দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লাকে নিয়ে বিতর্ক যেন শেষ হচ্ছে না। নানা অপকর্ম করে বারবার তিনি আলোচনায়। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা এক ঠিকাদারের কাছ থেকে হ্যারিয়ার গাড়ি নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। সপ্তাহ খানেক বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় তার আপন ভাই ও অনুগতরা। এতে আহত হন কমপক্ষে ১৩ জন।
সর্বশেষ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করতে চাওয়ায় এক যুবদল কর্মীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার পদ খাওয়ার হুমকি দেন মোবাইলে। হুমকি নিয়ে একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হাবলু মোল্লার কারণে বিব্রত হতে হয়েছে জেলা-উপজেলার নেতাদের। তার পরও থেমে নেই তার দৌরাত্ম।
দলীয় সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়ার আয়োজন নিয়ে দলীয় এক নেতাকে হুমকি-ধমকি ও অশালীন কথা বলার একটি ফোনালাপকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন বিএনপির এই নেতা। মঙ্গলবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ফোনালাপের অডিও রেকর্ডটি। ফোনালাপে সুমন নামে এক যুবদল কর্মীকে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনা করে দোয়ার আয়োজন নিষেধ করেন হাবলু মোল্লা।
ফোনালাপে অপর প্রান্ত থেকে ওই যুবদল নেতা দোয়ার অনুষ্ঠান আয়োজন করার বিষয়ে অনড় থাকলে হাবলু মোল্লা তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, আমার জমিতে কোনো দোয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। যদি আয়োজন বন্ধ না করা হয় তাহলে পুলিশ দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেব। বিষয়টি তিনি ওসি ও এসপিকে ফোন দিয়ে জানাবেন বলেও হুমকি দেন।
তবে যুবদল কর্মী হাবলু মোল্লাকে চাচা সম্বোধন করে তাকে সাথে নিয়ে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবেন বলে জানালে উত্তেজিত হয়ে হাবলু মোল্লা বলেন, আমার জমির ওপর কারো অনুষ্ঠান করতে দেব না। যুবদল নেতা তখন বলেন, আপনার জমির ওপর আওয়ামী লীগের নৌকা ঝুলানো আছে সেটা নিয়ে তো কিছু বলছেন না।
হাবলু মোল্লা তখন বলেন, আমার জমিতে কি ঝুলানো থাকবে, কি থাকবে না সেটা আমি বুঝব। আমি তোমার পদ খেয়ে ফেলব। তুমি কত বড় নেতা হয়েছ আমি দেখছি।
নিজের বাড়িতে দোয়া মাহফিল করার পরামর্শ দিয়ে হাবলু মোল্লা বলেন, দোয়ার আয়োজন থেকে বিরত না থাকলে তোমাকে সাইজ করাসহ দল থেকে বহিষ্কার করব, করা হবে। হাবলু মোল্লাকে চাচা সম্বোধন করা যুবদল নেতাকে হাবলু বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য তোমার এত দরদ কিসের? তুমি কিসের নেতা? দোয়ার ‘গুষ্ঠি মারি’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রায় ৭ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ওই ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ফের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় হাবলু মোল্লাকে নিয়ে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে। মঙ্গলবার রাত থেকে সমালোচনার ঝড় উঠে উপজেলারজুড়ে।
উপজেলা বিএনপির একজন বিএনপি নেতা বলেন, হাসিনা সরকারের পাতানো নির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা অমান্য করে মনোনয়ন উত্তোলন করলে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদারের কাছ থেকে গাড়ি উপঢৌকন নেওয়া নিয়েও বিতর্ক হয় তাকে নিয়ে। তবে সেই গাড়ি নিজের টাকায় কিনেছেন বলে দাবি করেন।
দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শহীদ সরকার মঙ্গল বলেন, বিষয়টি রাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়। বিষয়টি নিয়ে আমার কথা বলা ঠিক হবে না। দুইজনই আমাদের দলের নেতা। আমি কার বিষয়ে কি বলব, আপনারা অনুসন্ধান করেন।
যুবদল কর্মী সমুন বলেন, আমরা দলীয়ভাবে একটি দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। সে জায়গায় অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম সেটা হাবলু চত্বর। সেখানে অনেক বড় জায়গা আছে। তারপরও আমাকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। নেত্রীর জন্য অনুষ্ঠান করতে চাওয়ায় বিএনপি নেতার হুমকি পাওয়া দুঃখজনক বলে জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য হাবলু মোল্লার ব্যবহৃত দুটি নম্বরে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
৫ আগস্টের পর হাবলু মোল্লার নেতিবাচক কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দেয়। সেই প্রতিবেদনে অস্ত্রের কারবার, ঠিকাদারদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে নানা সুবিধা নেওয়াসহ তার পরিবারের লোকজন এলাকায় চাঁদাবাজি করছে বলে উঠে আসে।