পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা–দশমিনা) আসনে সম্ভাব্য নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হাসান মামুন এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে ঘিরে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। দুই নেতার সাম্প্রতিক সময়ের নিবিড় জনসংযোগ কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে অনলাইন পোস্ট, পাল্টাপোস্ট ও ব্যক্তিগত আক্রমণের প্রবণতা শুধু সমর্থকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; স্থানীয় জনমনে সৃষ্টি করেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
স্থানীয় নাগরিকদের অভিযোগ, তরুণ দুই নেতার জনপ্রিয়তা নিয়ে এখন আর প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক পরিসরে সীমাবদ্ধ নেই। দুই দলের বড় অংশের সমর্থক এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভার্চ্যুয়াল যু*দ্ধ’-তে লিপ্ত। একপক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে,আবার অন্যপক্ষ বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট প্রকাশ করছে—এসব নিয়ে ফেসবুক গ্রুপগুলোতে চলছে তীব্র বাকযুদ্ধ। পরিস্থিতি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসান মামুনের স্ত্রীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবমাননাকর মন্তব্য এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় গলাচিপা–দশমিনার সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে,একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ল্যাবসহকারী নিয়োগে বড় অঙ্কের ঘুষের অভিযোগ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। সাধারণত এসব নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, সভাপতি বা ব্যবস্থাপনা কমিটি। প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে এ ধরনের অভিযোগে জড়ানো ‘কল্পনাপ্রসূত’ বলেই মন্তব্য তাদের।
অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে নিয়ে পুরোনো বক্তব্য ব্যবহার করে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রবণতাও বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, আগে থেকেই বিএনপির একটি অংশ নিয়মিত নুরকে নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট করতো। নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রচারণা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের মতে, অনেক শিক্ষিত মানুষও দায়িত্বহীনভাবে নেতিবাচক পোস্ট করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করছেন।
গলাচিপা–দশমিনা অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, এ এলাকা বরাবরই শান্ত। এখানে জেলে, কৃষক, কামার,তাঁতি—এলাকার পরিশ্রমী মানুষ প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও উত্তেজনা ছড়িয়ে এ শান্ত পরিবেশ নষ্ট করা অনভিপ্রেত ও অনৈতিক।
স্থানীয় একজন বলেন, ভোটে একজনকে বেছে নেব, অন্যজনকে নয়। তাই বলে কাদা ছোঁড়াছুড়ি বা ব্যক্তিগত আক্রমণ রাজনীতির ভাষা হতে পারে না।
এ অবস্থায় স্থানীয় তরুণসমাজ ও নাগরিক সমাজ দুই পক্ষের সমর্থকদের প্রতি সামাজিক মাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণ, মিথ্যা তথ্য প্রচার বন্ধ এবং সহনশীল মনোভাব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, রাজনীতি প্রতিযোগিতার, প্রতিহিংসার নয়।
এই পরিস্থিতিতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম শানু যুগান্তরকে বলেন, রাজনীতিতে স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের কাউকে টেনে আনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সবাইরে পরিবার আছে। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকা উচিত। হাসান মামুনের স্ত্রীকে নিয়ে যে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে, এর নিন্দা করার ভাষা আমার জানা নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও পটুয়াখালী-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ভিপি নুর যুগান্তরকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এ ধরনের প্রচারণা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। রাজনীতিতে পরিবারের মানুষকে জড়িয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করা শোভন নয়।
তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি এই আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা না করায় বিএনপির একটি অংশ বিভিন্ন মাধ্যমে তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
তিনি জানান,বিএনপি,জামায়াত,ইসলামিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে গণঅধিকার পরিষদ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই জনপ্রিয় নেতার কর্মী-সমর্থকদের এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণাত্মক পোস্টে উভয় দলেই এক ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি, ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।