ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের নিরাপত্তা মানচিত্রে এক গভীর পরিবর্তন এনেছে। প্রায় প্রতি রাতে আকাশ ঢেকে যাচ্ছে আক্রমণকারী ড্রোনের কারণে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইউরোপের বিমানবন্দর ও সংবেদনশীল স্থানগুলোতে রহস্যময় ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে একটি বিষয় স্পষ্ট, ইউরোপ এখনো ড্রোন যুদ্ধ মোকাবিলা বা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত নয়।
তবে এই মহাদেশব্যাপী সমস্যার সমাধানে, লাটভিয়ার রাজধানীতে একটি সাধারণ কারখানায় একদল প্রকৌশলী নিরলস কাজ করে চলেছেন। তাদের লক্ষ্য একটি ড্রোন প্রাচীর তৈরি করা। এটি হবে সেন্সর ও অস্ত্রের এমন এক অত্যাধুনিক নেটওয়ার্ক, যা অনুপ্রবেশকারী ড্রোনকে শনাক্ত করবে, ট্র্যাক করবে এবং শেষ পর্যন্ত ধ্বংস করবে। লাটভিয়ার রাজধানীতে অবস্থিত একটি সাধারণ কারখানায় একটা ছোট দল একটি মহাদেশব্যাপী সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছে। এবং ইউরোপকে এই আক্রমণকারী ড্রোনের ঝাঁক থেকে রক্ষার সমাধান হলো এক ছোট্ট ড্রোন ইন্টারসেপ্টর ‘ব্লেজ’। এটি ৩ ফুট লম্বা ইন্টারসেপ্টর ড্রোন। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত।
এআই লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে মানব অপারেটরকে সতর্ক করে। অপারেটর বোতাম চাপলে ২৮-আউন্সের একটি ওয়ারহেড বিস্ফোরিত হয়। এতে ‘ব্লেজ’ ড্রোনটি নিজে ধ্বংস হয় এবং লক্ষ্যবস্তুটিও ধ্বংস হয়ে যায়। অরিজিন কোম্পানির সিইও অ্যাগ্রিস কিপুরস, যিনি একসময় ক্রীড়াবিদদের চিত্রায়নের জন্য ড্রোন তৈরি করতেন, এখন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে মনোনিবেশ করেছেন। কিপুরসের মতে, ব্লেজ হলো সস্তা, নিচুতে-ওড়া এবং বহু-সংখ্যায় মোতায়েন করা ড্রোনের হুমকির একটি উপযুক্ত সমাধান।
রাশিয়ার ড্রোন হামলার খরচ ও ক্ষয়ক্ষতির অনুপাত ইউরোপের নেতাদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। ইউক্রেনীয় সরকারের মতে, রাশিয়া প্রতিদিন ৩০০টিরও বেশি ড্রোন তৈরি করছে, যার প্রতিটির খরচ মাত্র কয়েক হাজার ডলার। সবচেয়ে গুরুতর সতর্কবার্তাটি আসে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে, যখন একাধিক রুশ ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। ন্যাটো জানিয়েছে, সাত ঘণ্টা ধরে চলা আকাশযুদ্ধে তারা ৮০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এফ-৩৫ জেট ব্যবহার করে লক্ষাধিক ডলার মূল্যের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ৭টি রুশ ড্রোন ভূপাতিত করে।
অরিজিনের সিইও অ্যাগ্রিস কিপুরস বলেন এই ড্রোনগুলোর বেশিরভাগই ছিল নিরস্ত্র ডিকয় বা প্রতারক ড্রোন, যা পলিস্টাইরিন দিয়ে তৈরি এবং এতে রাশিয়ার খরচ হয় আনুমানিক মাত্র ১০ হাজার ডলার। ব্লেজ ড্রোনের খরচ প্রকাশ না করলেও কিপুরস আত্মবিশ্বাসী যে এটি রাশিয়ান ড্রোনের বিশাল সংখ্যা মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট সস্তায় তৈরি করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, যদি ইন্টারসেপশন বাতিল করা হয়, তবে ব্লেজ আবার ঘাঁটিতে উড়ে আসবে এবং পুনরায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকবে। ইতোমধ্যে, লাটভিয়ার সামরিক ড্রোন বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করেছেন যে লাটভিয়া তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ব্লেজ ড্রোন কেনা শুরু করেছে।