Image description
প্রায় ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জ্বনাব তারেক রহমানের দেশে ফেরা বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক গুরুত্বপূর্ণ মোমেন্ট। তিনি মজলুম। তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। স্বদেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তাঁর যেকোনো বক্তব্য, বিবৃতি মিডিয়ায় প্রচার করার ক্ষেত্রেও ছিলো নিষেধাজ্ঞা। হাসিনা তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় কটুক্তি করতো কয়েকদিন পর পর। এমনকি সংসদে দাঁড়িয়েও নানাভাবে আক্রমণাত্মক বাক্য উচ্চারণ করতো। 'সাহস থাকলে দেশে আয় ব্যাটা' তারেক রহমানকে ঘিরে এ ধরনের ঘৃণিত বক্তব্যও দিতো হাসিনা। হাসিনার আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে মাইনাস করার অপচেষ্টা করা হয়েছে তাঁকে।
নানামুখী সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে আগামীকাল দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা ব্যারিষ্টার জাইমা রহমান, পোষা বিড়াল জেবুও আসছেন সঙ্গে। এ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাই। এই প্রত্যাবর্তনকে কেবল একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার ঘরে ফেরা হিসেবে দেখছিনা। বরং বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
বিএনপির জন্য মহা গুরুত্বপূর্ণ তাঁর এ আগমন। এর পাশাপাশি দেশের সংকটময় মুহূর্তে এ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে দেশীয় রাজনীতিতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সিসুয়েশন তৈরী হতে পারে। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও দারুণ প্রভাব রাখবে এটি। এতোদিন তিনি ফিল্ড বাস্তবতা নিজ চোখে দেখতেন না। তাঁর দলের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা বা কোন্দলের কারণে অহেতুক মানুষ খুন, চাঁদাবাজিসহ নানান অরাজকতার সৃষ্টি হওয়া এখন থেকে খুব কাছ থেকেই দেখতে পারবেন তিনি। সেক্ষেত্রে দলকে সেন্টার টু গ্রাসরুট পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে স্ট্রিক্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সুযোগ পাবেন। দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর দেশে থাকাটা খুবই জরুরী।
সেইসাথে তিনি দলের সিনিয়র নেতাদেরকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন— যারা লাগামহীন কথা বলে, তারুণ্যের পালস না বুজে রাজনীতি করতে চায়। মুটামুটি বিএনপির রাজনীতিতে তারেক রহমানের আগমনে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি আশাবাদী।
জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রেও জ্বনাব তারেক রহমান বাড়তি মনোযোগ দিবেন বলে ধারণা করি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতির গতিপথে পরিবর্তন এসেছে। সব দল ও মতকে সম্মান জানিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতির বিপরীতে তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক রাজনীতির পথকে বেছে নিবেন বলে আশা রাখি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করার মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্খাকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঠিক করবেন। এটাই প্রত্যাশা।
দীর্ঘ সময় ভার্চুয়ালি যাকে দেখা গেছে, তাকে সরাসরি পাশে পাওয়া বিএনপির নির্বাচনি যাত্রায় নতুন এক সম্ভাবনার মাত্রা যোগ করবে। দলীয় নেতাকর্মীদেরকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করবে।
তাঁর এই আগমন পজিটিভ এবং ইম্প্যাক্টফুল। তবে চ্যালেঞ্জও অনেক। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ডিপ স্টেটকে মোকাবেলা করা, জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা সহ নানামুখী চ্যালেঞ্জ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে।
এদিকে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় লিপ্ত। এটাও একটা চ্যালেঞ্জ। এটাকেও ওভারকাম করা লাগবে। নির্বাচনের পর আরও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। যে দলই ক্ষমতায় আসে, জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে পাঁচ বছর টিকে থাকা কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তারেক রহমানকেই।
রাষ্ট্র মেরামতের জন্য তিনি ‘৩১ দফা’ রূপরেখা তুলে ধরেছেন। এ '৩১ দফা'কে নির্বাচনকালীন জনগণের কাছে পৌঁছানো মানে একেবারে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষকে এটার সাথে পরিচিত করাটাও চ্যালেঞ্জিং। যদিও স্থানীয় নেতারা এটা নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছেন। তবে, এ '৩১ দফা' আসলে কি, কি আছে এখানে জনগণ সেটার ক্লিয়ার ধারণা পাচ্ছে কিনা— সেটাও আলোচনার দাবি রাখে। যারা '৩১ দফা'র লিফলেট নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছেন, বা যাদেরকে তারেক রহমান এ দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের অনেকেই হয়তো এটা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখেন না বা এটা অধ্যায়ন করেন নি— এমনও হতে পারে। সর্বোপরি এ '৩১ দফা' তো জনগণের জন্যই দেওয়া হয়েছে। জনগণকে এটার সাথে কানেক্টেড করতে না পারলে তেমন কোনো ইম্প্যাক্ট রাখবে বলে মনে করিনা এ দফাগুলো। '৩১ দফা'র সাথে জনগণকে পরিচিত করার দায়িত্বও তারেক রহমানকেই নিতে হতে পারে। সেটার জন্য তিনি ইউনিক কিছু পন্থাও অবলম্বন করবেন সম্ভবত।
দেশে এসেই জনগণের কাছে তাঁর আসা যাওয়া বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে তিনি তাঁর পিতা-মাতার পথকেই অনুসরণ করে পথচলা শুরু করবেন বলে আশা রাখি।
সর্বশেষ প্রত্যাশা এটাই— তিনি জনগণের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে, তরুণদের চাওয়া পাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইতিবাচক রাজনীতি করার মাধ্যমে একটি তারুণ্যদীপ্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক এবং সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সবসময় আন্তরিক থাকবেন। তাঁর সামনে সুযোগ অনেক। কতটুকু কাজে লাগাতে পারেন, দেখা যাক।
 
-Asaduzzaman Jahid