For years the Awami League branded BNP–Jamaat as “fire terrorists,” yet reports since 2004 repeatedly show ruling-party activists caught with petrol bombs, implicated in bus arson and recent “lockdown” attacks. The article traces this history and argues that only a credible investigation can reveal who is truly responsible.
আগুন-সন্ত্রাস বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা পরিচিত শব্দ। গত ১২-১৩ বছর আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে এই শব্দটি সবচেয়ে বেশি শোনা গেছে। বিশেষ করে ২০১৩–২০১৫ সালে বিএনপি–জামায়াতের অবরোধ–হরতালের সময়ে বিভিন্ন আগুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে অগ্নি-সন্ত্রাসের তকমা দিতেন। তবে এই শব্দের বহুল প্রচলন দেখা গেছে ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২০২২ সালে বলেন, ‘খেলা হবে আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।’ ২০২৩ সালে বলেন, ‘বিএনপি ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মতো অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে’ সারাদেশ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের মিডিয়া উপকমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘আবারও আগুন-সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে বিএনপি।’
এখন আওয়ামী লীগেরই উদ্ভাবিত অগ্নি-সন্ত্রাস শব্দটি ব্যবহার করছেন বর্তমানে অন্যন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, আগুন দিয়ে জনজীবনকে ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞ করার কাজটি কারা করছে? গত ১৫-১৬ বছরে পত্র পত্রিকা দেখলে বিএনপি–জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে অথবা প্রমাণিত হয়েছে এমন রিপোর্ট দেখা যায়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায় আগুনের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা কর্মীদের নামে নাশকতার মামলা দেওয়া হয় এবং তাদের আটক করা হয়। অন্যদিকে হাতেনাতে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা ধরা পড়েছে তা পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। যেমন ২০১৪ সালে বাসে আগুন দেয়ার সময় তিন ছাত্রলীগ নেতা কর্মীকে আটক করে পুলিশ। যার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে গত কিছুদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে তারা চলন্ত বাসে অগ্নি সংযোগ, বিভিন্ন ব্যক্তির বাসা বা রাজনৈতিক দলের অফিস লক্ষ করে পেট্রল বোমা হামলাসহ নানারকম অরাজকতা চালনার চেষ্টা করে। এই রিপোর্টটিতে আগুন সন্ত্রাসের কয়েকটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং কারা এর সাথে জড়িত থাকতে পারে তার একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে।
২০০৪ সালে বাসের আগুনের ঘটনায় নিভে গেল ১১টি প্রান
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অগ্নিসন্ত্রাস নতুন কোন ঘটনা নয়। ২০০৪ সালের ৪ জুন রাজধানীতে বিআরটিসি বাসে অগ্নিকাণ্ডে ১১ জনের মৃত্যু হয়। রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে সুমন নামের এক ‘হেরোইন আসক্ত যুবককে’ আটক করা হয়। পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিদে সুমন বলেন, “ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে পাউডার ছিটিয়ে বাসে আগুন লাগানো হয়েছিলো।” সুমন জানিয়েছিলেন, ৪ জুন সন্ধ্যায় সে স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়েছিলো। সে সময় তার বন্ধু হাবিব, কালু, আনোয়ার ও মাসুম তাকে ডেকে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে তারা যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, জাহাঙ্গীর ও রুহুল আমিনের কাছে যান। সে সময় যুবলীগ নেতারা প্রত্যেকের হাতে ১০০ টাকা ধরিয়ে দেন এবং বাসে আগুন লাগানোর নিদের্শ দেন।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত কালু ও মাসুম ওই ঘটনায় যুবলীগ নেতাদের জড়িয়ে জবানবন্দি দেন এবং ১০ দিন পর তা প্রত্যাহার করে নেন। কালু জানান, তিনি আগেই রমনা থানায় অন্য একটি মামলায় আটক ছিলেন। পুলিশ তাকে জোর করে এ জবানবন্দি আদায় করেছে। মাসুম জানান, তিনি পুলিশের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন। পুলিশ তাকে গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম শিখিয়ে দেয়।
এদিকে, ওই সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালে বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার ছিলো বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল। ঘটনার পরদিন ৫ জুন বিরোধী দলের হরতাল কর্মসূচি ছিলো।
পরবর্তীতে ওয়ান-ইলেভেনের সময় তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ দুই নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমের বিরুদ্ধে বাসে আগুন দেয়ার ওই ঘটনার পরিকল্পনার অভিযোগ ওঠে, যদিও পরবর্তীতে তারা সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন।
২০১৪ সালে বাসে আগুন দেয়ার সময় তিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আটক
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি শেখ হাসিনার অধীনে একতরফা জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় দেশব্যাপী বাস, ট্রেন ও গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিরোধী দলের দাবি ছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সরকারের পক্ষ থেকেই কিছু নাশকতা সাজানো হয়েছিল, যাতে তাদের ওপর দায় চাপানো যায়। যদিও এসব অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্ত হয়নি।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে ১ জানুয়ারি মাগুরা জেলা শহরে একটি বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টাকালে ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। সেদিন সন্ধ্যায় মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। তাঁরা বাসে আগুন ধরানোর চেষ্টা করছিলেন বলে নিশ্চিত করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ মোল্লা, ছাত্রলীগকর্মী লিমন ও রানা। তাঁদের কাছ থেকে পেট্রলভর্তি দুটি বোতল ও দিয়াশলাই উদ্ধার করা হয়।
২০১৫ সালে পেট্রলবোমা ককটেলসহ ছাত্রলীগ কর্মী আটক
বাংলাদেশে ২০১৫ সালটি শুরু হয় প্রচণ্ড রাজনৈতিক উত্তাপ দিয়ে। ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনের এক বছর পূর্তি পালন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। ৫ জানুয়ারি ঢাকায় একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে এর দুদিন আগে থেকে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখে শেখ হাসিনার সরকার। বেগম জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখতে তার গুলশান কার্যালয়ের সামনের সড়কে বালুভর্তি ট্রাক ফেলে রাখা হয়।
গুলশানের অফিস থেকে বের হতে না পেরে খালেদা জিয়া দেশজুড়ে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এতে সারাদেশে নতুন করে উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বেগম জিয়া রাতদিন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকে অবরোধ তুলে নিলেও খালেদা জিয়া সেখানেই অবস্থান অব্যাহত রাখেন। টানা ৯২ দিন তিনি সেখানে অবস্থান করেন। অবরোধ চলাকালে পুরো দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এ সময় নাশকতা, পেট্রলবোমা, হামলা, অগ্নিসংযোগ সারাদেশের মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বার্ন ইউনিটে দুই শতাধিক মানুষের পোড়া শরীর আর তাদের আর্তনাদ দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি মানুষ। টানা তিন মাসের এই নাশকতা দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
সে বছরের ২১ ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী চৌরাস্তা থেকে জিনজিরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নূর হোসেন ও তার বড় ভাই কামাল হোসেনকে চারটি পেট্রোলবোমা ও পাঁচটি ককটেলসহ আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। পরদিন তাদেরকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয় বলে জানান র্যাব-১০ এর অপারেশন কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল আলম।
আগুন সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতা সোশ্যাল মিডিয়াতেও
আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমত্তা থেকে উৎখাত হওয়ার পর তারা এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়। বেশিরভাগ নেতারা বিদেশে পালিয়ে গেলেও তারা দেশে থাকা নেতাকর্মীদের আন্দোলন সংগ্রামে এক্টিভ হওয়ার উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে মোটা দাগে তারা সংহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার মামলার রায়ের আগের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিভিন্ন উসকানীমূলক পোস্ট দেন। যেমন সুশান্ত দাস গুপ্ত (Sushanta Das Gupta) নামে একজন তার ১১ নভেম্বরের পোস্টে উল্লেখ করেছেন, “১০০০ জন তো লাগে না কিছু করতে। ৩ জন হইলেই হয়।…একজনে ভালোবাসা ঢালবা, আরেকজনে ম্যাচ অন্যজনে ভিডিও। এরপরে বাসায় গিয়ে ঘুম দিবা রিলাক্সে “। একই ব্যক্তি শেখ হাসিনার রায়ের দিনে অরাজকতার জন্য স্মরণ করিয়ে দেন, “১৩ নভেম্বরের অসমাপ্ত কাজগুলো ১৭ নভেম্বর হয়ে যাক।” এছাড়াও নাশকতার ভিডিও শেয়ার করে উৎসবমুখর প্রতিক্রিয়া, ‘লগি বৈঠা রেডি’ করার আহ্বান, আগুন ধরানোর কৌশল শেয়ার। যা তাদের পরিকল্পিত চরিত্রকে সামনে এনেছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, সহিংস কর্মকাণ্ড শুধু মাঠেই নয়, অনলাইন সমন্বয়ের মাধ্যমেও সংগঠিত হয়েছে।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এই রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে প্রথমে ১৬ ও ১৭ নভেম্বর এবং পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে ১৮ নভেম্বর ঢাকা ‘শাট ডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রেললাইনে বোমা পাতার ছবিসহ খবর দেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজ থেকে এই বোমা পাতার তথ্য প্রচার করেন তিনি।
১৩ নভেম্বরে হাসিনার রায়ের তারিখ ধার্যের দিন অগ্নি সন্ত্রাসের ঘটনা
২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পর দলটির কার্যক্রম এখন রাষ্ট্রীয় আদেশে নিষিদ্ধ। আর গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে এর আগে ১৩ই নভেম্বর রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এই কর্মসূচির আগে ও পরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস অন্তত ২৫টি অগ্নিসংযোগের খবর নিশ্চিত করেছে।
এরমধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বাসে অগ্নিকাণ্ডে চালক জুলহাস মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগের অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।
এ ছাড়া ঢাকার ধানমন্ডি ও কমলাপুর, এবং টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনার ভিডিও ও তথ্য স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমে এসেছে। ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য অনুযায়ী, হামলাকারীদের অনেককে ঢাকার বাইরে থেকে অর্থের বিনিময়ে আনা হয়েছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভিডিও প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর ওপারে আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকায় তাদের ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে দেখা গেছে, প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র, হাতে ককটেল নিয়ে মিছিল করেছেন তাঁরা। সহিংস মনোভাবের বিষয়টি লুকানোরও প্রয়োজন মনে করেননি সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
১৭ নভেম্বর হাসিনার রায় ঘিরে অগ্নি সন্ত্রাসের ঘটনা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হয় ১৭ নভেম্বর। এ রায়ের তারিখ ঘোষণার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে আগুন, গ্রামীণ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাতবোমা-ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাসার সামনে দুটিসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বগুড়া ও গাজীপুরে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। ফেনীতে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেওয়া হয়েছে। ১৬ নভেম্বর সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ১৬ নভেম্বর রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই স্থানের কাছেই জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতাদের একাংশের সমন্বয়ে গঠিত এনসিপির প্রধান কার্যালয়। এছাড়া ঢাকায় মধ্যরাতে তিতুমীর কলেজের সামনে সড়ক ও আমতলী মোড়ে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের খবর জানায় বনানী থানা পুলিশ। ওই সড়কেই একটি বাসে আগুন দেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরে ধামরাই ও সাভার উপজেলায় রাতে দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। সিলেটের পাঠানটুলা এলাকায় কয়েকটি দোকানপাট ও গাড়ির ওয়ার্কশপে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া যায়।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কার্যনির্বাহী সদস্য উম্মে উসওয়াতুন রাফিয়ার গ্রামের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ও গান পাউডার দিয়ে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ১৯ নভেম্বর (বুধবার) দিবাগত রাতে ময়মনসিংহ মহানগরীর ঢোলাদিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ তার ফেসবুক পেইজে দেয়া এক পোস্টে জানান, “ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য রাফিয়ার বাসায় আজ ভোরে গান পাউডার দিয়ে আগুন দিয়েছে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গি লীগ।”
আগুন-সন্ত্রাসের সাথে কারা জড়িত
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আগুন-সন্ত্রাস’ বহু বছর ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে এ ঘটনার জন্য বিএনপি–জামায়াতকে দায়ী করলেও বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে চলতি ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অগ্নিসংযোগ, পেট্রলবোমা হামলা ও সহিংসতার উদাহরণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালে বাসে আগুন দিয়ে ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমের নাম আসে এবং তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। একইসাথে ককটেল হামলা ও আগুন দেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আটকও হয়েছেন। বিপরীতে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আগুন সন্ত্রাস নিয়ে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি এজন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করলেও এর সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট বা প্রমান তেমন দেখা যায়নাই ।
এখন গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর তার দলের সাম্প্রতিক ‘লকডাউন’ কর্মসূচি, সোশ্যাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক পোস্ট এবং রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায়, আগুন সন্ত্রাসে আওয়ামী লীগেরই জড়িত থাকার অভিযোগ নতুন করে সামনে এসেছে। সামগ্রিকভাবে বছরের পর বছর ধরে কারা আগুন-সন্ত্রাস ঘটাচ্ছে, সে প্রশ্ন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক থাকলেও কারা এর পেছনে রয়েছে বা করছে তা সহজেই অনুমেয় উপরোক্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে। তবে আগুন-সন্ত্রাস সম্পর্কিত ঘটনা নিয়েও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যাতে আপামর জনতা বুঝতে পারে এমন ঘৃণ্য কাজ কারা করছে এবং উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে অন্য দল বা গোষ্ঠীকেও সতর্ক হওয়ার বার্তা দেওয়া যায়।
