এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। তেলসমৃদ্ধ ভেনেজুয়েলা দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত আগ্রহের কেন্দ্র। বলা হয়, দেশটির তেলসম্পদ নিয়ন্ত্রণের পথে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটাতে হলে একজন পশ্চিমা-ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মুখ প্রয়োজন ছিল। পশ্চিমাদের সেই প্রিয় মুখই মাচাদো। তিনি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর পরই যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়ালার উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে এখন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে দেশকে রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তিনি বলেছেন, ‘যে দিক থেকেই সাম্রাজ্যবাদী হুমকি আসুক না কেন, আমাদের এই পবিত্র জন্মভূমির প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করতে হবে।’
বুধবার (২৬ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, রাজধানী কারাকাসে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মাদুরো ঐতিহাসিক ‘পেরুর তলোয়ার’ উঁচিয়ে বক্তব্য দেন। এটি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিজয়ের স্মারক হিসেবে ভেনেজুয়েলার অবিসংবাদিত নেতা সিমন বলিভারকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। মাদুরো বলিভারের উত্তরসূরি হিসেবে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘দেশমাতৃকা পবিত্র; তাকে সম্মান করতে হবে। ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই।’
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন নতুন এক দফা সামরিক অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই সামরিক অভিযানের খবরে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী অন্তত ৮০ জনকে হত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এই হামলাগুলো নৌপথে মাদক পাচার রোধ করার জন্য পরিচালিত হয়েছে। হামলার শিকার সন্দেহভাজন বেশ কয়েকটি নৌযান ভেনেজুয়েলা থেকেই ছেড়েছিল।
মাদুরো এসব অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দাবি করেছেন, এগুলো ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। দেশটির অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডকে বিচারবহির্ভূত হত্যার উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন।
ভেনেজুয়েলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেস বলেছেন, ‘তারা আমাদের তেল-গ্যাস, আমাদের সোনা, হিরা, লোহা, বক্সাইট—সবকিছু কোনো মূল্য পরিশোধ না করেই চায়। ভেনেজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদই তাদের লক্ষ্য।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভেনেজুয়েলার সম্পদ দখলের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মী মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলা দখল করে, তবে তার পেছনে মূল উদ্দেশ্যেই হলো দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ দখল ও রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন।
এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় যোগ দিয়েছে কিউবাও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেস মন্তব্য করেছেন, ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি অতিরঞ্জিত ও আগ্রাসী। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এভাবে পরিস্থিতি চালালে অগণিত প্রাণহানি ঘটতে পারে এবং পুরো পশ্চিম গোলার্ধে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে এই উন্মাদনা থামাতে আহ্বান জানাই।’
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাদুরোকে কখনোই ভেনেজুয়েলার বৈধ নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। গত বছর বিতর্কিত নির্বাচনে মাদুরো তৃতীয়বারের মতো জয়ী হওয়ার পর থেকে বিরোধীরা দাবি করে আসছে, তিনি আসলে পরাজিত হয়েছিলেন।