বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির। এবার নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করছে কেন্দ্র। কমিটিতে ‘আওয়ামী কানেকশন’-এর ঘনিষ্ঠজনও রয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের। তাদের দাবি, যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা দলে জায়গা পাননি। এতে ক্ষুব্ধ তারা।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এতে ইদ্রিস মিয়াকে আহ্বায়ক এবং লায়ন হেলাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে আলী আব্বাসকে। আংশিক এই কমিটিতে আরও আছেন লিয়াকত হোসেন ও মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা। তাদের দুজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।
নতুন কমিটির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এবং সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ছিলেন। নতুন কমিটির বাকিদের মধ্যে আলী আব্বাস জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে।
কয়েকজন নেতা কালবেলাকে বলেছেন, এ কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন এমন অনেকেই আওয়ামী কানেকশনে ছিলেন এবং ব্যবসায়িক পার্টনারও রয়েছেন। অনেক ত্যাগী ও যোগ্য নেতার কেউই কমিটিতে নেই। জেলার অনেক নেতা রাজনীতির কারণে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ক্ষুব্ধ রয়েছেন।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে। তখন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ইদ্রিস মিয়া ছিলেন ওই উপজেলার চেয়ারম্যান। তার সখ্য ছিল একই উপজেলার বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিক সাইফুল আলম মাসুদের সঙ্গে। বিগত ১৫ বছর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় না থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন। নিজেকে পরিচয় দিতেন এস আলমের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। ইদ্রিস মিয়ার ভাতিজা সাইফুল ইসলাম সুমন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ব্যবসায়িক অংশীদার।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন চাচার শেল্টারে আত্মগোপনে ছিলেন সুমন। ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা দুর্নীতি মামলার এই আসামি বিদেশ পালানোর সময় গত ৭ জানুয়ারি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ উঠেছে, পটিয়া-আনোয়ারা উপজেলার প্রভাবশালী সুমনের টাকায় আহ্বায়ক হয়েছেন সদ্যঘোষিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া।
একই সঙ্গে সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধেও রয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ। তিনিও সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদার। অর্থ পাচার ও হত্যা মামলার আসামিও তিনি। আলোচিত বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলার আসামি ছিলেন লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা মামলা এবং দলের বিভিন্ন নেতা ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মসাতের মামলা ছিল। হেলাল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে। এ ছাড়া ৫ আগস্ট পরবর্তী আনোয়ারা শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ইদ্রিস মিয়া ও হেলাল উদ্দিনকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।