Image description

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটি এরই মধ্যে মনোনয়ন আবেদন ফরম বিক্রির কাজ শুরু করেছে। তবে, নিজ দলের পাশাপাশি অন্য দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাকর্মীদের নিজ দলে ভেড়াতে সক্রিয় হয়েছে নবগঠিত রাজনৈতিক দলটি। তারা বলছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া সব দলের জন্য তাদের দরজা উন্মুক্ত। তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী সব নাগরিককে স্বাগত জানাবে।

দলটির একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে জানান, বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দলের কেউ এনসিপিতে যোগ দিলে তাদের দেশের প্রতি ‘কমিটমেন্ট’ (অঙ্গীকার) কমবে না। বরং নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে তারা দেশের প্রতি আরও গভীর অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করতে পারবেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এনসিপি শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত। যারা ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্ত নন এবং নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী— এমন সব নাগরিকের কাছ থেকে আমরা মনোনয়নের আবেদন প্রত্যাশা করছি।’

আসন্ন নির্বাচনে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী দিতে বিভিন্ন বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দলে ভেড়াতে কাজ করছে এনসিপি। যেসব নেতাকর্মী বিএনপি ও অন্যান্য দল থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন, তাদেরকে দলে নিতে চাচ্ছে দলটি। আওয়ামীবিরোধী হলেই আগতরা দলে ভিড়তে পারবেন এবং মনোনয়ন নিতে পাবেন। তবে, অবশ্যই বাংলাদেশপন্থায় বিশ্বাসী এবং চব্বিশ-পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হতে হবে

dhakapost

তিনি আরও বলেন, “অতীতে কোন রাজনৈতিক দলে কাজ করেছেন, শুধু সেই কারণে কেউ একটি নির্দিষ্ট আদর্শে চিরদিন আবদ্ধ থাকবেন— এ ধারণা সঠিক নয়। নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের প্রয়োজনে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি তৈরি হয়েছে, এই শক্তি আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক (ইনক্লুসিভ)। ফ্যাসিবাদবিরোধী যে কেউ এই দলে আসতে পারবেন এবং আমরা তাদের সাদরে গ্রহণ করব। আর আমাদের সংগঠন নতুন। এখানে অতীতের মতো কঠোর হায়ারার্কি (পদক্রম) নেই। নতুন কেউ এলে নিজেদের ‘অপরিচিত’ মনে করবেন না। বরং তারা নিজেদের এখানে খুঁজে পাবেন, নতুন মানুষের সঙ্গে একাত্ম হতে পারবেন।”

‘মনোনয়নই সব নয়, নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে যাদের সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা আছে, তারা সবাই এই নতুন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে দলকে যেমন বিকশিত করবেন, তেমনি নিজেরাও বিকশিত হতে পারবেন।’

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এনসিপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি। আজ ১৩ নভেম্বরের মধ্যেই আগ্রহীদের আবেদন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে। ১৫ নভেম্বর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরই মধ্যে কয়েক শ মনোনয়ন আবেদন ফরম বিক্রি করা হয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে নতুন রাজনৈতিক দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

dhakapost

মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হওয়ার দিন থেকেই প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল-সহকারে কার্যালয়ে আসছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অনেক সাবেক আমলা, অধ্যাপক, চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীও যোগাযোগ করছেন এবং মনোনয়ন ফরম নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে, দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ শীর্ষ নেতারা এখনও ফরম নেননি বলে জানিয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। অন্যদিকে, দলটির অন্যতম নেত্রী ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-০৯ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

দলীয় সূত্রমতে, আসন্ন নির্বাচনে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী দিতে বিভিন্ন বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দলে ভেড়াতে কাজ করছে এনসিপি। যেসব নেতাকর্মী বিএনপি ও অন্যান্য দল থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন, তাদেরকে দলে নিতে চাচ্ছে দলটি। আওয়ামীবিরোধী হলেই আগতরা দলে ভিড়তে পারবেন এবং মনোনয়ন নিতে পাবেন। তবে, অবশ্যই বাংলাদেশপন্থায় বিশ্বাসী এবং চব্বিশ-পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হতে হবে বলে জানায় ওই সূত্র।

তাদের মতে, বাংলাদেশকেন্দ্রিক জাতীয় স্বার্থই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যারা দলগত অবহেলা বা মনোনয়ন-রাজনীতির কারণে প্রান্তিক হয়ে পড়েছেন কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আন্তরিকভাবে কাজ করতে চান, এনসিপি তাদের জন্য একটি নতুন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেদের তুলে ধরছে। নতুন বাংলাদেশ গঠনে দক্ষ, দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। সেই ভূমিকা পালনের সুযোগ এনসিপি সব যোগ্য বাংলাদেশপন্থী নেতাকর্মীদের দেবে।

dhakapost

বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান, সংবাদ সম্মেলন কিংবা আলোচনা সভায় একই সুরে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘যারা বিএনপির মনোনয়ন পাননি, তারা যদি এনসিপিতে যোগ দেন, আমরা তাদের স্বাগত জানাব। বিএনপি তরুণদের বাদ দিয়ে গডফাদারদের মনোনয়ন দিয়েছে, যা হতাশাজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী তালিকায় গডফাদারদের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। তরুণ নেতৃত্বকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের আমাদের দলে স্বাগত জানাই। তারা যদি এনসিপিতে যোগ দেন, আমরা তাদের নিয়েই প্রার্থী ঘোষণা করব।’

কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘বিএনপির যারা মনোনয়নবঞ্চিত, কিন্তু বাংলাদেশপন্থায় বিশ্বাস করেন এবং চব্বিশ-পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠনে দায়িত্ব নিতে চান, আমরা তাদের এনসিপিতে স্বাগত জানাচ্ছি। কে জিতবে বা হারবে তা মুখ্য নয়, বরং নির্বাচন ব্যবস্থাকে জেতানো আমাদের মূল লক্ষ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এনসিপি কোনো জোটে বিশ্বাসী নয়, তবে সংস্কারের লক্ষ্যে যদি কেউ আসতে চায়, আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত করব। পার্লামেন্টের আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করা আমাদের লক্ষ্য নয়। আমাদের সংসদ হচ্ছে রাজপথ, শক্তি হচ্ছে জনগণ, আর রাজনৈতিক সততাই আমাদের মূল বিনিয়োগ।’

dhakapost

বিএনপি-জামায়াতের মনোনয়নবঞ্চিতদের প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তারা মোস্ট ওয়েলকাম। যদি আমাদের নির্ধারিত মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হন, তাদের ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক আদর্শ যদি দলের নীতির সঙ্গে মেলে, তাহলে তারা আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করবেন। কারণ, রাজনীতি দলবাজির জন্য নয়, রাজনীতি জনগণের জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন কেউ যদি বিএনপি থেকে এখানে আসেন, এর অর্থ এই নয় যে, তিনি প্রতিযোগিতা এড়াতে এসেছেন কিংবা তিনি বাংলাদেশ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলেন। বিএনপি একটি বাংলাদেশপন্থী দল, আমরাও বাংলাদেশপন্থী দল। তবে, গত ১৫-১৬ বছরে বিএনপির বাংলাদেশপন্থা নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশেষত বিভিন্ন বিদেশি শক্তির সঙ্গে সংযোগের কারণে। অন্যদিকে, এনসিপি শুরু থেকেই আধিপত্যবাদবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে পরীক্ষিত বাংলাদেশপন্থী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এনসিপিই সবচেয়ে সুস্পষ্ট অবস্থানে রয়েছে। তাই বিএনপি বা অন্য কোনো দল থেকে কেউ এলে কমিটমেন্ট কমবে— এ ধারণা ভুল। বরং নতুন রাজনৈতিক শক্তিতে তারা দেশের প্রতি আরও গভীর অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করতে পারবেন।’

এনসিপি সূত্র বলছে, দলটি আগামী ১৫ নভেম্বর প্রাথমিকভাবে ১৫০ থেকে ২০০টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে। পর্যায়ক্রমে দলটি ২৯৭ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করবে। বেগম খালেদা জিয়ার সম্মানে তার তিনটি আসনে কোনো প্রার্থী দেবে না এনসিপি। নির্বাচনে এনসিপি এককভাবে নাকি জোটগতভাবে বা সমঝোতার ভিত্তিতে অংশ নেবে, তা নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। তবে, দলের অধিকাংশ নেতা একক নির্বাচনের পক্ষে মত দিলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি কিংবা জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতার দিকে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।