দেড় সপ্তাহ ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাটছেই না।
হাসপাতালের সামনে প্রতিদিনই বাড়ছে ভিড়। বিএনপির বাইরেও বিভিন্ন দলের নেতারা তার প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছেন, নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন। অনেকে সশরীরে হাসপাতালে গিয়ে তাকে দেখে এসেছেন।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) তাকে দেখতে গিয়েছিলেন তিন বাহিনীর প্রধান। সর্বশেষ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ইতোমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডকে সহযোগিতা করতে বুধবার সকালে যুক্তরাজ্য থেকে আসা মেডিক্যাল টিম যুক্ত হয়েছে। রাতে চীন আসছে আরেকটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।
এরই মধ্যে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে—পরীক্ষামূলকভাবে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এভারকেয়ারের পাশের মাঠে সেনা ও বিমানবাহিনীর দুটি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করবে। এতে যেন কেউ বিভ্রান্ত না হন।
সব মিলিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিস্থিতি জানতে দেশবাসীর দৃষ্টি এখন এভারকেয়ারের দিকে।
হাসপাতালের সামনে আবারও বাড়ছে ভিড়
রাতেও এভারকেয়ারের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়
দলের কড়াকড়ি নির্দেশনার কারণে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) হাসপাতালের সামনে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড় কিছুটা কম ছিল। তবে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) আবারও উপস্থিতি বাড়ছে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের বিস্তৃতি রাস্তার দুই পাশে ছড়িয়েছে। অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে ও বসে রয়েছেন। দলের দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতারা বারবার সরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও কেউ কারও কথা শুনছেন না। এতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নেতারা। সেখানে আগত ভাটারা থানা মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী বলেন, দলীয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নেত্রীর প্রতি ভালোবাসার টানে বারবার ছুটে আসছেন তারা।
দেড় সপ্তাহে গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম
গত ২৩ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে গত ১১ দিন দেশবাসীর উদ্বেগ কাটছেই না। সবাই শুধু তার শারীরিক পরিস্থিতির খবর জানতে চান। দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলো সংবাদের প্রধান শিরোনাম করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে। বিএনপি বিটের বেশিরভাগ গণমাধ্যমকর্মীর কাটছে নির্ঘুম রাত। মেডিক্যাল টিম নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ব্রিফ না করলেও সাংবাদিকরা হাসপাতালের সামনে থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঠিকই আপডেট দিচ্ছেন। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিদেশি গণমাধ্যমগুলোতেও গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সংবাদ।
তিন বাহিনী প্রধানদের পর গেলেন প্রধান উপদেষ্টা, দিলেন আশ্বাস
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিতে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে আধা ঘণ্টার মতো তিনি অবস্থান করেন। এ সময় তিনি খালেদা জিয়াকে দেখতে ভেতরে যান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার চিকিৎসক দল প্রধান উপদেষ্টাকে ব্রিফ করেন। তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই ও জনস হপকিন্স এবং যুক্তরাজ্য ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় বেগম জিয়ার চিকিৎসা চলছে।
এসময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা। তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
সন্ধ্যা ৭টার পর হাসপাতালে পৌঁছালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ. জে. এম. জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী শার্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম ইসকান্দার প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান।
এর আগে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাতে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।
মেডিক্যাল বোর্ডে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক টিম, রাতে আসছে চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডকে চিকিৎসা সহায়তায় বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল।
তবে শুরু থেকে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের একটি মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম তদারকি করছেন।
তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা দিতে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, চীন, কাতার, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, ইন্ডিয়াসহ বন্ধুপ্রতিম অনেকে দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সর্বত্রই উদ্বেগ, দৃষ্টি এভারকেয়ারে
এভারকেয়ার হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তার দল বিএনপির নেতাকর্মীদের বাইরেও সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। অনেকে হাসপাতালে ছুটে যান। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকর রহমান ও বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে যান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তারা বলেন, খালেদা জিয়া কোনও দলীয় নেত্রী নন। সব দলের কাছেই তিনি সমাদৃত। তাই দলমত নির্বিশেষে তার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরেও খালেদা জিয়ার খোঁজ-খবর রাখছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
