Image description
 

রবিবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ রাজপথে নেমেছিল। তারা সরকারের এক বড় দুর্নীতি কেলেঙ্কারি নিয়ে জবাব চাইছে। আগস্ট থেকে পর্যায়ক্রমে যে বিক্ষোভ চলছে, এই সমাবেশ তারই অংশ।

এই তিন দিনের বড় আয়োজন করেছে ইগ্লেসিয়া নি ক্রিস্তো নামে পরিচিত ধর্মীয় গোষ্ঠী, সংক্ষেপে ‘আইএনসি’। তারা আগে প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মারকোস জুনিয়রকে সমর্থন করেছিল। ২০২২ সালের নির্বাচনে তার পক্ষেও ছিল। এখন সেই অবস্থান পুরোপুরি বদলে গেছে।

বিক্ষোভের কেন্দ্রে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে বহু বিলিয়ন ডলারের তহবিল অপব্যবহারের অভিযোগ। আইএনসি দাবি করছে—এ নিয়ে ‘পরিষ্কার ও স্বচ্ছ তদন্ত’ করতে হবে।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে লড়াই—একদিকে প্রেসিডেন্ট মারকোস, অন্যদিকে তার সাবেক সহ-প্রার্থী ও এখনকার উপ-রাষ্ট্রপতি সারা দুতার্তে। তাদের জোট ভেঙে গেছে অনেক আগেই, আর দুর্নীতি কেলেঙ্কারি এই বিবাদকে আরও তীব্র করেছে।

অনেকেই এখন খোলাখুলিভাবে মারকোসকে ২০২৮ সালের আগেই সরানোর দাবি তুলছে। এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দুতার্তে-সমর্থক কিছু গোষ্ঠী, আইএনসির একাংশ এবং আরও কিছু দল। যদিও আইএনসি বলছে, তারা সরকার পতনের দাবিতে নেই, তবু তাদের বিপুল উপস্থিতি আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করছে।

সোমবার রাতে আইএনসির নেতৃত্ব জানায়—তাদের কথা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাই তারা আন্দোলন এক দিন আগেই শেষ করছে।

কেন এই বিক্ষোভ?

সাম্প্রতিক দুই সপ্তাহে ভয়াবহ বন্যা ও পর পর টাইফুনে ২৫০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। অনেক জায়গায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে।

এরেই মধ্যে প্রকাশ পায়, গত ১৫ বছরে সরকার প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার বন্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করেছে। কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী—এর অন্তত ২৫ শতাংশ ঘুষ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় গেছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদ জব্দ করা গেছে।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত কংগ্রেসের শুনানিতে একের পর এক কর্মকর্তা বলেছেন—কীভাবে সরকারি প্রকৌশলী, জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারি কোম্পানি মিলেমিশে দরপত্রকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে টাকা লুটেছে।

অনেকে প্রেসিডেন্ট মারকোসকে দোষ দিচ্ছেন—তিনি দেরি করেছেন, কিংবা রাজনৈতিক সহযোগীদের দোষ গোপন করেছেন। তার চাচাতো ভাই এবং একসময়কার শক্তিশালী স্পিকার মার্টিন রোমুয়ালদেজ–এর নামও এই অভিযোগে এসেছে।

গত সপ্তাহে রোমুয়ালদেজের এক সাবেক ডেপুটি (এখন দেশ ছেড়ে পালানো অবস্থায়) এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট মারকোস নিজেও এই কারচুপিতে যুক্ত ছিলেন। সরকার এই অভিযোগকে বলেছে ‘একেবারে ভিত্তিহীন কথা’।

আইএনসি কারা?

আইএনসি–র সদস্য প্রায় ৩০ লাখ বলে দাবি করা হয়। ১৯১৪ সালে ফেলিক্স মানালো এটি প্রতিষ্ঠা করেন। দেশে ক্যাথলিকদের সংখ্যা ৮ কোটি ৬০ লাখের মতো হলেও আইএনসি–র রাজনৈতিক প্রভাব আলাদা। তারা নির্বাচন এলে প্রার্থী ঠিক করে দেয়, আর সদস্যরা সাধারণত একযোগে সেই প্রার্থীকে ভোট দেয়।

২০১৬ সালে তারা রদ্রিগো দুতার্তেকে সমর্থন করেছিল।

 ২০২২ সালে মারকোস–দুতার্তে জুটিকেও সমর্থন করে।

 জোট ভাঙার পর আইএনসি দুতার্তের পাশে দাঁড়ায়।

এ বছর জানুয়ারিতে তারা ম্যানিলায় বড় সমাবেশ করেছিল দুতার্তের বিরুদ্ধে অভিশংসন চেষ্টার প্রতিবাদে—যা অনেকেই মনে করেন, মারকোস নীরবে সমর্থন করেছিলেন।

মারকোস সিনিয়রের সময়েও আইএনসিকে তাদের ঘনিষ্ঠ মনে করা হতো।

এ বছর জুলাইয়ে আইএনসির ১১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সরকার বিশেষ ছুটিও ঘোষণা করেছিল—যা তাদের প্রভাবেরই ইঙ্গিত।

তারা কী চাইছে?

আইএনসি–র বিক্ষোভ তিন দিনের হওয়ার কথা ছিল—১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর। তাদের মূল দাবি—‘সঠিক ও স্বচ্ছ তদন্ত’ এবং ‘ভালো গণতন্ত্র’।

অনেক বিক্ষোভকারীর অভিযোগ—দুর্নীতির কারণে বন্যা বাড়ছে, মানুষ মরছে; অথচ তদন্ত এগোচ্ছে না। কারও মতে—সরকার তদন্তে পক্ষপাত করছে।

প্রথম দিনেই প্রায় ৬ লাখ মানুষ কুইরিনো গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে জড়ো হয়। পুলিশ বলছে—তাদের ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তায়।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন—তারা মারকোসকে সরানোর দাবি করছে না। কিন্তু তাদের ভেতরের অনেকেই প্রেসিডেন্টকে নিয়ে হতাশ। বিশেষ করে সম্প্রতি দুতার্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে, তার পর থেকে রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত।

সোমবার সন্ধ্যায় আইএনসি নেতৃত্ব জানায়—তারা লক্ষ্য পূরণ হয়েছে মনে করছে। টানা ৪৮ ঘণ্টা সমাবেশে অংশ নিয়ে অনেক সদস্যও ক্লান্ত।

মারকোস সরকার কী বলছে?

প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ডেভ গোমেস বলেছেন—মারকোসকে সরাতে যে গোষ্ঠী মাঠে নেমেছে, তারা খুবই ছোট একটা অংশ। তাদের অনেকেই এখন তদন্তের আওতায়।

তিনি সাবেক সাংসদ জালদি কোর অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন, যিনি সরাসরি প্রেসিডেন্টকে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন।

সোমবার রাতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়—তার এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ও বাজেট সেক্রেটারি পদত্যাগ করেছেন। দুজনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।

এর প্রভাব কী?

দেশের মানুষ মারকোস প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ—এ বিষয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু তাকে সরানো উচিত কি না, সে বিষয়ে বিভাজন গভীর।

অনেকে বলছেন—উপ-রাষ্ট্রপতি দুতার্তে রাষ্ট্রপতি হলে পরিস্থিতি খুব বদলাবে না, কারণ তিনিও নানা অভিযোগের মুখে।

মধ্য-বাম রাজনৈতিক গোষ্ঠী এখনো মারকোসকে সরানোর দাবিতে নেই, কারণ এতে দুতার্তের ক্ষমতায় ফেরার পথ তৈরি হতে পারে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বও স্পষ্ট বলেছে—তারা সংবিধানবিরোধী কোনো পথে যাবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রোনাল্ড লামাস বলছেন—বিক্ষোভ এক দিন আগে শেষ হওয়ায় সরকার কিছুটা ‘শ্বাস নেওয়ার সময়’ পেয়েছে। তবে সংকট পুরো কাটেনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ এখনো দাউ দাউ করে জ্বলছে।

টেড রেজেনশিয়া
টেড রেজেনশিয়া আল জাজিরা ইংলিশের অনলাইন সাংবাদিক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি এবং এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্যের আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করেছেন, বিশেষ করে ইরান নিয়ে। তিনি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া জার্নালিজম স্কুলের স্নাতক।