
২০২৪ সালে বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের পর পর সিরিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক খুনী বাশার আল আসাদ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এক মাসের মাথায় আসাদের আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়।
২০১১ সালে তিউনিশিয়ান গণঅভ্যুত্থানে (আরব বসন্ত) সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়া যাইন আল আবেদিন বেন আলীর পার্টি র্যালি ফর কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেসি (আরসিডি) সে পালিয়ে যাওয়ার ২৩ দিনের মাথায় সাস্পেন্ডেড হয়, এবং ৫৪ দিনের মাথায় সম্পূর্ন নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। দলের নামে ডেমোক্রেসি থাকার পরেও কেউ প্রশ্ন তুলে নাই কেন বেন আলীর পার্টি রাজনীতি করতে পারবে না।
একই সময়ে (২০১১) আরব বসন্তের আন্দোলনে পালিয়ে যায় মিশরের হোসনি মোবারক। পালিয়ে যাওয়ার দুই মাস পাঁচ দিনের মাথায় তার দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) আদালতের রায়ের মাধ্যমে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এগেইন, দলের নামের ডেমোক্রেটিক হওয়া দিয়ে কিছু যায় আসে নাই। সব স্বৈরাচাররাই ফর সাম রিজন নিজেদের ডেমোক্রেটিক বলতে ভালোবাসে।
২০১১ সালে "গৃহযুদ্ধে" গাদ্দাফির পতনের পর তার দল রেভ্যুলেশনারি কমিটিজ মুভমেন্ট নিষিদ্ধ হয়ে যায় সাত মাসের মাথায়। এমনকি গাদ্দাফি-পন্থী রাজনীতিকেও নিষিদ্ধ করা হয়।
২০১৪ সালে ইউরোমাইডান বিপ্লবের মাধ্যমে উৎখাত হওয়া ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পার্টি- কমিউনিস্ট পার্টি অব ইউক্রেনের প্রতিক ও আদর্শ নিষিদ্ধ হয়, এবং পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে পার্টি নিষিদ্ধ হয়।
একইভাবে ১৯৭৪ সালে গ্রিসে, পর্তুগালে বিপ্লবের পর স্বৈরশাসকদের পার্টি বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। ১৯৮৯ সালে রোমানিয়ায় বিলুপ্ত হয় দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছরের স্বৈরশাসক নিকোলাই চাউশেস্কুর দল রোমানিয়ান কমিউনিস্ট পার্টিও। পরবর্তীতে বিচার করে সস্ত্রীক মৃত্যুদন্ডও কার্য্যকর করা হয়।
আর নাজি জার্মানীর কথা তো সবাই জানে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নাৎসি জার্মানির পতনের পর এডলফ হিটলারের নাযি পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। নাৎসি আদর্শ এবং প্রতিকও নিষিদ্ধ করা হয়। নুরেমবার্গ ট্রায়ালে নাৎসি নেতাদের বিচার করা হয় এবং জার্মানিতে ডিনাযিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
দীর্ঘমেয়াদে স্বৈরাচারী শাসন বা জনগণের উপর জুলুম নিপীড়ন চালানোর পরে গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবের মাধ্যমে উৎখাত হওয়া, বিশেষ করে অন্য দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া দলের রাজনীতি পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই শেষ হয়ে যায়। দুনিয়ার ইতিহাস তাই বলে।
১৫ বছরের নিপীড়ন-জুলুম, লুটপাট আর ফ্যাসিবাদী শাসনের পরে পালিয়ে যাওয়া খুনী হাসিনার দল আওয়ামীলীগের রাজনীতি চলতে পারবে কি না এই প্রশ্ন ৫ই আগস্টেই সমাধান হয়ে গেছে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার এক মাসের মাথায়-ই তার দলের রাজনীতি আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করে দেয়া প্রয়োজন ছিলো। দুনিয়ার আর কোথাও এ টালবাহনা দেখা যায় নাই।
ডঃ শিব্বির আহমেদ