Image description

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ পর্যালোচনা করছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন এ নিয়ে দু’দফা চিঠি গেছে দিল্লিতে। কিন্তু এখনো কোনো জবাব আসেনি। বাংলাদেশ দিল্লির জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। দিল্লির বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তিনি বলেছেন বিষয়টি ভারতের চলমান বিচারিক ও আইনগত প্রক্রিয়ার আওতায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত বছরের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। একই মামলায় রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়।

রায় ঘোষণার আগে থেকেই শেখ হাসিনা ও কামাল ভারতের আশ্রয়ে দিল্লিতে রয়েছেন। রায় ঘোষণার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাদের ফেরতের আহ্বান জানায়। রায়ের পরপরই তাকে ফেরতে ফের নয়াদিল্লিতে চিঠি পাঠানো হয়। ভারত বর্তমানে প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে বলেই জানা গেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে দু’দেশের কূটনৈতিক মহল। 

জবাবের অপেক্ষায় ঢাকা: ওদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে লেখা চিঠির জবাব এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি। কোন প্রক্রিয়ায় ভারতে চিঠি পাঠানো হয়েছে, সে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, নোট ভারবাল (কূটনৈতিক পত্র) আমাদের মিশনের মাধ্যমে ওদের (ভারতের) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কোনো উত্তর আসেনি। এত তাড়াতাড়ি উত্তর আশাও করি না আমরা। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর তাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ দু’দফা চিঠি দিলেও সাড়া দেয়নি ভারত।

এর মধ্যে ১৭ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ওই আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দেয় বাংলাদেশ। চিঠিতে বলা হয়, বিস্তারিত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ১৭ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন। আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে পুনরায় অনুরোধ জানাচ্ছে।

এই চিঠির কোনো জবাব নয়াদিল্লি না দিলেও শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণার পর একটি বিবৃতি দিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়েছিল, একটি নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি, স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব সময় সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকবো। 

অন্য প্রসঙ্গ: অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে পশ্চিমাদের কোনো চাপে নেই। আর নির্বাচনে ভারত পর্যবেক্ষক পাঠাতে চাইলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।