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। হিমাগার মালিক সমিতি জানিয়েছে, তারা মূল্য বাড়ায়নি, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে।

গত বছর হিমাগারে আলু রাখতে প্রতি বস্তায় ৩০০-৩৫০ টাকা নেওয়া হতো। এক বস্তায় ৮০ কেজি পর্যন্ত আলু রাখা যায়। এ বছর হিমাগার মালিকরা বস্তায় ৫০ কেজির বেশি আলু রাখতে দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মাত্র ৫০ কেজি আলু রাখতেই ৪০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছেন তারা। এ ভাড়া গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষক অন্য কুমার মণ্ডল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের জন্য আগে হিমাগারগুলোকে ৪ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এবার তা বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি আরও বলেন, এবার আলু উৎপাদন খরচ প্রতি কেজিতে ২২ টাকা পড়েছে। বর্তমানে বাজারে আলু ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হিমাগারে না রাখলে এখন বিক্রি করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চলতি মাসের শুরুতে রাজশাহীর হিমাগারগুলোয় আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন কৃষক। মোহনপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে তাঁরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে মোহনপুর উপজেলা সদর এলাকায় আলু ফেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অনেকে শুয়ে পড়েন মহাসড়কে।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত বছর হিমাগার মালিকরা উৎপাদন মৌসুমে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ভাড়া বাড়িয়েছেন। ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এবার সে সিন্ডিকেট ভাঙবে। এখন দেখছি সিন্ডিকেট ভাঙা দূরের কথা, আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠল। এ বছর ভাড়া বাড়ানো নিয়ে আমাদের যতটা আপত্তি, এর চেয়ে বেশি আপত্তি কেজি হিসেবে ভাড়া আদায়ের পদ্ধতি। কারণ আগে কখনো কেজি হিসেবে হিমাগারে আলু রাখা হতো না। প্রতি বস্তায় সর্বোচ্চ ৮০ কেজি আলু রাখার সুযোগ ছিল।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাল্ল্যে গ্রামের কৃষক হেলাল সরকার ৬ একর জমিতে আলু আবাদ করেন। বুকিং কার্ড সংকটের খবর পেয়ে কয়েকটি হিমাগারে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কার্ডের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, হিমাগার কর্তৃপক্ষ প্রকৃত কৃষককে নয়, মজুতদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে কার্ড বিক্রি করেছে। ফলে কৃষক সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে তারা লোকসানের শিকার হবেন।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আলু চাষি আজিজ শেখ বলেন, এ বছর বীজ আলুর দাম যেমন বেশি ছিল, সারের মূল্য ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় ফলন ভালো হলেও লাভের মুখ দেখতে পারব কি না সন্দিহান।

হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ বাবু বলেন, হিমাগারে আলু রাখার জন্য সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রতি কেজি আলু ৬ টাকা কেজি দরে রাখার জন্য মূল্য চূড়ান্ত করেছে। আমরা মালিকরা দাম বাড়িয়েছি এটা ঠিক না।