অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব।
সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে ভাবনা, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সংস্কার প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়াসহ আরও অনেক বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দুই পর্বে বিএনপির মহাসচিবের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। প্রথম পর্বটি এখানে তুলে ধরা হলো:
মি. আলমগীর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারে যোগ দেওয়ার জন্য। কেমন আছেন আপনি?
মির্জা ফখরুল: ভালো, ভালো। অনেক ভালো।
প্রথমে একটু নির্বাচন দিয়ে শুরু করতে চাই। সম্প্রতি আপনি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে এই বছরের (২০২৫) জুলাই-অগাস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। এটা কি একটা সম্ভাবনার কথা বলছেন, নাকি আপনারা চান যে জুলাই-অগাস্টে নির্বাচন হোক?
মির্জা ফখরুল: আমরা তো চাই আর্লি ইলেকশন। আগেও বলেছি আমরা। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার, যেটা ন্যূনতম সংস্কার, সেগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। এটা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এবং আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের যে অভিজ্ঞতা দেখেছি আমরা অতীতের কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টগুলোতে, তাতে করে এটা অসম্ভব কিছু না। এটা পসিবল, যদি গভর্নমেন্ট চায় যে ইলেকশন তারা করবে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে বা অগাস্টের মধ্যে, তারা করতে পারে।
আপনারা সুনির্দিষ্ট করে কি বলবেন যে আপনারা এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন চান?
মির্জা ফখরুল: আমরা সুনির্দিষ্ট সময় ওভাবে বলতে চাই না এ জন্য যে তাতে তো লাভ হবে না। কারণ, গভর্নমেন্টকেও চাইতে হবে। আলাদা পলিটিক্যাল পার্টিগুলোরও চাইতে হবে—সবাই মিলে একসঙ্গে চাইতে হবে। তবে আমাদের দিক থেকে আমরা মনে করি, এটা কোনো অসম্ভব কিছু না। এটা খুবই সম্ভব এবং যত দ্রুত হয়, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
কিন্তু আপনাদের কোনো ডেডলাইন বা সময়সীমা নেই?
মির্জা ফখরুল: ডেডলাইন আমরা দিইনি এখনো।
যদি আপনারা দেখেন, নির্বাচনটা আপনারা যে সময়ের মধ্যে আশা করছেন, সেটা হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপটা কী হবে?
মির্জা ফখরুল: সে ক্ষেত্রে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের পার্টিতে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব এবং আমাদের সঙ্গে যাঁরা আন্দোলনে ছিলেন, আছেন—তাঁদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করব। আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেব।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে তাঁরা কিছু সংস্কার কাজ করতে চান এবং সেই সংস্কারগুলো শেষ হলে তখন তাঁরা একটা নির্বাচনে যাবেন। তো আপনারা কি অপেক্ষা করতে রাজি আছেন সংস্কারকাজ শেষ করা পর্যন্ত?
মির্জা ফখরুল: আমরা আমাদের কথাগুলো স্পষ্ট করে বলে আসছি। বলেছি যে তিনি যতগুলো সংস্কারের মধ্যে হাত দিয়েছেন, অতগুলো সংস্কার করতে গেলে ১০ বছরের মধ্যেও শেষ হবে না। আর সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। দুই বছর আগে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দিয়েছি আমরা। তার মধ্যে এই বিষয়গুলো তো রয়েছে।
সংবিধান সংস্কারের বিষয় রয়েছে, জুডিশিয়াল কমিশনের কথা আমরা বলেছি, আমরা ইলেকশন কমিশনের কথা বলেছি, আমরা ব্যুরোক্রেসি সংস্কারের কথা বলেছি ৩১ দফায়, আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছি—এগুলো আমাদের সব বলা আছে। এখন সে ক্ষেত্রে তারা যেটা করেছে, সেটা কী রিপোর্ট নিয়ে আসছে আমরা জানি না।
যদি রিপোর্টগুলোয় দেখা যায়, আমাদের সঙ্গে মিলে গেছে, তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যেগুলো মিলবে না, সেগুলো তো একটা ন্যূনতম কনসেনসাস হতে হবে। এরপর সেটা হতে হবে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আপনি সংস্কার দিলেন, কিন্তু সেটাকে অ্যাপ্রুভ করবে কে? তার জন্য তো আইনগত যাদের অধিকার আছে, তারাই করতে পারবে। দ্যাট ইজ পার্লামেন্ট।
পার্লামেন্ট ছাড়া কিন্তু কোনো সাংবিধানিক সংস্কার কঠিন হবে। এমনকি অন্য কতগুলো বিষয় আছে, যেগুলো সংবিধানে কিছু কিছু পরিবর্তন আনার দরকার আছে। কিন্তু সেগুলা পার্লামেন্ট ছাড়া সম্ভব নয়। সে জন্যই আমরা মনে করি, দ্য সুনার দ্য ইলেকশন ইজ বেটার।
আপনি কি মনে করেন যে নির্বাচিত সরকার আসার আগপর্যন্ত এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের যাওয়া উচিত হবে না বা তারা যেতে পারে না?
মির্জা ফখরুল: যাওয়া উচিত হবে না আমরা বলছি না। কিন্তু যেতে তারা পারবে না এ জন্য যে সব দলের কনসেনসাস না হলে কোনোটাই যাওয়া তাদের ঠিক হবে না।
এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং নির্বাচন পর্যন্ত তো এই সরকারের মেয়াদ থাকবে—এটাই সবার ধারণা।
মির্জা ফখরুল: যদি সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন করে, তাহলেই তারা নির্বাচন কনডাক্ট করা পর্যন্ত থাকবে। তা না হলে তো নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।
আপনার কি ধারণা যে এই সরকারের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে?
মির্জা ফখরুল: নিরপেক্ষতার প্রশ্ন আসতে পারে। কেননা, এখানে আমরা জিনিসটা লক্ষ করছি যে ছাত্ররা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে, সম্ভাব্য কথা। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে (সরকারে) থেকেই তারা নির্বাচন করবে, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।
আপনার কি মনে হয়, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে এখন কোনো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে?
মির্জা ফখরুল: এখন কোনো প্রশ্ন নেই। আমাদের কাছে কোনো প্রশ্ন নেই।
৫ অগাস্টের পর যখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা হচ্ছিল, সে আলোচনায় আপনারাও ছিলেন। সেই আলোচনার ভিত্তিতে পরে সরকার গঠন করা হয়। এই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল কী হবে, সেটা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি?
মির্জা ফখরুল: না। তখন তো ইলেকশন দ্রুত করার কথাই হয়েছে। দ্রুত ইলেকশন করার কথাই হয়েছে।
দ্রুত বলতে কত সময়? কোনো ধারণা, সময়সীমা—এ ধরনের কিছু নিয়ে কথা হয়নি?
মির্জা ফখরুল: না, সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তখন তো সেই সুযোগ ছিল না।
তো অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আপনি নিজেই বলেছিলেন যে এই সরকারকে আপনারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
মির্জা ফখরুল: করছি।
এটা এখনো অব্যাহত আছে?
মির্জা ফখরুল: অব্যাহত আছে। তারা যখনই ডাকে, তখনই আমরা যাই, কথা বলি। না ডাকলে তো যাওয়া যায় না, এরপরও আগ বাড়িয়েও কথা বলি। আমরা যেগুলো মনে করি যে এগুলো করা উচিত, সেগুলো তাদের আমরা জানাই। অ্যান্ড উই আর কো–অপারেটিভ। এখন পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনো আন্দোলনও করিনি, কথাও বলি না কোথাও। তবে দু-একটা ভুলত্রুটি তো দেখিয়ে দিতেই হয়।
শুরু থেকে আপনাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যে সম্পর্কটা ছিল, এখনো কি তাই আছে? নাকি এখানে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে?
মির্জা ফখরুল: আমরা মনে করি যে তা–ই আছে।
সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রায়ই সময় একটা বিষয় বলা হয় যে তারা যে সংস্কারগুলো করছে বা করতে চাইচ্ছে, তার একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে—যে ধরনের একনায়কতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী সরকার তৈরি হয়েছিল, সে ধরনের একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে বাংলাদেশে আর তৈরি না হয়। আপনার কী মনে হয়, এর দ্বারা আপনাদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়?
মির্জা ফখরুল: কোনোমতেই না। কারণ, আমরা কখনোই স্বৈরতান্ত্রিক ছিলাম না। আমরা সব সময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম। এখানে মাল্টি পার্টি ডেমোক্রেসি আমরাই নিয়ে আসছি। একদলীয় শাসনব্যবস্থা শেখ মুজিবের, সেখান থেকে ট্রানজিশন টু মাল্টি পার্টি সিস্টেম তো জিয়াউর রহমান সাহেব করেছেন। গণমাধ্যমকে মুক্ত করা, আমরাই করেছি। পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি তো আমরাই নিয়ে আসছি। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সিস্টেম আমরাই চালু করেছি। আপনি প্রতিটিই দেখেন। সুতরাং প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদেরকে কেউ স্বৈরাচারী বলে আঙুল তুলবে—এ কথা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারব না।
বা ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের সুযোগ তৈরি না হয়।
মির্জা ফখরুল: প্রশ্নই আসে না। দলটিই তো আমাদের ওই রকম না। আমাদের দলটিই তো গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। উই হ্যাভ অলওয়েজ ট্রাইড টু প্র্যাকটিস ডেমোক্রেসি। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। ১৫ বছর আমরা লড়াই করলাম এই গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। খালেদা জিয়া প্রায় ছয়টা বছর কারা অন্তরীণ ছিলেন এই মামলার জন্য, এই গণতন্ত্রের জন্য এবং আমাদের তারেক রহমান সাহেব এখনো বিদেশে আছেন। আমাদের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের প্রায় সাত শ মানুষ গুম হয়ে গেছে। আমাদের হাজার হাজার লোক খুন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। এ দেশের মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিল গণতন্ত্রের জন্য। সুতরাং আমাদের দলে সেই প্রশ্নই উঠতে পারে না। ডেমোক্রেসির চ্যাম্পিয়ন বলতে পারেন আমাদেরকে আপনি।
আপনি সংস্কার কমিশনের কথা বলছিলেন। যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠিত হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন—আপনি এটার কথা বলেছিলেন। সেই প্রস্তাবে কয়েকটি বিষয় এসেছে, তার মধ্যে একটি বড় বিষয় যদি বলি, মূলনীতি পরিবর্তনের একটি প্রস্তাব আছে। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, বহুত্ববাদ আনার কথা বলা হয়েছে। এটা নিয়ে আপনার মতামত কী?
মির্জা ফখরুল: আমরা এ বিষয়ে এখনই কথা বলব না। আমাদের পার্টিতে একটা কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটি অ্যানালাইসিস করছে। এটা করার পরে আমাদের বক্তব্যটা আমরা পাবলিকলিই নিয়ে আসব।
সেটা কবে?
মির্জা ফখরুল: দ্রুত, খুব দ্রুত। আর এটা তো খসড়া।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের একটা প্রস্তাব এসেছে।
মির্জা ফখরুল: এই প্রস্তাব তো দিয়েছি আমরাও।
প্রস্তাবে যেভাবে দ্বিকক্ষের কথা বলা হয়েছে—নিম্নকক্ষ থাকবে নির্বাচনের ভিত্তিতে যেটি হয় এবং উচ্চকক্ষ আনুপাতিক ভোটের হিসাবে। আপনারা এটার সঙ্গে একমত?
মির্জা ফখরুল: না, আমরা সেখানে একমত না। আমাদের ভিন্ন প্রস্তাব আছে, সেটা আমরা আলোচনার মাধ্যমে দেখব।
আমরা এর মধ্যে দেখেছি যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের বেশ কিছু দাবি বিভিন্ন সময় তুলেছিল, যেগুলো আপনারা বিরোধিতা করেছেন বা বাধার মুখে হয়নি। যদি কয়েকটি উদাহরণ দিই, যেমন রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের কথা, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা এবং সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের একটা ইস্যু এসেছে, যেটা আপনারা বিরোধিতা করেছেন। এ বিষয়গুলোতে আপনাদের আপত্তির কারণ কী?
মির্জা ফখরুল: (হাসি) আপত্তির কারণ খুব সংগত। আমরা তো একটা সংবিধানের অধীনে আছি। রাষ্ট্রের যে সংবিধান, সেই সংবিধানের অধীনে আমরা আছি। এই সরকারও শপথ নিয়েছে সেই সংবিধানের অধীনে। সেখানে রাষ্ট্রপতিকে যে অপসারণ করবে, সেটা কে করবে? এটা এক। দুই নম্বর হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি আনবেন কাকে? তিন নম্বর হচ্ছে এটার লেজিটেমেসি কার হাতে থাকবে? পার্লামেন্ট নেই। সুতরাং ওই প্রশ্নটাকে আমরা মনে করি যে অবাস্তব প্রশ্ন। আর যেখানে ওটা কোনো ক্রাইসিস ছিল না। ওই ধরনের কোনো ক্রাইসিস তৈরি হয়নি। সেটা আমরা মনে করেছি, এটা ক্রাইসিস তৈরি করা নতুন করে। আমাদের সামনে এখন একটাই মূল সমস্যা, সেটা হচ্ছে আপনি নির্বাচন অতি দ্রুত করে ফেলা, একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দেওয়া। এটা তো আপনার এসেন্স অব ডেমোক্রেসি।
এটা গেল এক। আপনার আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র। এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাও করা হয়নি আগে, আমরা জানিও না এটা। আর (অভ্যুত্থানের) পাঁচ মাস পরে এই ডিক্লারেশনের কোনো যুক্তি আছে কি না? এটা কি সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার মতো ব্যাপারটা? যেটা হয়েছে, যাঁদের অপসারণ করা হয়েছিল ওই সরকারের আমলে, এখন আবার তাঁরা ফেরত পাচ্ছেন? এটা তা না। এটা একটা অভ্যুত্থান, একটা আন্দোলন। সেই আন্দোলনের ডিক্লারেশন তখনই হওয়া উচিত ছিল। এটা ছাত্ররা তারা দিতেই পারে। কিন্তু আমরা ওটার পার্ট তখনই হব, যখন গোটা জাতির প্রশ্নটা আসবে তার মধ্যে, টোটাল জিনিসটা। কোনো আলোচনা না করেই তো আমরা এটা করতে পারি না। প্রশ্নই উঠতে পারে না।
যে বিষয়টি তাঁরা বলছেন, এটা একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, একটা বিপ্লব হয়েছে এবং তাঁরা সেখানে নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁরা এখন সেটি (ঘোষণা) দিতে চান।
মির্জা ফখরুল: দিতেই পারেন। ছাত্র হিসেবে তাঁরা দিতেই পারেন। জাতি হিসেবে এবং পার্টি হিসেবে তো আমরা সেটার মধ্যে থাকতে পারি না। আমাদের ন্যারেটিভ আছে। ১৫ বছর আমরা লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। আমাদের এসব বিষয় এখানে থাকবে। এর আগে, ৭ নভেম্বরের বিষয়গুলো সেখানে আসতে হবে, নব্বইয়ের গণ–আন্দোলন সেখানে থাকতে হবে—এগুলো তো থাকতে হবে। আর একাত্তর হচ্ছে আমাদের অস্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধ। সেই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে চব্বিশকে একমাত্র গুরুত্ব দেওয়ার কথা আসতে পারে না।
আপনি বলছিলেন যে একাত্তরের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল: আমি এর আগেও বলেছি। আমার কাছে কেন জানি মনে হয় যে, একটা পক্ষ একাত্তরকে একটু পেছনে রাখতে চায়।
কারা?
মির্জা ফখরুল: আছে কিছু হয়তো। তারা চেষ্টা করছে। এটা আমার মনে হচ্ছে। আমি একজাক্টলি আপনাকে ঠিক বলব না, বলতে পারব না। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, একাত্তরকে পেছনে ফেলার একটা চিন্তাভাবনা কারও কারও মধ্যে থাকতে পারে।
এতে কী সুবিধা হবে, একাত্তরকে যদি পেছনে ফেলা হয়?
মির্জা ফখরুল: যাদের সুবিধা হবে, সেটা আপনারা জানেন সবাই। আমি রিপিট করেতে চাই না।
জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়ে বলি। যখন নির্বাচনে কথা আসে, তখন ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে যে নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি। আপনাদের নির্বাচনের দাবির বিপরীতে জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের কথাও প্রায় সময় বলা হয়। তো এই বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: আমাদের খুব পরিষ্কার করে বলা আছে, ভাই। আমরা আন্দোলন করছি, রাজনৈতিক দল করছি দেশে একটা ডেমোক্রেটিক সেটআপের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আর গণতন্ত্রে ঢোকার প্রথম ধাপটিই হচ্ছে নির্বাচন। যেহেতু তিন–তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকার নষ্ট করে দিয়েছে, জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আমার ভোটের অধিকারটা তো প্রথম অধিকার নাগরিক হিসেবে। আমি এই দেশের মালিক। আমার একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে আমার ভোটটা। সেটাই তো আমরা দিতে পারিনি। সুতরাং নির্বাচন চায় না বা নির্বাচন প্রধান নয়—এ কথা চিন্তা করাও তো ভুল। নির্বাচনটা আমরা মনে করি প্রধান। কারণ, এই নির্বাচনের মাধ্যমেই আমি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারব। আমি গণতান্ত্রিক সংবিধানের পরিবর্তনগুলো আনতে পারব। গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র আবার পুনর্নির্মাণ করতে পারব। এ ছাড়া আমার বিকল্প কিছু নেই।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে আপনাদের একটা দ্বিমত দেখা গেছে।
মির্জা ফখরুল: না, এটা ভুল–বোঝাবুঝি হচ্ছে। মিডিয়া এটাকে একুট ভুলভাবে প্রচার করছে।
কোন জায়গাটায় ভুল–বোঝাবুঝি হচ্ছে?
মির্জা ফখরুল: আমরা কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলেছি যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটা পুরোপুরি জনগণের ব্যাপার। জনগণ যদি চায় যে তারা কোনো দলকে নিষিদ্ধ করবে, তাহলে তারা করতেই পারে। সেটা কীভাবে হবে? সেটা পার্লামেন্টে হতে পারে বা অন্য কোনো মাধ্যমে হতে পারে।
কিন্তু কীভাবে আপনি জানবেন যে জনগণ চাইছে কি চাইছে না?
মির্জা ফখরুল: ভোটের মাধ্যমে সেটা জানা যাবে। ইলেকশনের মাধ্যমেই সেটা জানা যাবে। আমি একটা পলিটিক্যাল পার্টি। আমি তো আরেকটা পলিটিক্যাল পার্টিকে নীতিগতভাবে, জামায়াতে ইসলামীকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা নীতিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে রাজনীতি করে, তাদেরকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটাতে আমরা কখনোই একমত হইনি। এটা আমরা বলেছি যে জনগণ ডিসাইড করবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি হবে না। এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে অনেক আমি জানি। কিন্তু এই বিতর্কের কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না।
আপনি বলছিলেন, ভোটের মাধ্যমে সেটা জানা যাবে। তো আগামী নির্বাচনে কি তাহলে আওয়ামী লীগ...
মির্জা ফখরুল: সেটা আওয়ামী লীগ আসতে পারলে আসবে, না আসতে পারলে আসবে না। দ্যাটস নট মাই পয়েন্ট। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কথা নেই। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোনো দল নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেটা তো দলগুলো নিজেরাই ঠিক করবে। তখনকার সেটআপ ঠিক করবে, ইলেকশন কমিশন ঠিক করবে। আমরা কথাটা খুব পরিষ্কার করেই বলছি যে আমরা মনে করি, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের না। আমরা চাই, জনগণের মাধ্যমে সবকিছু নির্ধারিত হবে।