Image description
 

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসন্ন এই নির্বাচন ঘিরে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে দেশের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপি। ইতোমধ্যে গত ৩ নভেম্বর সারাদেশের ৩শ’ আসনের মধ্যে প্রথমে ২৩৭ জন এবং পরে আরও একজনসহ মোট ২৩৮ জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। পাশাপাশি চলছে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মিত্রদলগুলোর আসন চূড়ান্ত করার কাজ। এ লক্ষ্যে শরিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বিএনপির লিয়াঁজো কমিটি। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই মিত্রদলগুলোর আসন চূড়ান্ত করবে বিএনপি।

সূত্রে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসন বণ্টনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। নির্বাচনে যুগপৎ সঙ্গীদের সঙ্গে কিভাবে পথ চলবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিবার বৈঠক হয়েছে। আসন সমঝোতা নিয়ে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শেষ হয়েছে। এখন বাকী আছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়া। মিত্রদের আসন চূড়ান্ত করতে শিগগিরই আলোচনা শুরু করবেন বিএনপির অন্যতম এই দুই শীর্ষ নেতা। আসন বণ্টনের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। কারণ, আগামী নির্বাচন সহজ হবে না, অনেক আগেই নিজদলীয় নেতা-কর্মীসহ মিত্রদের এমন বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ শীর্ষনিউজ ডটকমকে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসন চূড়ান্ত করতে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরামে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। শরিকদের সঙ্গে যারা লিয়াজোঁ করছেন, তাদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আলোচনা করে মিত্রদের আসন বণ্টনের কাজ খুব দ্রুত শেষ করবেন। 

এদিকে সূত্রে জানা গেছে, শরিক দল ও জোট তাদের প্রত্যাশিত আসনের যে তালিকা জমা দিয়েছে, তা বেশ লম্বা। বিএনপির পক্ষ থেকে জোট ও দলগুলোকে তালিকা সংক্ষিপ্ত করতে বলা হয়েছিল। পরে ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের ১৪২ জনের প্রার্থী তালিকা সংক্ষিপ্ত করে ৫০ জনের নাম দিয়েছেন। এভাবে অন্য দলগুলোও প্রার্থী তালিকা ছোট করে জমা দিয়েছেন। শরিকদের মধ্যে কারা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেন, বিএনপি সেসব প্রার্থীর সম্ভাবনা বিচার করছেন। কারণ, সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, জোট করলেও প্রত্যেক প্রার্থীকে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।

বিএনপির দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, শরিকদের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গত প্রায় ১৬ বছর রাজপথে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ দলগুলোর ভূমিকা, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান, ভবিষ্যৎ সরকার গঠনে তাদের প্রয়োজনীয়তাসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করা হচ্ছে। সেই মোতাবেক শরিক দল ও জোটের জন্য অন্তত ২৫টি আসন ছাড়ের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এর মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেই। এই দু’টি দল সমঝোতায় আসলে নতুন করে আসন বণ্টনে যাবে বিএনপি।

জানা গেছে, বিএনপি তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৩টি আসন চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের ৫টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ৫টি, ১২ দলীয় জোটকে ৩টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকে (বিজেপি) ২টি, গণঅধিকার পরিষদকে ২টি ও এলডিপিকে ২টি আসন দেওয়া হতে পারে। এছাড়া জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও গণফোরামকে ১টি করে আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। তবে এটি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত খুব দ্রুতই জানা যাবে।

এ ব্যাপারে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, আসন নিয়ে বিএনপির একাধিকবার বৈঠক হলেও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। বৈঠকে আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত আসনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে পারব।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক শীর্ষনিউজ ডটকমকে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে চূড়ান্ত কিছু হয়নি। বিএনপি নিজেদের ফোরামে এটি নিয়ে আলোচনা করছে। শরিকদের প্রার্থী করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই চলছে দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যেই শরিকদের আসন বণ্টনের কাজ চূড়ান্ত করবে বিএনপি।

শীর্ষনিউজ