
ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে গোলাবর্ষণ চলছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের উরি এবং পুঞ্চে পাকিস্তানি সেনারা গোলাবর্ষণ শুরু করে। এতে ভারী কামান ও গোলা ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ভারতীয় কর্মকর্তা। পাকিস্তানের এ হামলার জবাবে ভারতও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের গোলায় ১৬ ভারতীয় নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
এর আগে শুক্রবার ভারত জানায়, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলায় চালিয়েছে, যা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতে কোনো হামলা চালায়নি।
এদিকে কূটনীতিকে কাজে লাগিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বন্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে পাকিস্তান। কিন্তু কূটনীতি ব্যর্থ হলে ভারতে পাল্টা হামলা চালানো হবে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের এক কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে বুধবার থেকে হটলাইন চালুর পর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বিস্ফোরকবাহী ড্রোন হামলা বেড়ে গেছে। পাকিস্তান সরকারের সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার ভোরে ভারত পাকিস্তানে আরেকটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এদিকে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উভয় দেশের বাসিন্দারা ‘বড় ধরনের মানসিক চাপে’ রয়েছে মর্মে সিএনএন এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে। ভারতের চাকোঠি সেক্টরের একটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মুখতার কুরেশি সিএনএনকে বলেন, ‘সারা রাত গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। আমাদের এলাকা বসবাসের অনুপযোগী। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মানুষ চরম উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে।’ উভয় দেশ একে অন্যের ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিও করছে। তবে কেউ হতাহতের দাবি করেনি।
সংঘাতের মোড় কোন দিকে? : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া ‘অপারেশন সিন্দূর’ নামটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। তবে এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের রাতের আকাশ ক্ষণে ক্ষণে সিঁদুরের মতো লাল হয়ে উঠছে। এই লাল রংটি আবেগের নয়, প্রতিহিংসার, অমানবিকতার, আত্মহননের। কারণ সর্বাত্মক যুদ্ধের ভার এই দুই দেশের কেউই বইতে পারবে না, মনে করেন বেশির ভাগ বিশ্লেষক। কয়েক দশকের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সংঘাত দেখার পর দুই দেশের সীমান্তবর্তী কোটি কোটি মানুষের মতো অনেকেরই মনে এখন একটি প্রশ্ন—এরপর কী ঘটতে পারে?
ভারতের হামলার পর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিলেও পাকিস্তান সীমান্তে গোলাবর্ষণ ছাড়া এখন পর্যন্ত বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারত দাবি করেছে, কাশ্মীরের জম্মু ও উদামপুরে এবং পাঞ্জাবে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ড্রোন পাঠিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। সংঘর্ষের পর দুই পক্ষই নিজেদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ভিত্তিতে বিজয়ী দাবি করেছে। তবে বৈরিতা ঠিকই বাড়ছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে এখন সবাই একটি ভয়ই পাচ্ছে, সেটি হলো নতুন করে কোনো ধরনের সংঘর্ষ হলে তা দুই দেশকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি নিয়ে কাজ করা মার্কিন বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, ‘সবার চোখ এখন পাকিস্তানের দিকে। যদি তারা মুখ রক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভারতের বিমান ধ্বংস করার ঘটনায় নিজেদের বিজয়ী দাবির মাধ্যমে এখানেই ইতি টানে, তবে উত্তেজনা প্রশমনের একটি সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।’ তবে সতর্ক করে দিয়ে এই বিশ্লেষক বলেন, ‘যদি পাকিস্তান পাল্টা হামলার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সব সম্ভাবনাই নস্যাৎ হয়ে যাবে।’
সামরিক কিংবা অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতকে তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী ধরা হয়। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দুই দেশ সর্বাত্মক যুদ্ধে না জড়ালে তাতে ‘অবাক হওয়ার’ কিছু দেখছেন না বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ।
আবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে ঝামেলা চলছে, সেটি হুট করে থেমে যাবে, এমনটি ভাবারও সুযোগ নেই। এই বিরোধ অনেক পুরনো। তবে পাক-ভারত সংঘাতটি যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বৈশ্বিক দ্বন্দ্বের মঞ্চ হয়ে ওঠে, তাহলে ভারত-পাকিস্তানের দেড় শ কোটি জনগণ নতুন সংকটে পড়ে যাবে।
আলোচনায় ‘তথ্যযুদ্ধ’ : আশঙ্কা করা হচ্ছে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের হামলা পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশকে দৃশ্যত এক সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। তবে এই মুহূর্তে শুরু হয়ে গেছে আরেকটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কেতাবি নাম ‘তথ্যযুদ্ধ’। এই তথ্যযুদ্ধের শেষ কোথায়, তা কারো জানা নেই। সূত্র : ডন, এনডিটিভি, বিবিসি, রয়টার্স, এপি