মহানবী হজরত মুহম্মদকে (সা.) অবমাননার ঘটনা নিয়েও শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনীতি হয়েছে। এমন একটি ঘটনার বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে আমার দেশ। এক যুগ আগে ২০১৩ সালে পাবনার আতাইকুলার বনগ্রামের একটি মামলার ঘটনা থেকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। পাবনা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ইশারায় এ মামলা থেকে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে আর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নির্দোষ নেতাকর্মীদের মামলায় জড়িয়ে জেল-জরিমানা করা হয়।
আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, হিন্দু যুবক রাজীব সাহা (১৭) তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে একটি পোস্ট দেন। তিনি পাবনার আতাইকুলার বনগ্রামের বাসিন্দা। ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া মামলা সে সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিরোধী দলমত দমনে ব্যবহার করা হয়।
ওই যুবক ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মহানবীকে (সা.) কটূক্তি করে ছবি আপলোড করেন। বিষয়টি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ মিছিল করেন। এছাড়া অভিযুক্তের বাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এতে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন আতাইকুলা থানার তৎকালীন এসআই আবদুল হালিম ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন।
সে সময় এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। যদিও এজাহারে ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়, রাজীব সাহার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিশ্বনবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর নামে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন চিত্র, অশালীন মন্তব্য ও নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ মুসলিম জনতা ঘটনার প্রতিবাদে রাজীব সাহাকে মারধর ও তার বাড়িঘরে হামলা করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশ দীর্ঘদিন মামলাটি ঝুলিয়ে রেখে চার্জশিট দেয়। এতে অদৃশ্য কারণে নাটের গুরু রাজীব সাহাকে রাখা হয়নি। আসামি করা হয় এলাকার প্রতিবাদকারী ১০ জন সাধারণ মুসলমানকে, যাদের সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। পরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে আদালতে ১৫ জন সাক্ষ্য দেন। সবাই ঘটনার জন্য দায়ী হিসেবে রাজীব সাহার নাম উল্লেখ করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্টটি রাজীব নামে যে হিন্দু যুবক দিয়েছিলেন, তার নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয় পুলিশ। অথচ যাদের সাজা দেওয়া হয়েছে, আদালতে এলাকার কোনো সাক্ষীই তাদের নাম বলেননি। এজাহারেও তাদের নাম ছিল না।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, প্রতিবাদকারী আমিমুল এহসান ও জহিরুল ইসলামকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদায় করে পুলিশ। যদিও পরে তারা আদালতে দেওয়া জবানবন্দি প্রত্যাহার করেন। আর মোহাম্মদ খোকন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি। বিচারকও রায়ে বলেন, প্রত্যাহার করা দুটি জবানবন্দি