আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পটুয়াখালীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। দলটির মনোনীত পটুয়াখালী-১ আসনের প্রার্থী মুফতি হাবিবুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাহার করে পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
তবে পটুয়াখালী-৪ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করায় দলীয়ভাবে সেখানে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না মুফতি হাবিবুর রহমান। ফলে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি কোনো রাজনৈতিক দল বা প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন—সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি।
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ ও ব্যক্তিগত সংকটের কথা তুলে ধরেন। তার দাবি, অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্য আসনে মনোনয়ন পাওয়ার ঘটনায় মানসিক ও শারীরিক চাপের কারণে তিনি সম্প্রতি স্ট্রোকে করেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণে, এই বক্তব্য কেবল ব্যক্তিগত আবেগের প্রকাশ নয়; বরং দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, কেন্দ্রীয় চাপ এবং স্থানীয় নেতারা মধ্যে বিরাজমান টানাপড়েনের ইঙ্গিত বহন করে।
সংবাদ সম্মেলনে কলাপাড়া উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের অব্যাহতি পাওয়া তিন নেতার প্রকাশ্য উপস্থিতি রাজনৈতিকভাবে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। এতে দলীয় অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও পুনর্বিন্যাসের সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পটুয়াখালী-১ আসন থেকে ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়ন প্রত্যাহার দলটির সাংগঠনিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে। অন্যদিকে, পটুয়াখালী-৪ আসনে মুফতি হাবিবুর রহমানের সক্রিয় উপস্থিতি সেখানে নতুন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করবে—বিশেষত যদি তিনি কোনো বড় বা প্রভাবশালী রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে যুক্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে একই দিন বিকেলে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন করেন মুফতি হাবিবুর রহমান। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি ছিল তার মাঠপর্যায়ের সমর্থন এবং শক্ত অবস্থান জানান দেওয়ার একটি সুসংহত বার্তা।
নিজ বক্তব্যে তিনি চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং বিলাসী জীবনযাপন পরিহারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এ ধরনের নৈতিক বয়ান রাজনীতিতে পরিচিত, তবে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে এর বাস্তব প্রভাব এখনো অনিশ্চিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, মুফতি হাবিবুর রহমানের আসন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পটুয়াখালী-১ ও পটুয়াখালী-৪—উভয় আসনের রাজনৈতিক সমীকরণকে জটিল করে তুলেছে। তার চূড়ান্ত রাজনৈতিক পরিচয়, জোটগত অবস্থান এবং মাঠপর্যায়ের সংগঠনিক শক্তির ওপরই নির্বাচনের ফলাফলে এর প্রভাব নির্ভর করবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে পটুয়াখালী-৪ আসনে মোট ৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন বিএনপি মনোনীত দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আব্দুল কাইউম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মুফতি মো. ওমর ফারুক শরীফ, স্বতন্ত্র/সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থী মুফতি হাবিবুর রহমান। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থিতার বিষয়েও আলোচনা চলছে, যদিও নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি।