
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জোট হতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ডাকসু ও জাকসুতে বড় ব্যবধানে পরাজয়ের পর শিবিরের ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট’ খ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির বধে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে অপরাপর সংগঠনগুলো। মিশ্র বক্তব্য শোনা গেলেও আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ‘লোভনীয় পদে’ প্রার্থিতা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে চাকসু নির্বাচনে দুটি প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। এর মধ্যে ছাত্রফ্রন্ট-ছাত্র ইউনিয়নের ‘দ্রোহ পর্ষদ’ ও গণ অধিকার পরিষদের ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জ’। শিবিরসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো এখনও প্যানেল ঘোষণা করেনি। শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে ছাত্রদল।
সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সুপার ফাইভের কারো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ কম। কেন্দ্র থেকে এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে বলে দাবি করছেন দলটির কোনো কোনো নেতা। যদিও শীর্ষ নেতারা বলছেন, এমন কোনো বাধাধরা সিদ্ধান্ত তাদের জানানো হয়নি। এর বাইরেও বড় ছাত্র সংগঠন হিসেবে প্রার্থীর ঘাটতি নেই দলটিতে। সেক্ষেত্রে জোট গঠন করতে হলে অন্য দলগুলোর কাছে কিছু পদ ছাড়তে হবে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় ধরনের অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তারা কেন্দ্রীয় সংসদের সঙ্গে বৈঠকে রয়েছেন বলে জানান। ফলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জোট গঠন প্রসঙ্গে ছাত্রদলের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিভিন্ন কারণে চাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)। ডাকসু ও জাকসুতে ভরাডুবির পর মনোবল হারার কারণে তারা প্যানেল দিচ্ছে না বলে মনে করছেন অন্যরা। তবে স্বতন্ত্রভাবে কিছু নেতাকর্মী মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছেন। জানতে চাইলে বাগছাসের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-মুখপাত্র নওশীন তাবাসসুম যূথী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের সংগঠনের সিনিয়র নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে অনিচ্ছুক। এজন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো প্যানেল দেওয়া হচ্ছে না। এটা সেন্ট্রাল ও চবি বাগছাসের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। তবে অনেকেই স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। চাইলে তারা অন্য কোনো প্যানেলে যেতে পারে।
জোটের বিষয়ে সবচেয়ে আগ্রহী দেখা গেছে ছাত্র অধিকার পরিষদকে। তবে শুধু শিবিরবিরোধী জোট নয়, শিবির চাইলে তাদের সঙ্গেও জোট করতে পারে সংগঠনটি। ছাত্র অধিকার পরিষদের চবি শাখার সদস্য সচিব রোমান রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের আলাদা প্যানেল হচ্ছে। নাম ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জ’। আমরা কালকে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থী ও প্যানেল পরিচিতি করব।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের বৃহত্তর স্বার্থে যদি কোনো জোট হয়, তাহলে আমরা যেতে প্রস্তুত আছি। এই আলোচনা সবার সঙ্গেই হচ্ছে। আমরা ছাত্রদল, শিবিরসহ সবার সঙ্গে বসেছি। সার্বিক দিক চিন্তা করে, কয়েকটি সংগঠন মিলে যদি একটা স্ট্রং প্যানেল দিতে পারে, তাহলে জয়ী হওয়ার চান্স থাকবে অনেক। এক্ষেত্রে পদে যদি সমঝোতা হয়, তাহলে আমরা জোটে যেতে পারি।
অপরদিকে বহিষ্কৃত বাগছাস নেতা আর এম রাশিদুল হক দিনারের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র আরেকটি প্যানেল ঘোষণা হতে পারে আগামীকাল। কোনো জোট হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে এই আর এম রাশিদুল হক দিনার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা ফ্লেক্সিবল থাকব, তবে আসলে জোট হবে না। যদিও সব সংগঠনের সাথেই আমাদের মোটামুটি আলাপ হয়েছে। কিন্তু জোট হওয়ার কোনো চান্স নাই।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সর্বমোট ১ হাজার ৬৩ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য মনোনয়ন নিয়েছেন ৪৭৪ জন ও হল সংসদের জন্য নিয়েছেন ৫৮৯ জন।