Image description

বিএনপি চেয়ারপারসন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতিতে যুক্ত হন খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আড়াই বছরের মধ্যে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। সেই দায়িত্বের ৪১ বছর পূর্ণ হয়েছে গত মে মাসে। দীর্ঘ সময়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি তিন বার বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেছেন তিনি।

বিএনপির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নেন। ১৯৮৩ সালের মার্চে তিনি দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন। এরপর ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন মনোনীত হন। একই বছরের ১০ মে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।

সেই থেকে ৪১ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বেগম খালেদা জিয়া। এর মধ্যে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে যথাক্রমে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে কখনো কোনো নির্বাচনে হারেননি।
 
১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান হন। নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখার জন্য ২০০৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ২৯ নম্বরে ছিলেন খালেদা জিয়া।
 
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময় আসে বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে। ওই সরকারের আমলে দুটি মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি রাখার পর ২০২০ সালে মার্চে করোনা মহামারির সময় তৎকালীন সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেন। এরপর ছয় মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজা স্থগিত করে সরকার তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়।
 
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের (২০২৪ সালর ৫ আগস্ট) পরদিন নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন খালেদা জিয়া। ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান ও চিকিৎসা শেষে গত ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি। এরপর একাধিকবার শারীরিক নানা জটিলতায় তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয়
 
১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয় আপসহীন নেত্রীর উপাধি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন।
 
গত প্রায় চার দশক ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনে খালেদা জিয়া অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন; যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে কখনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনটি সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রতিবারই ৫টি আসনে প্রার্থী ছিলেন। সবগুলো আসনে তিনি জয়লাভ করেছেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতে জয়ী হন।
 
এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। আর দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনও বয়কট করে বিএনপি। অর্থাৎ ২০১৪ সাল থেকে নির্বাচনের বাইরে ছিলেন খালেদা জিয়া। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তার ৩টি আসন থেকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
 
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হন খালেদা জিয়া।