গত ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় দলটি। কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের অধিকাংশের নামে মামলা, বেশিরভাগ এলাকাছাড়া হওয়ায় তাদের কার্যক্রম হয়ে পড়েছে অনলাইনকেন্দ্রিক। দলটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ, টেলিগ্রাম চ্যানেলসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে নানাবিধ পোস্ট আর ভিডিও বার্তা দিয়ে চাঙ্গা রাখতে চেষ্টা করছেন কর্মীসমর্থকদের। এসব পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫ আগস্টের আগে দলটির বক্তব্য-বিবৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে বিএনপি-জামায়াত ইস্যু থাকলেও এখন সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী প্রচারণা।
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দলীয় প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। এ সময়ে পলাতক বিভিন্ন নেতা অনলাইনে ভিডিও বার্তা আর টকশো করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে গত ২৯ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের দাবিতে ফেব্রুয়ারিতে বড় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিচারের আগে কোনও কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না তাদের।
আওয়ামী লীগের অনলাইনকেন্দ্রিক সক্রিয়তার নজির বেশি দেখা যায় তাদের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে। ভেরিফায়েড ফেসবুকসহ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক দিনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিনিয়তই এসব মাধ্যমে পোস্ট, ফটোকার্ড, ভিডিও, বার্তা আপলোড দেওয়া হচ্ছে। এতে দলের নেতাকর্মী ও গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে নানা নির্দেশনা ও বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা, অগ্নিকাণ্ড, ভাঙচুরের আপডেট দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত অন্তর্বর্তী সরকারের নেতিবাচক এবং আওয়ামী লীগের ইতিবাচক নানা খবরও শেয়ার করা হচ্ছে। এছাড়া মাঝে মধ্যেই দলীয় প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অডিও বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া আত্মগোপনে থাকা বিভিন্ন নেতার মন্তব্য শেয়ার করছে আওয়ামী লীগের পেজ। সম্প্রতি সাংবাদিকদের নিয়ে গত ৫ মাসের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে লিখেছে- “গত ৫ মাসে ৬০০+ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, ৫০+ গণমাধ্যম ও প্রেস অফিসে হামলা হয়েছে, ৬ সাংবাদিক হত্যা, ১৮ সাংবাদিক গ্রেফতার, ১০০+ সাংবাদিক আহত, ১০০০+ সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত/পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, ৯৬ জন সাংবাদিকের বিএফআইইউ কর্তৃক আর্থিক বিবরণী চাওয়া হয়েছে, ১৬৮ জনের প্রেস স্বীকৃতি বাতিল, ১৮ সাংবাদিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ, ৮৩ জনের প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ বাতিল, বেশির ভাগ মিডিয়া হাউজের মালিকানা জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে।”
এছাড়া নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া নিয়ে অনলাইনে সরব আওয়ামী লীগ। প্রতিদিনই এ নিয়ে নানান পোস্ট করা হচ্ছে দলটির পেইজে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বিষয়ে এক পোস্টে দাবি করা হয়, সংস্কারের নামে চলছে র্যাব-পুলিশের বেআইনি আগ্রাসন। ‘অবৈধ’ সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন জেলায় মামলা ছাড়া ও মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে আটক হয়েছেন, সংস্কারের নামে গণগ্রেফতারের এসব প্রহসন ও আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
এসব ছাড়াও আন্দোলনে আহতদের নানান আক্ষেপের ভিডিও শেয়ার করছে তাদের পেজ। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি, সরকারের ওপর চাপ, সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে ফেরা বিষয়েও নানান তথ্য জানানো হচ্ছে পেইজে। এছাড়া আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক বিভিন্ন টকশো সরাসরি প্রচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে পেজ থেকে। গত ২৮ জানুয়ারি “জুলাই জুলুমের সংকট, প্রতিরোধের পথ” শীর্ষক একটি টকশো প্রচারিত হয়। সেখানে অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী রোকেয়া প্রাচী এবং সমাজকর্মী ও প্রগতিশীল অ্যাক্টিভিস্ট আফসানা কিশোয়ার। এ রকম আরও একটি আলোচনায় যুক্ত ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। নেতাকর্মীদেরও সরাসরি আলোচনায় নিয়ে আসার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এজন্য তারা নেতাকর্মীদের ই-মেইলে যোগাযোগের আহ্বান জানিয়েছে। সেখানে কথা বলছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ তৃণমূল পর্যায়ের অনেক কর্মীও। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ডে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে অনলাইন ব্যবহার করেই বক্তব্য রেখেছেন।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটি দলের প্রথম আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি। আওয়ামী লীগের পেজে কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলা হয়, অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকারের অপশাসন-নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদ, দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূসের পদত্যাগ দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ কর্মসূচি এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতাল।