Image description

সিলেট-২ আসনে ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। আবেগের নাম এখন লুনা। ইলিয়াস আলী নেই, তার অবর্তমানে লুনাই ধরেছিলেন এ আসনের বিএনপি’র হাল। এখনো তিনি আসনের একক নেত্রী। তাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে বিএনপি’র রাজনীতি। ভোটের মাঠে সেই ইলিয়াসের প্রভাব। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইলিয়াস আলীর পরাজয় ছিল অঘটন। মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরেছিলেন। এরপর আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। ২০১২ সালে গুম হয়ে যান। ২০১৮ সালে লুনা নির্বাচনের মাঠে নেমেছিলেন। তাকে নিয়ে শাসক পক্ষের নানা নাটকীয়তা। বারবারই মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। দাঁড়ালেই পাস। এমন পরিস্থিতিতে তাকে নিয়ে কাঁপন ধরে শাসক দল আওয়ামী লীগের শরিক প্রার্থীদের। তবে ওই বছর ইলিয়াসের নাম ধরে মাঠে নামা গণফোরাম প্রার্থী মোকাব্বির খান এমপি হতে পেরেছিলেন। লুনাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হয়। সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) লুনার অবস্থান সুসংহত। বলা হচ্ছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। ভোটের পরিবেশও তাই। ইতিমধ্যে বিএনপি’র তরফ থেকে বহিষ্কৃতদের দলে ফেরানো হয়েছে। আরও শক্তি বেড়েছে বিএনপি’র। দলে ফেরত আসা নেতাদের বেশির ভাগই ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। যারা এখনো নিশ্চুপ রয়েছেন তারা মাঠে নামা সময়ের ব্যাপার মাত্র। লুনার এই সুসংহত অবস্থানে বসে নেই ভোটের মাঠে থাকা প্রতিপক্ষরা। তারাও পথ খুঁজছেন। 

আন্দোলনের ৮ দল থেকে একক প্রার্থী দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেটি নিয়ে এখন চলছে চূড়ান্ত দেন-দরবার। আর এই দেন-দরবার এসে ঠেকেছে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ মুনতাসির আলী ও সিলেট জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নানে। দু’জনই ভোটের মাঠে পরিচিত মুখ। ইলিয়াস জমানা থেকে তারা এ আসনের ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তাদের দু’জন থেকে যেকোনো একজন এ আসনে ৮ দলের সমর্থন নিয়ে মাঠে নামছেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ভাগ্য প্রসন্ন হবে কার? সেটি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ৮ দলের নেতারা জানিয়েছেন- এ আসনে একক প্রার্থী বাছাইয়ে ঢাকায় এখন একের পর এক বৈঠক চলছে। এসব বৈঠকে সব হিসাবনিকাশ নিয়ে বসা হচ্ছে। চলছে আলোচনা। পাশের প্রার্থীকেই সমর্থন দিতে তারা সবাই একমত হচ্ছেন। সিলেট-২ আসনে কে লড়াই করতে পারবেন?  খেলাফতের মুনতাসির আলী। পরিচিত মুখ। ২০০১ সাল থেকে ভোটের মাঠে সক্রিয়। ইলিয়াস আলীর সম-সাময়িক যুগের নেতা। সাবেক ছাত্রনেতাও। এ আসনে খেলাফত মজলিসের ভোট ব্যাংককে শক্তিশালী ভাবা হচ্ছে। কওমি ও আলীয়া মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ভোটে মুনতাসির আলীর দাপট একচেটিয়া। দুই উপজেলায় মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ভোটের সঠিক সংখ্যা নেই। তবে সেটি পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি হতে পারে। আর এই ভোট ব্যাংককে পুঁজি করে মুনতাসির আলী ভোটের মাঠে নামেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই ভোটের কারণেই তিনি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতেই দেয়া হয়নি মাঠে। ভোটের দিন বিকালে নীরবেই ছাড়েন মাঠ। 

এবারের নির্বাচন তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জের। ইতিমধ্যে ভোটের মাঠ সাজিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় এ আসনটি চায় খেলাফত মজলিস। খেলাফত মজলিসের নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট জেলায় যদি দু’টি আসনই চায় খেলাফত মজলিস তবে সিলেট-২ আসনটি থাকবে অগ্রাধিকার। কারণ দলের সংগঠক হিসেবে তাকে ঘিরেই পরিচালিত হচ্ছে সিলেটে খেলাফত মজলিসের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিগত বন্যাসহ নানা দুঃসময়ে তিনি মানুষের কাছাকাছি ছিলেন। অন্যদিকে জামায়াত নেতা অধ্যাপক আব্দুল হান্নানও ভোটের মাঠের পরিচিত নেতা। এ আসনে যখন জামায়াতের ভোট ছিল হাতেগোনা তখন থেকেই ভোটের মাঠে রয়েছেন আব্দুল হান্নান। খুবই কম ভোট পান। তবু দলের স্বার্থে তিনি হেঁটে বেড়ান আসনের প্রতিটি এলাকা। এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। প্রতিটি এলাকায় জামায়াতের কর্মী-সমর্থক বেড়েছে। তবে অবস্থান নেয়ার মতো নয়। এই ভোটকে পুঁজি করে তিনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। লুনার পর এ আসনে প্রচারণায় যে প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন তিনি হচ্ছেন আব্দুল হান্নান। তবে ভোটাররা বলছেন; আসনটি এখনো জামায়াতের জন্য কঠিন। এ আসনের বেশির ভাগ ভোটার এখনো জামায়াতবিরোধী। ফলে আলোচনায় আসা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে আসনটিতে নতুন করে মাঠে নামছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহবুবুর রহমান। তিনি সিলেট-১ আসনেও আগে প্রার্থী হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান এবারো এসে নামছেন ভোটের মাঠে। জাতীয় পার্টি দলীয় ফোরামে তিনি প্রার্থী হওয়ার আবেদন করেছেন। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মকসুদ ইবনে আজিজ লামা ও ইয়াহহিয়া চৌধুরী। দু’জনের কাউকেই এবার ভোটের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী প্রার্থী দিলে এ আসনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন নেতারা। এ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাড়ি। তারা বর্তমানে লন্ডনে নির্বাসিত থাকলেও এ আসনের ভোটে তাদের আধিক্য রয়েছে।