বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে আসা সাবেক এমপি গোলাম রব্বানী এবার নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনে খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থী। তাঁর প্রচারণা নিয়ে এলাকায় মুখরোচক আলোচনা চলছে।
গোলাম রব্বানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে এমপি হন। ২০০৬ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দল থেকে মনোনয়ন পান– যদিও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০০৯ সালে আবার উপজেলা চেয়ারম্যান হন। ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ফের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ২০২৪ সালে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জামানত হারান। আবারও দলবদল করে এবার খেলাফত মজলিসের রিকশা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। দল পরিবর্তনের ব্যাপারে গোলাম রব্বানী বলেন, ‘পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে এসব করতে হয়েছে। আমি এলাকার মানুষের সেবা করতে চাই।’
সীমান্তবর্তী এলাকার এই আসনটি সমতল, পাহাড় ও আংশিক হাওর এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এর আগেও তিনি দুইবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানা জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কায়সার কামাল বলেন, ‘আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। তাই জনকল্যাণমূলক কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
এ ছাড়া এই আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কলমাকান্দা উপজেলা আমির মাওলানা আবুল হাশিম। এখানে সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডাক্তার দিবালোক সিংহ এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য খাইরুল বাশার।
জেলায় পাঁচটি সংসদীয় আসনে নারী ভোটার ১০ লাখ সাত হাজার ৪৬৯, পুরুষ ১০ লাখ ৩৭ হাজার ২২২ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪০। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসনগুলোতে বিএনপি,
জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নিয়মিত গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা করে চলেছেন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও
তাদের সমর্থক ভোটারদের কাছে টানতে চেষ্টা করছে অন্য দলগুলো। জাতীয় পার্টি এখনও নিষ্ক্রিয়। বামপন্থি দলগুলোর মধ্যে সিপিবি বিভিন্ন স্থানে প্রচার চালাচ্ছে।
নেত্রকোনা-২
জেলা সদরের আসনটিতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলার সভাপতি ডা. মো. আনোয়ারুল হক। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আনোয়ারুল হকের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেও এ টি এম আবদুল বারী ড্যানি এখনও মনোনয়ন পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আমি চেষ্টা করে যাব।’
আনোয়ারুল হক বলেন, ‘মনোনয়নের আগে থেকেই আমি এলাকায় সক্রিয়। শুধু রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, চিকিৎসক হিসেবেও মানুষের পাশে থেকেছি।’
এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা এনামুল হক। তিনি জেলা জামায়াতের সাবেক আমির। এ ছাড়া এনসিপি থেকে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান, গণঅধিকার পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, ইসলামী আন্দোলনের আবদুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী মোহাম্মদ আবদুর রহিম রুহীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা-৩
আসনটিতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডক্টর মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে। সাবেক ছাত্রনেতা হিলালী আগেও একাধিকবার বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছেন। তিনি বলেন, ‘দলের দুর্দিনে আমি জেলা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন ছাড়াও নিজ নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি।’
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী নেত্রকোনা জেলা কমিটির শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য খায়রুল কবির নিয়োগী। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে আটপাড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ শামছুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে জাকির হোসেন সুলতানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী শামীম।
নেত্রকোনা-৪
হাওরবেষ্টিত তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর মনোনয়ন পেয়েছেন। আসনটি থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য হন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৭ সাল থেকে তিনি কারাবন্দি ছিলেন। গত জানুয়ারিতে কারামুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। অতীতে এলাকার উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করেছি।’
এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আল হেলাল তালুকদারও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে মদন উপজেলার আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, ইসলামী আন্দোলনের মুখলেছুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জলি তালুকদার।
নেত্রকোনা-৫
একটি উপজেলা নিয়ে এই আসন। আসনটিতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু তাহের তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমি ফ্যাসিস্ট আমলেও দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলাম। মামলা-হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছি। এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জেলা কমিটির সহকারী সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাসুম মোস্তফা। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি হাবিবুল্লাহ খানকে।