
হোয়াইট হাউসে ঐতিহাসিক বৈঠক। তা থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের যথেষ্ট ভালো একটি সুযোগ বেরিয়ে এসেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠকের আয়োজনের চেষ্টা করছেন। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই ফোনালাপটি ৪০ মিনিট স্থায়ী হয়। বৈঠকের পর জেলেনস্কি বলেছেন, সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে তারা খুব ভালো আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও রয়েছে। তিনি দ্বিপক্ষীয়ভাবে পুতিনের সঙ্গে দেখা করতেও প্রস্তুত। ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ইউরোপীয় দেশগুলো প্রদান করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এর সমন্বয় করবে। ট্রাম্প আরও দাবি করেন, যুদ্ধ শেষ করার জন্য আলোচনায় যুদ্ধবিরতি অপরিহার্য নয়। তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মেৎসে যুদ্ধবিরতির পক্ষে মত দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে বৈঠক শেষ হয়েছে পুতিন-জেলেনস্কি-ট্রাম্প বৈঠকের ইঙ্গিত দিয়ে।
বিবিসি’র স্টুয়ার্ট লাউ লিখেছেন- ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যকার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষ হয়েছে। ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারও ছিলেন। বৈঠক নিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মূল ফলাফল হলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও জেলেনস্কির সরাসরি বৈঠকের সম্ভাবনা। সেখানে ট্রাম্পও থাকতে পারেন। আরেকটি বড় আলোচনার বিষয় ছিল নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। ট্রাম্প বলেছেন, এটি ইউরোপীয় দেশগুলো দেবে, যুক্তরাষ্ট্র এর সমন্বয় করবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্র এবং অ-ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কাঠামো গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, শান্তিচুক্তির পর এই নিশ্চয়তা কার্যকর হতে হবে, যাতে ইউক্রেন ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ বোধ করে। তবে রুবিওর মতে, সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হবে একটি শক্তিশালী ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কেই শান্তির জন্য কিছু আঞ্চলিক ছাড় দিতে হবে। সহজ নয়, ন্যায্য নাও হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ শেষ করতে হলে এটাই দরকার।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন রাশিয়াকে ইউক্রেনীয় অপহৃত শিশুদের ফেরত দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন, তিনি বৈঠকের ফলাফল নিয়ে খুবই খুশি। বিশেষ করে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয়/ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের অগ্রগতি নিয়ে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মেৎস বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় গোটা ইউরোপের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তিরক্ষায় ইউরোপীয় বাহিনীকে বুটস অন দ্য গ্রাউন্ড অর্থাৎ সরাসরি অংশ নিতে হবে। একইসঙ্গে তিনি রাশিয়ার ওপর আরও শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। ওদিকে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নিখোঁজ শিশুদের বিষয়ে তার স্ত্রী মেলানিয়া বিশেষভাবে কাজ করছেন। মেলানিয়া একটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখে পুতিনকে শিশুদের নিরাপত্তার আহ্বান জানিয়েছেন। জেলেনস্কি তার স্ত্রী ওলেনার লেখা একটি চিঠি ট্রাম্পকে দিয়েছেন, যা তিনি মেলানিয়ার কাছে পৌঁছে দেবেন।
এদিকে পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠকটি সুইজারল্যান্ডে হতে পারে বলে জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। বলেন, তিনি চান যে ইউক্রেন ও রুশ নেতাদের বৈঠকটি একটি নিরপেক্ষ দেশে হোক। যেটা হবে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা। বৈঠকে ইউরোপীয় নেতাদের উপস্থিতিও কামনা করেছেন ম্যাক্রন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুই নেতার বৈঠকের বিস্তারিত জানা যায়নি। ফরাসি সম্প্রচারমাধ্যম এলসিআই’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকেই ইউক্রেনের নিরাপত্তা গ্যারান্টির জন্য কাজ শুরু করতে হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা এই জোট নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো এবং বৃটিশ প্রেসিডেন্ট স্যার কিয়ের স্টারমারকে এ বিষয়ে সবকিছু অবহিত করবো। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সমন্বয় করা হবে বলে জানান ম্যাক্রন। বলেন, এর মাধ্যমে দেখতে চাই কে কি করার জন্য প্রস্তুত। ম্যাক্রন যোগ করেন, ইউক্রেন যা ন্যায্য ও ভালো মনে করবে তাই ছাড় দেবে। তবে এই শান্তি চুক্তি আত্মসমর্পণ হবে না। অন্যথায় তা ইউক্রেন ও ইউরোপের জন্য ট্র্যাজেডি হবে।