Image description

দেশের বাজারে নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর দেড় মাসের বেশি সময় পরও বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট কাটেনি। বরং বর্তমানে উল্টো নতুন করে বাজারে খোলা সয়াবিন তেলেরও সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা সয়াবিন তেলের সংকট বাজারব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সরকারি নজরদারির অভাবের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে।

রান্নার অপরিহার্য এই উপকরণটি নিয়ে বাজারে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, তা সরবরাহ চক্রের নানা অসংগতি ও অপ্রতুল মনিটরিংয়ের কারণে সম্ভব হয়েছে। মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে, নইলে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব দীর্ঘস্থায়ী হবে।

জানা গেছে, সয়াবিন তেলের দাম আবারও বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। গত ৯ ডিসেম্বর লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পর সম্প্রতি আবারও দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোয় এখনো চড়া চাল ও মুরগির দাম। তবে কিছুটা স্বস্তি সবজির দামে। ক্রেতার নাগালের মধ্যেই রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, জোয়ারসাহারা ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সঙ্গে খোলা সয়াবিন তেলেরও কৃত্রিম সংকট চলছে।

বাজারে বোতলজাত পাঁচ লিটারের তেলের সরবরাহ কিছুটা থাকলেও এক ও দুই লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। হাতে গোনা দু-একটি দোকানে দুই লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম রাখা হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের চেয়েও বাড়তি দরে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হতে দেখা গেছে। খোলা সয়াবিন তেল কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় এবং লিটারে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। এতে বাজারে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতাসাধারণ। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আরো বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে কম্পানিগুলো, যার কারণে তারা বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।

রাজধানীর রামপুরা বাজারের মেসার্স মহিউদ্দিন এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পর আমরা খুব আশায় ছিলাম, এখন থেকে বাজারে তেল পেতে সমস্যা হবে না। কিন্তু দাম বাড়ানোর পরও বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়ায়নি কম্পানিগুলো। গত দুই মাস ধরেই বাজারে তেলের এই সংকট চলছে।

তিনি বলেন, দু-একজন ডিলার তেল দিতে চাইলেও শর্ত দিচ্ছেন তেলের সঙ্গে লবণ, পোলাও চালের বস্তা ও ডাল কিনতে হবে। যে কারণে ডিলারদের এই শর্তে তেল নিতে চাচ্ছেন না অনেক দোকানদার। এতে ক্রেতারা বাজার ঘুরেও তেল কিনতে পারছেন না।

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মুদি দোকানের ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ডিলারদের সঙ্গে রাগারাগি করেও তেল আনতে পারছি না। ক্রেতারা দোকানে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। পাঁচ লিটারের এক কার্টন (চার বোতল) সয়াবিন তেল দিতে চাইলেন রূপচাঁদা কম্পানির ডিলার। কিন্তু তাঁদের শর্ত হচ্ছেএক কার্টন তেলের সঙ্গে ৫০ কেজির পোলাও চালের বস্তা নিতে হবে। না হলে তাঁরা তেল দিতে পারবেন না। ২০ টাকা লাভের জন্য ছয় হাজার টাকার পোলাও চালের বস্তা নিইনি।

তিনি বলেন, এত দিন বোতলজাত সয়াবিন তেল না পেলেও আমরা খোলা তেল বিক্রি করতে পেরেছি। কিন্তু এখন কম্পানিগুলো খোলা তেলের সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছেন।

কারওয়ান বাজারের মেঘনা গ্রুপের পণ্য ফ্রেশ তেলের ডিলার বিপ্লব চন্দ্র পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, কম্পানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, যার কারণে আমরা চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছি না। তাই দোকানদারদেরও তেল দেওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কম্পানিগুলো নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আশা করছি নতুন দাম কার্যকর হলে তেলের সরবরাহ বাড়বে।

সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম আট টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর খোলা প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। খোলা পাম তেলও লিটার ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ করা হয়। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা। ভোক্তাদের প্রত্যাশা ছিল, দাম বাড়ানোর পর সংকট কেটে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। সয়াবিন তেলের সংকট এখনো কাটেনি। বিশেষ করে বাজারে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ নেই বললেই চলে।

সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বোতলজাত তেল কেটে ড্রামে ভরে খোলা তেলের দামে বিক্রি করছেন। এতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম গুনতে হচ্ছে। বাজারে সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত এবং স্বচ্ছতা আনতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন ভোক্তারা।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন মানভেদে কেজি ৪০ থেকে ৬০, শীতকালীন সবজি শিম মানভেদে প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৫০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২৫ থেকে ৩০, পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৪০, কাঁচামরিচ কেজি ৬০ থেকে ৮০, চিচিঙ্গা কেজি ৫০, লম্বা লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০, শসা ৪০ থেকে ৫০, মিষ্টিকুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০, গাজর মানভেদে ৪০ থেকে ৬০, মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু প্রতিকেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং মিষ্টি আলু কেজি মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ মানভেদে ৫০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রসুন এখনো আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। দেশি ও আমদানি করা রসুন কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি মানভেদে কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিমের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।