Image description
 

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ জানিয়েছেন, গাজা ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েল হিরোশিমায় ব্যবহৃত বোমার চেয়েও ছয়গুণ বেশি শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ইসরায়েল গাজায় মোট ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছে, যা আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যার কারণ এবং এর জন্য ইসরায়েলই দায়ী। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ফিলিস্তিনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আলবানিজ ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত তথাকথিত 'গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনকে' 'একটি মৃত্যুফাঁদ' হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন, যা ক্ষুধার্ত, বোমাবর্ষণকারী এবং ক্ষীণকায় জনগোষ্ঠীকে হত্যা বা পালিয়ে যেতে বাধ্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। তিনি অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে জানান, সরকারি পরিসংখ্যানে ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন, তবে শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫৮১ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়া ১২ জন ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন। ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত মোট ৬৫২ ত্রাণপ্রার্থী ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫৭,১৩৪ জন নিহত এবং ১,৩৪,৫৯২ জন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত যুদ্ধের সময় বিভিন্ন মহলের 'অর্থনৈতিক লাভের' কথাও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, গত ২০ মাসে অস্ত্র কোম্পানিগুলো গাজায় বোমা হামলার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র ইসরায়েলকে সরবরাহ করে 'প্রায় রেকর্ড মুনাফা' অর্জন করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, ইসরায়েল এই যুদ্ধকে নতুন অস্ত্র, কাস্টমাইজড নজরদারি, প্রাণঘাতী ড্রোন এবং রাডার সিস্টেম পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহার করছে, যা ফিলিস্তিনের প্রতিরক্ষাহীনতাকে 'ইসরায়েলি সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের জন্য একটি আদর্শ পরীক্ষাগারে' পরিণত করেছে। আলবানিজ অস্ত্র প্রস্তুতকারক, ব্যাংক, প্রযুক্তি কোম্পানি, জ্বালানি জায়ান্ট এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠানসহ ৪৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন যে, তারা ইসরায়েলি রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি বৃহত্তর 'দখলদারিত্বের অর্থনীতির' সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

 

ফ্রান্সেসকা আলবানিজ রাষ্ট্রগুলোর প্রতি সরাসরি আবেদন জানিয়ে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলের ওপর পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে, সব বাণিজ্য চুক্তি এবং বিনিয়োগ সম্পর্ক স্থগিত করতে হবে এবং জবাবদিহিতা কার্যকর করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনে জড়িত থাকার জন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের আওতায় আনা যায়। তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান। আলবানিজ বিশ্বাস করেন না যে, এই গণহত্যার মাঝে বিশ্বব্যাপী নিষ্ক্রিয়তা শুধু অজ্ঞতা বা আদর্শগত কারণে চলছে, কারণ এটি এতই দৃশ্যমান এবং সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। তিনি নাগরিক সমাজের প্রতি গণহত্যা বন্ধে সরাসরি ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে ট্রেড ইউনিয়ন, আইনজীবী, নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকদের পক্ষ থেকে বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং জবাবদিহিতার জন্য চাপ দিয়ে আচরণগত পরিবর্তনকে উৎসাহিত করার কথা বলেছেন।সূত্র: আলজাজিরা