সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের শাহাদাতবার্ষিকী আজ। বেদনাবিধুর এই দিনটিকে স্মরণ করে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার পুত্র আলী আহমাদ মাবরুর।
বাবা মুজাহিদের মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে নিজের মানসিক ধকল, পারিবারিক চাপ ও কঠিন অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে দেওয়া স্ট্যাটাসে মাবরু জানান, বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে একাধিক মুহূর্তে তিনি প্রচণ্ডভাবে শকড হয়েছিলেন এবং মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছেন।
ছেলে মাবরুর লিখেছেন, আইনজীবীদের কাছ থেকে যখন প্রথম জানতে পারেন যে তার বাবার ফাঁসির রায় হতে পারে, সেটি ছিল জীবনের বিস্ময়কর ও স্তব্ধতাময় মুহূর্ত। পরিচিত রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী ও বড় রাজনৈতিক দলের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে তার বাবার এমন পরিণতি হবে—এটি মেনে নিতে তার কষ্ট হচ্ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, জামায়াতের রাজনৈতিক কমিটিতে দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকার কারণে তার বাবাকে বিভিন্ন সময় কারাবরণ করতে হয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ডের সম্ভাবনা তাদের পরিবারকে অসহনীয় মানসিক চাপে ফেলেছিল। মামলার অগ্রগতি তদারকি করতেন বলে পরিবারের মধ্যে তিনিই আগে কঠিন সংবাদগুলো জানতে পারতেন এবং ধীরে ধীরে অন্যদের জানাতে হতো।
স্ট্যাটাসে মাবরুর বলেন, রায় ঘোষণার পর তার বাবাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে নাজিমউদ্দীন রোডের পুরনো কারাগারের কনডেম সেলে দীর্ঘদিন রাখা হয়, যেখানে পরিবেশ ছিল অত্যন্ত নির্মম ও বসবাসের অযোগ্য।
রায়ের পর প্রথম সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে গিয়ে তিনি লেখেন, কয়েদির পোশাকে বাবাকে জানালার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক দৃশ্যগুলোর একটি।
তিনি উল্লেখ করেন, কারাবন্দি অবস্থাতেও তার বাবা ছিলেন অবিচল, হাসিমুখে সকল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেন এবং পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে উৎসাহ দিতেন। কারাগারের সীমাবদ্ধতা, খাবার, অব্যবস্থাপনা—সবকিছুর মধ্যেও তিনি ইতিবাচক যুক্তি খুঁজে নিতেন।
মাবরুরের বাবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এক দশক হলো। বাবার শাহাদাতবার্ষিকীতে তিনি লেখেন, তার বাবা বলেছিলেন—রক্তের প্রতিটি ফোঁটা দেশে ইসলামী আন্দোলনকে বেগবান করবে। মাবরুরের ভাষায়, আজ দেশে ইসলামের পক্ষে ইতিবাচক একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু তার বাবা ও সহকর্মীরা তা দেখে যেতে পারেননি। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন—তার বাবার কুরবানি কবুল হোক এবং বাংলাদেশ ইসলামের জন্য কবুল হোক।
স্ট্যাটাসের শেষে তিনি দোয়া করে লেখেন, রাব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি সাগিরা।
অতি সম্প্রতি মাবুরুর একটি স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগকে সারাদেশে জ্বালাপোড়াও চালানোর দায়ে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন। ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মাবরুর লেখেন, গান পাউডার, ককটেল বিস্ফোরণ ও আগুন সন্ত্রাসের মত কাজে যুক্ত হওয়ায় আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবি।