Image description
 

ফ্রান্স, স্পেন ও পোল্যান্ডের অল্পবয়সীদের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, এই দেশগুলোর তরুণদের মধ্যে গণতন্ত্রই সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা বলে মনে করেন মাত্র অর্ধেক। পোল্যান্ডে এই সংখ্যা আরও কম, মাত্র ৪৮ শতাংশ। জার্মানিতে এই হার সবচেয়ে বেশি, ৭১ শতাংশ।

গণতন্ত্রের প্রতি এই নিরুৎসাহের বিপরীতে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন অর্থাৎ ২১ শতাংশ তরুণ কিছু পরিস্থিতিতে কর্তৃত্ববাদী শাসনকেই সমর্থনযোগ্য মনে করেন। ইতালিতে এই হার সবচেয়ে বেশি, ২৪ শতাংশ এবং জার্মানিতে সবচেয়ে কম, ১৫ শতাংশ। ফ্রান্স, স্পেন ও পোল্যান্ডে এই হার ২৩ শতাংশ।

প্রায় ১০ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তারা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আছে কি নেই, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। ১৪ শতাংশ কোনো উত্তর দেননি বা জানেন না বলেছেন।

বার্লিনের ফ্রি ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানী থরস্টেন ফাস যিনি এই গবেষণায় কাজ করেছেন, তিনি জানান যে যারা নিজেদের ডানপন্থী মনে করেন এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে আছেন, তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। তিনি বলেন, “গণতন্ত্র আজ বাইরের পাশাপাশি ভেতরের চাপেও বিপন্ন।”

এই জরিপটি এপ্রিল ও মে মাসে করা হয়। ১৬ থেকে ২৬ বছর বয়সী ৬৭০০ জন তরুণ এই জরিপে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, গ্রিস ও পোল্যান্ডের বাসিন্দা। জরিপটি করেছে ইউগভ ইনস্টিটিউট এবং অর্থায়ন করেছে ইউরোপীয় যুব প্রকল্পের জন্য নিবেদিত তুই ফাউন্ডেশন।

৪৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, নিজ নিজ দেশের গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে। এই সংখ্যা জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি, ৬১ শতাংশ। সেখানে অর্থনীতি দুর্বল এবং উগ্র-ডানপন্থীদের সমর্থন বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন, চীনের উত্থান এবং রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ — এসব ঘটনাকে তরুণরা ইউরোপের ক্ষমতার ক্ষয় হিসেবে দেখছেন। মাত্র ৪২ শতাংশ তরুণ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বিশ্বের শীর্ষ তিন শক্তির একটি হিসেবে গণ্য করেছেন। কিন্তু ব্রিটেনে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশ। ব্রিটিশ অংশগ্রহণকারীদের ৭৩ শতাংশ আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফিরে যেতে চান। ইউরোপের তরুণদের ৪৭ শতাংশই চায় ব্রিটেনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের প্রধান শক্তি মনে করেন ৮৩ শতাংশ, চীনকে ৭৫ শতাংশ এবং রাশিয়াকে ৫৭ শতাংশ।

বিভক্তি বাড়ছে তরুণদের মধ্যে, তারা প্রবলভাবে ডান ও বামমুখী হচ্ছে, যেমনটা বয়স্কদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক অবস্থান জানাতে গিয়ে ১৯ শতাংশ বলেছেন তারা ডানমুখী, যা ২০২১ সালে ছিল ১৪ শতাংশ। ৩৩ শতাংশ নিজেদের কেন্দ্রস্থ, ৩২ শতাংশ বামমুখী এবং ১৬ শতাংশ কোনো শ্রেণিতে পড়েন না বলেছেন।

নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি ভিন্নতা দেখা গেছে। জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির নারীরা আগের তুলনায় আরও বেশি প্রগতিশীল হয়েছেন। কিন্তু পোল্যান্ড ও গ্রিসের তরুণ পুরুষেরা আরও বেশি রক্ষণশীল হয়ে উঠেছেন।

২০২১ সালে যেখানে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের পক্ষে ছিলেন ২৬ শতাংশ, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়েছে।

তরুণদের বেশিরভাগই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আশা রাখেন এবং যদি তাদের দেশ এখনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়, তবে তারা সেখানে থাকার পক্ষেই ভোট দেবেন। কিন্তু ৩৯ শতাংশ মনে করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন খুব একটা গণতান্ত্রিক নয় এবং মাত্র ৬ শতাংশ বলেন তাদের জাতীয় সরকার ভালোভাবে চলছে এবং কোনো বড় পরিবর্তনের দরকার নেই।

৫৩ শতাংশ মনে করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুচ্ছ বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেয়। তারা চায় ইউনিয়ন যেন জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, বাইরের হুমকি থেকে প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করা এবং অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য কোম্পানিগুলোর জন্য ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করে।

তুই ফাউন্ডেশনের প্রধান এলকে হ্লাভাটশেক বলেন, “ইউরোপীয় প্রকল্প, যা আমাদের শান্তি, চলাচলের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি দিয়েছে, সেটি আজ অনিয়ন্ত্রিত ও জটিল মনে হচ্ছে।”

গ্রীকরা তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা আমূল সংস্কারের প্রয়োজনে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সন্দিহান। থরস্টেন ফাস বলছেন, এটা গ্রিসের ইউরোজোন ঋণ সংকটকালীন ট্রমার ফল, যা তাদের অর্থনীতিকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গিয়েছিল।

যদিও তরুণরা জলবায়ু সুরক্ষায় আগ্রহী, এখন মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন পরিবেশ রক্ষা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি জরুরি। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৪ শতাংশ।