
দীর্ঘ ১১ বছর পর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে (শেবাচিম) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (ছাত্রদল) কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ‘রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস’ হিসেবে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানে নতুন কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের ঝড়।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির স্বাক্ষরিত ৩০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটির তালিকা সংগঠনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশও দেওয়া হয়।
কিন্তু নতুন এই কমিটি প্রকাশের পরপরই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান প্রিন্স ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফাহিদসহ প্রায় ২০ জন সদস্য পূর্বে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
সভাপতি প্রিন্সকে অতীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। তিনি আওয়ামী লীগের সময়কালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুকের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক স্লোগানও দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও প্রিন্সের বিরুদ্ধে র্যাগ রুমে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফাহিদ ২০২৩ সালের বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তার সঙ্গে বর্তমান কমিটির আরও কয়েকজন নেতাকর্মীকেও সেই প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়।
তাদের মধ্যে রয়েছেন সহসভাপতি জুবায়ের আল মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হাকিম আদিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাগীব মাহফুজ, সহ সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হক শান্ত, সাহিত্য সম্পাদক এন.এম. রোহান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জিসান হোসেন আল দ্বীনসহ আরও অনেকে।
এসব প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। তারা বলছেন, শেবাচিম প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (১১ আগস্ট ২০২৪) স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে “ক্যাম্পাস বা হোস্টেলে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীদের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো যাবে না” এবং “কোনো ছাত্র বা শিক্ষক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারবে না।”
তবুও রাজনৈতিক সংগঠনের কমিটি ঘোষণা এবং তাতে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রাধান্য পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে এমন বিতর্কিত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির নীতিমালা ও প্রশাসনিক নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে।