মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডাদেশ রায়ের মধ্যদিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রায় ঘোষণার পর গণমাধ্যমকে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই মন্তব্য করেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই রায়ের মধ্যদিয়ে কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে যে, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক না কেন, যত দীর্ঘ সময় অপশাসন চালিয়ে যাক না কেন, যত দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র ও প্রশাসন পরিচালনা করুক না কেনÑএকদিন না একদিন তার নির্মম পতন হবেই এবং একদিন না একদিন তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, এই রায় ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা দিয়েছে যে, রাষ্ট্রে যাতে আর কোনো দিন কোনো ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা না হয়, রাষ্ট্রে আর কোনোদিন ফ্যাসিস্টের উৎপাদন না হয়। রাষ্ট্রে কোনো স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কেউ পাঁয়তারা না করে, কেউ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ না পায়- সেজন্য এই রায় একটি শিক্ষা।
সালাহউদ্দিন বলেন, আসামি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার একটি ধারায় মৃত্যু, কারাদণ্ড, আর একটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক আইজি’র পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। আমি মনে করি, এই সাজা যথেষ্ট না। তবে আইনে এর উপরে সাজা নেই।
এর আগে গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপান্তর: একটি কৌশলগত রোডম্যাপ’ শীর্ষক এক সেমিনারে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখনো কেউ জুলাই সনদ স্বাক্ষর করার জন্য আদেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। আর কেউ বলছে, আদেশ জারি করে জনগণের অভিপ্রায় পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু গণভোটের বিষয়ে তাদের কথা আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল আয়োজিত সেমিনারে তিনি আরও বলেন, গত বছরের ৬ই আগস্ট রাষ্ট্রপতির অর্ডারের মাধ্যমে সংসদ বাতিল করা হলো। তখন একটি পক্ষ জিজ্ঞাসাও করেনি সেখানে শেখ হাসিনার দস্তখত আছে কিনা। এখন অনেকে আর্গুমেন্ট করছে, কেউ কেউ হাইকোর্টেও যাচ্ছে যে, এই সরকারের পুরোপুরি বৈধতা নেই। তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। বিভিন্ন বাহানায় তারা একটা লিগ্যাল কেওয়াজ সৃষ্টি করবে, যাতে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হয় বা যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান না হতে পারে অথবা নির্বাচনই না হয়। তাতে তারা ক্ষমতা ভোগ করবে।
বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, সরকারের নিয়ত মনে হয় ঠিক আছে। সরকারের নিয়ত নিয়ে কথা বলার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি। সরকারের ভেতর কারও কারও ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তবে প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোনো কারণে সেটি না হলেও সেই কারণে তাকে ধন্যবাদ জানানো হবে।
পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ৮ দলের আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনারা দেখবেন, আর ৫ থেকে ৭ দিন গেলেই ইনিয়ে-বিনিয়ে এই আন্দোলন এখন তো যমুনা থেকে সরে এসেছে, আর কিছুদিন পর গ্রামে গিয়ে নির্বাচনের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। রোববার শুনলাম যে, আপাতত আমাদের আন্দোলন আর যমুনায় নেই। তো যাই হোক, এখন হয়তো মন যমুনায় অনেক কিছু চিন্তা করবে, কিন্তু শেষমেশ নির্বাচনেই দাঁড়াতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক মোর্শেদ হাসান খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ।