তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার টঙ্গী ক্যাম্পাসে চার দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) প্রথমে আলিম দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক ও বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে অন্য শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এসব দাবি প্রশাসনের কাছে বহুবার তোলা হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। সকাল তারা প্রথমে প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নেন। এ সময় দাবি আদায়ে ‘দুর্নীতির কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমাদের দাবি, মানতে হবে’ ইত্যাদি নানা ধরনের স্লোগান দেন। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মাঠে গিয়ে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের চারটি প্রধান দাবি হলো— প্রশাসনের হঠাৎ করে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল ও পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ; অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি কমানো; ছাত্র কল্যাণ তহবিল থেকে গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং স্কলারশিপ চালুর ব্যবস্থা। এছাড়া মিল্লাতের বাস ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস চালু করা এবং অ্যাকাডেমিক মাঠ সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।
তারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সময় অবস্থানের পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা মিল্লাতের প্রধান ফটক ভেঙে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় যান চলাচল প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকে। পরে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশের কর্মকর্তারা এসে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।
এর মধ্যে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন—মাদরাসার কিছু শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। তারা কয়েকজনকে মারধর করেন। অনেকের জামাকাপড় ছিঁড়ে যায়। লাঠিচার্জের মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়।
তারা অভিযোগ কলেচেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (টাকসু) আলিম থানার দায়িত্বশীল ওবায়েদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। যারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাদেরও কয়েকজন হামলার শিকার হয়েছেন বলে তারা জানান। টাকসুর জিএসের সঙ্গে শিক্ষকদের বাকবিতণ্ডা হয় এবং একপর্যায়ে তা হাতাহাতির পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়। কয়েকজন শিক্ষক তার ওপর চড়াও হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোনো দাবি প্রশাসন গ্রহণ করেনি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি যৌক্তিক। তা না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। প্রয়োজনে পরীক্ষা বয়কট করবেন। টাকসুর দায়িত্বশীলদের ওপর হামলার ঘটনাও তারা মেনে নেবেন না।
কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের জিএস সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সাথে থেকে সব যৌক্তিক দাবি আদায় করে নেব। যারা আজ যৌক্তিক আন্দোলনে শক্তি প্রদর্শন করেছে, তাদের বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত আসবে ইনশাআল্লাহ। শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদের কাছে আমানত।’
এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমানের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এখন কথা বলতে পারব না। আমরা মিটিংয়ে আছি। পরবর্তীতে সামগ্রিক বিষয়ে জানানো হবে।’