Image description
পূর্ণতার পথে পৃথককরণ

কবির হোসেন 8 ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ে দেওয়া ১২ দফা নির্দেশনার আলোকে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় ১৭ বছর আগে। কিন্তু ওই ঘোষণা পূর্ণতা পায়নি আজও। এখনো রায়ের ১২ দফা নির্দেশনার পুরোপুরি বাস্তবায়ন ঘটেনি। রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছিলেন, ‘তেলে-জলে যেমন মেশে না, তেমনি বিচার বিভাগকে অন্যান্য সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে এক করা যাবে না।’ কিন্তু রায়ের এই চেতনার আলোকে দীর্ঘদিনেও তৈরি করা হয়নি বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয়। ফলে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে মিশে আছে। চালু রয়েছে দ্বৈত শাসন। আর এই দ্বৈত শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট বিচারকরা।

নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে বিচারকদের মুক্তি মেলেনি। এর প্রভাব পড়ছে বিচারকাজেও। অবশেষে নির্বাহী বিভাগের হাত থেকে বিচারকদের পুরোপুরি মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে তৈরি করা হচ্ছে পৃথক সচিবালয়। এর মধ্য দিয়েই বিচার বিভাগ পৃথককরণ ঘোষণার পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিচার সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ প্রভাবমুক্ত করতে জারি করা হয়েছে অধ্যাদেশ। এই অধ্যাদেশের আলোকে গঠিত হবে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’। স্থায়ী এই কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়োগ হবে বিচারপতি। এ ছাড়া অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, ছুটি, কর্মস্থল নির্ধারণ ও শৃঙ্খলার বিধানও সুপ্রিম কোর্টের হাতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বিচারকাজ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে সরকারি আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পৃথক সচিবালয় গঠনে সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রস্তাবনা পাঠানোর পর বর্তমান আইন উপদেষ্টার নির্দেশনায় পৃথক সচিবালয় গঠনে কাজ শুরু হয়।

এরই মধ্যে পৃথক সচিবালয়ের একটি অর্গানোগ্রামের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। এই খসড়ার ওপর এখন অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। এরপর প্রয়োজনীয় সংশোধন এনে অধ্যাদেশটি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য উঠবে। আর এ কাজ সুচারুরূপে বাস্তবায়নের জন্য রুলস অব বিজনেসসহ সংশ্লিষ্ট আইনগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারির পর এর আলোকে জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালার প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। পাশাপাশি বিচারকদের নিয়োগ-পদোন্নতি-বদলি ও শৃঙ্খলা বিধিমালায়ও পরিবর্তন করা হবে। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি সমাজে দীর্ঘদিন ধরে। এটির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একটু সময় লাগছে খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। তিনি বলেন, কিছু অভিযোগ আছে, সরকারি কৌঁসুলিরা যেহেতু দলীয়ভাবে নিয়োগ পান, সেজন্য তারা অনেক সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন না। রাষ্ট্রের পক্ষে ভূমিকা পালন না করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভূমিকা পালন করেন। এর সমাধান হচ্ছে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে আইন তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এটি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জানা গেছে, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণের দাবি ওঠে ১৯৯৪ সালে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়ায় বঞ্চনার ক্ষোভ থেকে এই দাবি তোলা হয়। ওই বছরই বিচারক মাসদার হোসেনসহ ৪৪১ বিচারকের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এই রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে হাইকোর্ট ১৯৯৭ জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস করার আদেশ দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করে। এরপর ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালত নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিচার বিভাগের মর্যাদা ও স্বাধীনতা এবং স্বকীয়তা রক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনা দেন সর্বোচ্চ আদালত। রায় ঘোষণার প্রায় ৮ বছর পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই ঘোষণাতেই শেষ। এরপর বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে বিচার বিভাগ পৃথককরণের রায় বাস্তবায়নে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রায়ে দেওয়া ১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে পৃথক সচিবালয় গঠনের মূল নির্দেশনা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ আলাদা হলেও বাস্তবে এখনো আইন মন্ত্রণালয় ও সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছে বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। তাদের অভিমত, ১৯৭২ সালের সংবিধানে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ছিল কেবল সুপ্রিম কোর্টের হাতে। এখন সংবিধান পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ ও সুপ্রিম কোর্টে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা চালু আছে। বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আইন মন্ত্রণালয়। এজন্য বিচারকদের স্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছে। বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা বিধান সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে আনলে বিচার বিভাগের পৃথককরণ সম্পন্ন হবে। এজন্য পৃথক সচিবালয় গঠন অপরিহার্য। কিন্তু বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলো মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়নে ও পৃথক সচিবালয় গঠনে উদ্যোগী হননি। তবে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ওই রায়ের আলোকে বিচার বিভাগ পৃথক ঘোষণা করা হয়। এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণ প্রদানকালে বিচার বিভাগ সংস্কারে একটি রোডম্যাপ দেওয়া হয়। বিগত বছরগুলোতে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে উল্লেখ করে সেদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ কার্যকররূপে পৃথক না হওয়া। দেশের সংবিধানের ১১৬ (ক) অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতের বিচারকরা বিচার কার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা ততদিন পর্যন্ত নিশ্চিত হবে না, যতদিন না বিচার বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা অর্থাৎ, সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।।’ এ ছাড়াও তিনি বিচারকদের পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়নসহ বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ তুলে ধরেন। এই ঘোষণার ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম কোর্ট গত ২৭ অক্টোবর বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘কেবল পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব।’

‘বাধা হয়ে আছে ১১৬ অনুচ্ছেদ’ সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল-নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি তা প্রয়োগ করে থাকেন। এক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয় মূলত রাষ্ট্রপতির সচিবালয় হিসেবে কাজ করে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত ছিল। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১১৬(ক) অনুচ্ছেদে বিচারকদের বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে যে স্বাধীন থাকার কথা বলা হচ্ছে, তা মূলত ব্যাহত হচ্ছে ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ১১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এ মৌলিক কাঠামো নষ্ট করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বাস্তবায়ন কার্যত আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়েছে এবং পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১১৬-এর বিধান বহাল রাখা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের পরিপন্থি। বিষয়টি লক্ষ্য করে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ, জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের সাত আইনজীবী রিট করেন। এই রিটের পর সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং এ-সংক্রান্ত ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এই রুলের ওপর হাইকোর্টে চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল মঞ্জুর করে আদেশ দিলে বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে ফিরে আসবে বলে জানান আইনজীবীরা। ১২ দফা নির্দেশনা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করতে দেওয়া রায়ে ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে ১. সংবিধানের ১৫২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সব বিভাগের কাজ সার্ভিস অব রিপাবলিকের ভেতরে পড়বে। তবে বিচার বিভাগের কাজ ও অবকাঠামোর সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের সিভিল সার্ভিসের অনেক ভিন্নতা রয়েছে। বিচার বিভাগকে অন্যান্য সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে একত্রিত করা যাবে না; ২. বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা এবং নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারিক কাজ করতে পারবেন না; ৩. সিভিল সার্ভিস অর্ডার ১৯৮০ অনুযায়ী সব ম্যাজিস্ট্রেটকে পিএসসির অধীনে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়। একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি; ৪. এই রায় পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা এবং কমিশন গঠন করতে হবে; ৫. সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়ারির সবার চাকরির বিধিমালা (নিয়োগ, পদায়ন, বদলি পদোন্নতি ও ছুটিসহ অন্যান্য) প্রণয়ন করবেন; ৬. রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা প্রণয়ন করবে; ৭. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের থাকবে; ৮. বিচার বিভাগ জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকবে না এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করবেন; ৯. জুডিশিয়ারির (নিম্ন আদালত) বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হাত থাকবে না। এই বাজেট সুপ্রিম কোর্ট প্রণয়ন এবং বরাদ্দ করবে; ১০. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা প্রশাসনিক আদালতের আওতাভুক্ত থাকবেন; ১১. এই রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগ পৃথককরণের জন্য সংবিধানে কোনো সংশোধন করার প্রয়োজন নেই। তবে পৃথককরণ আরও অর্থবহ করতে যদি সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে তা করা যাবে; ১২. জুডিশিয়াল পে-কমিশন: জুডিশিয়াল পে-কমিশন জুডিশিয়ারির সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ না করবে, ততদিন পর্যন্ত বর্তমান অবকাঠামো অনুযায়ী তার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব নির্দেশনার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি।

নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে একত্রে রাখা হয়েছে বিচার বিভাগকে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে বিচারক নিয়োগে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন, বেতন নির্ধারণে আলাদা পে-কমিশন, জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা তৈরিসহ বেশ কিছু নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়েছে। যা বলছেন বিচার সংশ্লিষ্টরা জানতে চাওয়া হলে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহজাহান সাজু বলেন, ‘বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় গঠন হলে তা হবে বিচার বিভাগ পৃথককরণ পূর্ণতার পথে বড় অগ্রগতি। এই সচিবালয় চালুর পর কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা ধীরে ধীরে নিরসন করা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে রাজনৈতিক সরকারগুলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায়নি। তাই পৃথক সচিবালয় করেনি। এমনকি মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগকে পৃথকও করতে চায়নি। ওয়ান ইলেভেনের সময় পৃথক ঘোষণা করা হলেও ঘোষণার আগের দিন রাতে মোবাইল কোর্ট অধ্যাদেশ জারি করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়। প্রথমে তাদের ১১টি আইন প্রয়োগ ও জরিমানা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসে এই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দুই বছরের সাজা প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়। পাশাপাশি শতাধিক আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়। জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণ ও বিচার বিভাগের মৌলিক স্বাধীনতা হরণ করার উদ্দেশ্যে রাজনীতিবিদরা এটা করেন। অথচ এই রাজনীতিবিদরা বেশি বেশি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলেন। কিন্তু তারা কখনো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাননি। আশা করি, এবার পৃথক সচিবালয় তৈরির পদক্ষেপকে রাজনীতিবিদরা স্বাগত জানাবেন ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন।