ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) তাঁর মৃত্যুর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা তীব্র নিন্দা, গভীর শোক এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নেরও শপথ নিয়েছেন অনেকে।
তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাইলেন তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ফেসবুক পোস্টে শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে ‘মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হাদি ছিলেন এক সাহসী রাজনৈতিক কর্মী এবং নির্ভীক কণ্ঠস্বর, যিনি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন। তাঁর এই অকাল শহীদি মৃত্যু আবারও মনে করিয়ে দিল- রাজনৈতিক সহিংসতা কত বড় মানবিক মূল্য দাবি করে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পর হাদির ভূমিকার প্রশংসা করে তারেক রহমান বলেন, ‘ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে তিনি জুলাইয়ের যোদ্ধাদের অধিকার রক্ষা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধরে রাখা এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন।’ তারেক রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার, শাস্তি এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আপসহীন ছিলেন হাদি: জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক শোকবার্তায় ওসমান হাদিকে ‘একজন সাহসী জুলাই যোদ্ধা ও সাচ্চা দেশপ্রেমিক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘তিনি অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। তাঁর কণ্ঠ ছিল সকল আধিপত্যবাদী শক্তি ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন আপসহীন এক যোদ্ধা।’ ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তাঁর শাহাদাতে জাতি একজন নির্ভীক কণ্ঠস্বর ও আদর্শবাদী যোদ্ধাকে হারাল। তাঁর শাহাদাতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হল, তা সহজে পূরণ হবার নয়। তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর নতুন প্রজন্মকে ধারণ করতে হবে এবং দল-মত নির্বিশেষে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে।’
স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ এনসিপির, মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা নাহিদ ইসলামের
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের সহযোদ্ধা এবং গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যতম সদস্য শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় বলা হয়, ‘আমাদের এই সহযোদ্ধার মৃত্যুতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
দলের শোকবার্তার পাশাপাশি এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক আবেগঘন ফেসবুক পোস্টে ওসমান হাদির মৃত্যুকে ‘শহীদি মৃত্যু’ উল্লেখ করে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘আমার ভাই, জুলাই বিপ্লবের অন্যতম কাণ্ডারি ওসমান হাদি হাসতে হাসতে শহীদি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’
নাহিদ ইসলাম প্রতিজ্ঞা করে বলেন, ‘ভাই হাদি, আপনার পবিত্র রক্তের কসম, যে মহান ইনসাফের স্বপ্ন নিয়ে আপনি জীবন দিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়ব না।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ওসমান হাদির এই আত্মত্যাগ জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশের লাখো মানুষের কাছে অনন্ত সাহসের মহাকাব্য এবং ত্যাগের সর্বোচ্চ অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
হত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি চরমোনাই পীরের
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম ওসমান হাদিকে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী তরুণ বিপ্লবী’ ও ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অগ্রসেনানী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ওসমান হাদির হত্যাকারী, নির্দেশদাতা ও চক্রান্তকারীকে সরকারের সকল শক্তি নিয়োজিত করে হলেও শাস্তির আওতায় আনতেই হবে।’ তিনি হাদির অসমাপ্ত স্বপ্ন ও সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আধিপত্যবাদের দালালদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।’