ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন ( ইসি ) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ( আরপিও ) যে সংশোধনী এনেছে , তাতে জোট করলে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । এতে জোটভুক্ত অন্য দলের প্রতীকে ভোট করার সুযোগে ‘তালা’ পড়েছে । ডিগবাজি দিয়ে এক দল থেকে অন্য দলে গিয়ে ভোট করার পথ আগের মতোই খোলা রেখেছে ইসি । সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আইন সংশোধন করে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হতে হলে অন্তত তিন বছর সংশ্লিষ্ট দলের সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতার বিধান যোগ করা হয়েছিল । পরবর্তী সময়ে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিওর ওই অংশটি বিলুপ্তির সুপারিশ করে সংসদে উত্থাপিত হলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয় । এতে তিন বছর সংশ্লিষ্ট দলের সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতার বিধান বাদ পড়ে , যা এখনো বহাল আছে ।
এ বিষয়ে সুজন সম্পাদক ড . বদিউল আলম মজুমদার বলেন , ‘সুজনের পক্ষ থেকেই এই প্রস্তাব করেছিলাম যে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিন বছর সদস্য থাকতে হবে । আমাদের উদ্যোগেই ২০০৮-০৯ সালে আরপিও সংশোধন হয়েছিল । পরবর্তী সময়ে তা বাতিল করা হয়েছে । বসন্তের কোকিল যেন এসে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে , এগুলোর জন্যই এটা করা হয়েছিল । ’ বদিউল আলম মজুমদার অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন । তাঁর নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও রাজনৈতিক দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিন বছর সদস্য থাকার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল । কিন্তু আরপিও সংশোধনে সেই সুপারিশ রাখেনি নির্বাচন কমিশন । এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড . আব্দুল আলীম আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘রাজনৈতিক দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিন বছর সদস্য থাকতে হবে , এটি আমাদের সুপারিশে ছিল ।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশই রাখেনি । তার মধ্যে এটি একটি । ’ জোটের অন্য দলের প্রতীকে ভোটের পথ বন্ধ আরপিও সংশোধনীর পর যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক চলছে তা হলো , জোট করলে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করা । বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো । তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী , জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ( এনসিপি ) কয়েকটি দল এই বিধানকে সমর্থন করেছে । রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপেও জোটের ভোটে নিজ নিজ দলের প্রতীক ব্যবহারের পক্ষে - বিপক্ষে সুপারিশ আসে । সংলাপে কেউ কেউ বলেছেন , জোটের ভোটে নিজ দলের প্রতীক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়ায় নিবন্ধিত দলগুলো বঞ্চিত হচ্ছে । অনিবন্ধিত দলগুলোর এই সুবিধা নিতে বাধা নেই । এটি বৈষম্যমূলক আচরণ । জোট করলেও ভোটে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বাধ্যবাধকতা বাদ দেওয়া হবে কি না , জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো . আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ অনেকেই এই বিধানের পক্ষে বলেছেন , আমাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন । আবার কেউ কেউ বলেছেন , এটাতে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে । এগুলোর মাপকাঠি নির্ধারণ করা কঠিন । এটি সংশোধন করা হবে না ।