Image description
 

হাঙ্গেরির প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক লাসজলো ক্রাজনাহোরকাই ২০২৫ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। নোবেল দেওয়ার কারণ হিসেবে সুইডিশ একাডেমি জানিয়েছে, তাঁর সাহিত্যকর্ম ভয় ও বিশৃঙ্খলার মধ্যেও শিল্প ও মানবতার পুনর্জন্মের শক্তিকে প্রতিফলিত করে।

 

লাসজলো ক্রাজনাহোরকাই ১৯৫৪ সালের ৫ জানুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব হাঙ্গেরির রোমানিয়ান সীমান্তের কাছে ছোট্ট শহর গিউলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস সাতানটাঙ্গো তাঁকে হাঙ্গেরীয় সাহিত্যজগতে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। এতে সমাজতান্ত্রিক যুগের পতনের সময় এক গ্রামীণ সম্প্রদায়ের হতাশা ও বিভ্রমের চিত্র তুলে ধরা হয়। পরে বিখ্যাত পরিচালক বেলা টার এটি চলচ্চিত্রে রূপ দেন।

 
 

ক্রাজনাহোরকাইয়ের লেখায় দেখা যায় দীর্ঘ ও প্রবাহিত বাক্য, দার্শনিক চিন্তা, এবং ধ্বংস, ভয়, আশা ও আধ্যাত্মিকতার সংঘাত। তাঁর সাহিত্য কাফকার অযৌক্তিকতা এবং দস্তয়েভস্কির নৈতিক অনুসন্ধানের ধারাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তিনি মধ্য ইউরোপীয় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বহন করে আধুনিক সময়ের সংকট, অস্তিত্ব ও মুক্তির অনুসন্ধানকে গভীরভাবে প্রকাশ করেছেন।

১৯৮৯ সালে প্রকাশিত দ্য মেলানকোলি অফ রেজিস্ট্যান্স উপন্যাসের মাধ্যমে ক্রাজনাহোরকাই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন। এতে এক হাঙ্গেরীয় শহরে এক রহস্যময় সার্কাসের আগমনের মাধ্যমে সমাজের বিশৃঙ্খলা ও মানবিক পতনকে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর তৃতীয় উপন্যাস ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) সভ্যতা, ইতিহাস ও মানব অস্তিত্ব নিয়ে গভীর অনুসন্ধানমূলক রচনা।

এরপর প্রকাশিত সেইওবো দেয়ার বিলো (২০০৮) এবং ব্যারন ভেন্কহেইমস হোমকামিং (২০১৬) তাঁকে সমসাময়িক ইউরোপীয় সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লেখকে পরিণত করে। সাম্প্রতিক উপন্যাস হার্শট ০৭৭৬৯ (২০২১) আধুনিক জার্মান সমাজের নৈরাজ্য, সহিংসতা ও শিল্পের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে লেখা।

লাসজলো ক্রাজনাহোরকাই ২০১৫ সালে ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর সেইওবো দেয়ার বিলো বইটি ২০১৩ সালে সেরা অনূদিত গ্রন্থের পুরস্কার লাভ করে এবং ব্যারন ভেন্কহেইমস হোমকামিং ২০১৯ সালে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেটেড লিটারেচার জিতে নেয়। ২০২৪ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার ফর্মেন্টর পুরস্কার লাভ করেন।

২০২৫ সালে লাসজলো ক্রাজনাহোরকাই নোবেল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। ইমরে কের্তেজের পর তিনি দ্বিতীয় হাঙ্গেরীয় লেখক যিনি এ সম্মান অর্জন করেন। তাঁর রচনাকে মানবিক সংকটের মাঝেও শিল্পের স্থায়ী শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র: নোবেলপ্রাইজ