
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)-এর হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসজুড়ে বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কাড়তে প্রার্থীরা চালাচ্ছেন অভিনব প্রচারণা। কোথাও চলছে গান ও ছন্দের সুরে প্রচারণা, কেউবা ধারণ করেছেন ঐতিহাসিক চরিত্র, আবার কেউ তৈরি করছেন ব্যতিক্রমী ডিজাইনের প্রচারপত্র। ভোটযুদ্ধের এই প্রচারণায় ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর প্রচারণার জন্য বেছে নিয়েছেন ‘প্রজাপ্রতী’র অনুকরণে ডিজাইন করা লিফলেট। অন্যদিকে, একই প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা প্রচারপত্র তৈরি করেছেন হাতের পাঁচ আঙুলের আদলে। একই দলের আরেক সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফী সেজেছেন ঐতিহাসিক চরিত্র নবাব সিরাজউদ্দৌলার বেশে।
এছাড়াও শিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী জায়িদ হাসান জোহা প্রচারণায় সেজেছেন কৃষক আর গেয়েছেন গাম্ভারি গান।
‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার তৈরি করেছেন দৈত্যরূপী প্রচারণা কার্ড। সঙ্গে থাকছে ব্যঙ্গাত্মক প্রচারপত্র, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির আদলে ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
সহ-মিডিয়া সম্পাদক প্রার্থী নূর-নবী প্রচারণায় এনেছেন আবেগের ছোঁয়া, তিনি মাকে সঙ্গে নিয়ে করছেন গণসংযোগ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নজর কেড়েছেন কাজী সফিউল কালাম (কেএসকে হৃদয়)। তিনি গান গেয়ে গেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচার চালাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রদল সমর্থিত এজিএস পদপ্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের অনেক ব্যালট নম্বর মনে রাখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে ইউনিক কিছু একটা করি। যেন শিক্ষার্থীরা মনে রাখতে পারে। আমার ব্যালট নম্বর যেহেতু পাঁচ সেক্ষেত্রে আমি হাতের আদলে লিফলেট বানিয়েছি। সেখানে পাঁচটি আঙ্গুলের উপর আমি ইশতেহার দিয়েছি। অন্যপাশে বাসের সিডিউল দিয়েছি যেন শিক্ষার্থীদের উপকারে আসে। এটা শিক্ষার্থীরা বেশ ভালোভাবে নিচ্ছে।’
কৃষকবেশে প্রচারণা চালানো শিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা বলেন, ‘আমি যেহেতু সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করছি তাই ভেবেছে প্রচারণায় একটু বৈচিত্র্য আনার। বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক যে বৈচিত্র্যগুলো রয়েছে সেগুলো যেন আমার প্রচারণার মধ্যে উঠে আসে। এটাকে একইসঙ্গে অনেক মানুষের মধ্যে রিচ করা যাবে এবং সংস্কৃতিও ফুটে উঠবে।’
নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাজে প্রচারণা চালানোর কারণ জানতে চাইলে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সংস্কৃতি সম্পাদক পদপ্রার্থী কাফী বলেন, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্রের কারণে পরাজিত হন। আজ আমি তার সাজে শুধুই প্রচারণা চালাতে আসিনি এসেছি এক ধরনের প্রতিবাদের জায়গা থেকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মনে হচ্ছে, আমাদের বর্তমান সংস্কৃতির উপর আবারও কোনো লর্ড ক্লাইভের আক্রমণ নেমে এসেছে। সেই প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবেই আমি ভোটারদের কাছে এসেছি। যেন পলাশীর যুদ্ধে নবাব হেরে গেলেও, এই নির্বাচনে আমায় যেন তারা হারতে না দেন। নির্বাচিত হতে পারলে আমি ক্যাম্পাসে মুক্ত ও প্রগতিশীল সংস্কৃতির চর্চা আবারও জোরদার করতে চাই।’
প্রসঙ্গত, রাকসুতে ২৩টি পদে লড়ছেন ২৪৭ প্রার্থী। এরমধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ ও এজিএস পদে ১৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিতসহ এ পর্যন্ত ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
এবার রাকসুতে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫, পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬। সর্বমোট ৩০৬ জন প্রার্থী হয়েছে রাকসু, সিনেট নির্বাচনে।
এদিকে হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৬০০ জন। আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। গণনা শেষে সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
সারাবাংলা