রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভি নতুন কৌশল উন্মোচন করেছে। তারা স্কটল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে গভীর সাগরে ডানাযুক্ত টর্পেডোর মতো এক ক্ষুদ্র সাবমেরিন গ্লাইডার পাঠিয়েছে। যা পানির নিচে অদৃশ্য হতে পারে। ‘এসজি-১ ফ্যাথম’ নামের এই ডুবোযানটি অনুপ্রবেশকারীদের—বিশেষত রাশিয়ার গোপনে পরিচালিত সাবমেরিনকে খোঁজ করতে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ফ্যাথমের প্রোগ্রাম ম্যানেজার কেটি রেইন বলেন, গ্লাইডারটি সমুদ্রের গভীরে টহল দিয়ে শত্রুপক্ষের গতিবিধি শুনে ও পর্যবেক্ষণ করে। জার্মান প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান হেলসিং নির্মিত এই গ্লাইডার বর্তমানে রয়্যাল নেভির পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর্যায়ে রয়েছে। মাসের পর মাস টানা টহল দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে এবং বহু বছরের শব্দগত ডেটার ওপর প্রশিক্ষিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে।
রেইন আরও বলেন, এটি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত হুমকি শনাক্ত করতে পারে। কার্যকর প্রমাণিত হলে ফ্যাথম যুক্ত হবে রয়্যাল নেভির নতুন সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থায়— ‘অ্যাটলান্টিক বাস্টিয়ন’-এ, যেখানে ড্রোন, যুদ্ধজাহাজ এবং নজরদারি বিমান থাকবে। এসব দেশের গুরুত্বপূর্ণ পানির নিচের কেবল ও পাইপলাইন রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটলান্টিক বাস্টিয়ন রুশ সাবমেরিন ও আন্ডারওয়াটার তৎপরতার পুনরুত্থানের সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে। গত দুই বছরে যুক্তরাজ্যের জলে রাশিয়ার শিপ ও সাবমেরিন তৎপরতা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। রাশিয়া অবশ্য অভিযোগগুলোকে উত্তেজনা সৃষ্টির কৌশল বলে দাবি করেছে।
গত সেপ্টেম্বর সংসদের ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি কমিটি সতর্ক করে জানায়, যুক্তরাজ্য তার পানির নিচের কেবল রক্ষায় পর্যাপ্ত প্রস্তুত নয়। যেকোনো হামলা আর্থিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয়কর ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
গত মাসে রুশ গবেষণা জাহাজ ইয়ান্তার যুক্তরাজ্যের আকাশসীমার কাছে নজরদারিতে থাকা আরএএফ পাইলটদের দিকে লেজার ছুঁড়ে উত্তেজনা বাড়ায়। প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি এই আচরণকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেন।
ব্রিটিশ প্রতিক্রিয়ার নেতৃত্বে রয়েছেন ফার্স্ট সি লর্ড জেনারেল স্যার গুইন জেনকিন্স। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যয়ের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া তার সাবমেরিন বহরে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে… আমরা এখনো এগিয়ে, কিন্তু ব্যবধান দ্রুত কমছে।
রুসির সামরিক বিশ্লেষক প্রফেসর পিটার রবার্টস বলেন, এই নতুন কৌশল দেখতে ভালো, কিন্তু বাস্তবে অনেকটা সজ্জিত দুর্বলতাকে ঢাকার চেষ্টা। কারণ যুক্তরাজ্য দীর্ঘ দিন আটলান্টিক নিরাপত্তায় নিজ দায়িত্ব অবহেলা করেছে। তিনি বলেন, রয়্যাল নেভির যথেষ্ট জাহাজ নেই। তাই ড্রোন দিয়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা লুনা হাউস এগ্রিমেন্টকে রুশ নৌতৎপরতা নজরদারির অজুহাত বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, এটি আন্তর্জাতিক সাগরে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।